• নাকের ডগায় সীমান্ত, পাচার পণ্যের হাতবদলে ‘নিরাপদ’ গেটওয়ে ঐতিহ্যবাহী শহর কৃষ্ণনগর
    বর্তমান | ১২ আগস্ট ২০২৫
  • অগ্নিভ ভৌমিক, কৃষ্ণনগর:  সাহিত্য, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের শহর কৃষ্ণনগর। রয়েছে রাজবাড়ি। রয়েছে ঘূর্ণি। মৃৎশিল্পের জন্য যার দুনিয়াজোড়া খ্যাতি। কিন্তু,  সময় ধীরে ধীরে ছিনিয়ে নিচ্ছে কৃষ্ণনগরের কৌলন্য। গরিমায় জায়গায় স্থান পাচ্ছে বদনাম। শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। সেটাই যেন কৃষ্ণনগরের অভিশাপ! 

    সীমান্ত দিয়ে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অবৈধ পণ্য পাচার। সোনা থেকে শুরু করে মাদক—সবকিছুরই হাতবদল হচ্ছে ব্যস্ত শহর কৃষ্ণনগরে ভিড়ের মধ্যেই। ব্যবসায়ীদের ভিড়, যাত্রীদের হইচই, চারদিকের কোলাহলে ঢেকে যাচ্ছে পাচারের মতো দুষ্কর্ম। গত ৪ আগস্ট করিমপুর থেকে কৃষ্ণনগরগামী একটি বাস থামানো হয় মহিষবাথান এলাকায়। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বিএসএফের ১১ নম্বর ব্যাটালিয়ান বাসটি চিহ্নিত করে। তল্লাশিতে ধরা পড়ে দুই যুবক। দু’জনেই মুর্শিদাবাদ জেলার বাসিন্দা। তাদের চপ্পলের ভেতর থেকে উদ্ধার হয় সাতটি সোনার বিস্কুট। যার মোট ওজন ১০৩০.৭২০ গ্রাম। বাজারমূল্য ১ কোটি ৫ লক্ষ ৭৫ হাজার ১৮৭ টাকা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা জলঙ্গি থেকে সোনা নিয়ে এসেছিল। কৃষ্ণনগর বাসস্ট্যান্ডের কাছে এক ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়ার কথা ছিল। সূত্রের দাবি, এই একই রুট ধরে এবং একই কৌশলে বহুদিন ধরেই কৃষ্ণনগর শহরে হচ্ছে মাদকের হাতবদলও। গত কয়েক বছরে কৃষ্ণনগর শহর ও আশপাশের এলাকা থেকে একাধিকবার নিষিদ্ধ কাশির সিরাপ, গাঁজা উদ্ধার হয়েছে। পাচারকারীদের জালে তোলার ক্ষেত্রেও সাফল্য এসেছে কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার।‌ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পাচারকারীরা ভিড়ের সময়কে বেছে নিচ্ছে। কারণ, পুলিসের নজর এড়ানোর সম্ভাবনা বেশি‌। ব্যস্ত সময়ে পুলিসের পক্ষে প্রতিটি ব্যক্তিকে খুঁটিয়ে তল্লাশি করা বড্ড কঠিন। ফলে, পণ্য হাতবদল হলেও তা প্রায়ই চোখ এড়িয়ে যায়। ক্যারিয়াররা সাধারণ পোশাকে থাকে। তাদের দেখে বোঝার উপায় থাকে না। 

    তদন্তে উঠে এসেছে, এই পাচার নেটওয়ার্কের একাধিক স্তর রয়েছে। সীমান্তে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ পণ্য প্রবেশ করানোর দায়িত্বে থাকে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির দালালরা। ক্যারিয়ার হিসেবে থাকে মূলত শ্রমিক বা নিম্নআয়ের মানুষ। যারা পেটের তাগিদে ঝুঁকি নেয়। এর আগে অবৈধ সামগ্রী হস্তান্তরের ক্ষেত্রে রানাঘাট রেল স্টেশনের নাম বহুবার উঠে এসেছে। অনেক পাচারকারী পুলিসি তৎপরতায় ধরাও পড়েছে। ফলে, রানাঘাট শহরকে এখন আর সেভাবে কাজে লাগাচ্ছে না পাচার কারবারিরা। তাদের এখন দৃষ্টি পড়েছে কৃষ্ণনগরের উপর। শহরের অনেক প্রবীণ বাসিন্দা আশঙ্কা করছেন, এই ধরণের কার্যকলাপ অব্যাহত থাকলে কৃষ্ণনগরের সামাজিক ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ার কারণে এ অঞ্চলের তরুণদের পাচারের মতো অপরাধচক্রে জড়িয়েও পড়েছেন। সেটাও বেশ উদ্বেগের। কৃষ্ণনগরের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ—পাচারের জাল ছিন্ন করা। তবে, এ কাজ শুধু পুলিসি অভিযানে সম্ভব নয়। প্রয়োজন স্থানীয় মানুষের সতর্কতা ও সহযোগিতা। পুলিস প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, নিয়মিত অভিযান চলছে। অতীতে বহু পাচারকারী ধরা পড়েছে।   কৃষ্ণনগর শহর  সংলগ্ন এলাকা জলমগ্ন। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)