অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বন্ধ হতেই নেশাগ্রস্তদের দাপাদাপি শুরু, ভরতপুরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই চলে পড়াশোনা, খাওয়া
বর্তমান | ১২ আগস্ট ২০২৫
সংবাদদাতা, কান্দি: ঘর, বারান্দা সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে বিড়ি ও সিগারেটের টুকরো। তার মাঝেই পাঁচবছরের কম বয়সের শিশুদের শিক্ষাদান চলছে। তার মধ্যেই শিশুদের খাবারও দেওয়া হচ্ছে। এই ছবি ভরতপুর ১ ব্লকের আসাননগরপাড়া অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের। এই কেন্দ্রটি বন্ধ হলেই তার দখল নেয় নেশাগ্রস্তরা। দিনভর চলে নেশা। ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানাতেও ভয় পাচ্ছেন। আবার শিশুদের স্বাস্থ্য নিয়েও চিন্তিত তাঁরা।
ভরতপুর ১ বিডিও অফিস থেকে উত্তরে ৫০০ মিটার দূরে কেন্দ্রটি। আরও ৫০০ মিটার উত্তরে ভরতপুর থানা। এমন একটি জনবহুল এলাকায় এমন কাজ দিনের পর দিন চলছে বলে অভিযোগ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কেন্দ্রটি সকাল ১১টা নাগাদ বন্ধ হয়ে যায়। ছুটির পর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী মূল গেটে তালা মারলেও ওই তালার নকল চাবি নেশাগ্রস্তদের কাছেই রয়েছে। কেন্দ্রের কর্মী ও শিশুরা চলে যেতেই সেখানে তালা খুলে ঢুকে পড়ে নেশাগ্রস্তরা। এরপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিগারেট ও বিড়িতে টান দিয়ে চলে মোবাইলে গেম খেলা। ওই ঘরে গাঁজা ও হেরোইন খাওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার সেখানে গিয়ে দেখা গিয়েছে, মোট চারটি ঘর রয়েছে। তার মধ্যে একটি রান্নাঘর। রান্নাঘরের পাশেই রয়েছে নোংরা ভর্তি পুকুর। রান্নাঘরে যাওয়ার রাস্তাটিও পুকুরের নোংরা জলে ডুবে গিয়েছে। আর বাকি তিনটি ঘরের মধ্যে একটি মাত্র ঘর তালাবন্ধ। সেটিতে অফিসের সামগ্রী থাকে ও শিশুদের শিক্ষা দেওয়া হয়। বাকি দু’টির একটির দরজা ভেঙে নিয়ে দুষ্কৃতীরা পালিয়েছে বলে দাবি। অন্যটি জোরে ধাক্কা দিলেই খুলে যায়। ভিতরে সিগারেট ও বিড়ির অজস্র টুকরো পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। ঘরের মধ্যেও একই অবস্থা। প্রতিটি ঘর থেকেই তামাকের গন্ধ বের হচ্ছে। ওই কেন্দ্রের কর্মী আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, কী করব বলুন। আমি বেরিয়ে যেতেই ওরা এসে ঢুকে যা খুশি তাই করছে। দু’ বার তালাও ভেঙে দিয়েছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যেই শিশুদের শিক্ষা দিতে হচ্ছে। ঘটনার কথা জানিয়ে অভিভাবকদের ডেকে মিটিংও করা হয়েছে। কিন্তু কোনমতেই এসব বন্ধ করা যাচ্ছে না। আবার প্রতিবাদ করতে ভয়ও লাগে।ওই কেন্দ্রে মোট দু’ জন গর্ভবতী, সাতজন প্রসূতি ও ১১৩ জন শিশুর পড়াশোনা চলে ও পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়। স্থানীয় কয়েকজন মহিলা বললেন, কেন্দ্র বন্ধ হতেই ওই ঘরগুলিতে এই পাড়া ও অন্য পাড়ার অন্তত ১২ থেকে ১৪ জন যুবক, কিশোর ঢুকে পড়ে। এরপর দিনভর ওখানে নেশা করে। আমাদের ক্ষোভ থাকলেও ভয়ে কিছু করতে পারি না। পুলিসকে জানাতেও ভয় পাই। যদিও ভরতপুর ১ বিডিও দাওয়া শেরপা বলেন, এমন ঘটনার কথা জানা ছিল না। দ্রুত সেখানে আমাদের অফিসাররা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজনে পুলিসের সাহায্য নেওয়া হবে। প্রায় একই বক্তব্য ভরতপুর থানার পুলিসের। বন্ধ অঙ্গনওয়াড়ি (উপরে)। নেশার সামগ্রী ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে (নীচে)। নিজস্ব চিত্র