নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: এ-যেন মাইথনের এক অন্য রূপ। বর্ষায় কানায় কানায় পূর্ণ থাকে বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া পাহাড়ে ঘেরা এই বিশাল জলাধার। বর্ষায় উত্তাল মাইথন দেখতেই মানুষ অভ্যস্ত। সেই খোঁজে এসে পর্যটকরা হতাশ হচ্ছেন। ভরা বর্ষাতেও যেন মাইথনে রয়েছে গ্রীষ্মের শুষ্কতা, শান্ত জলরাশি। উল্টোদিকেই আবার অন্য ছবি দেখা যাচ্ছে। বাঁধের যে অংশ দিয়ে জল ছাড়া হয়, সেখানে উত্তাল অবস্থা। সোমবারও বিপুল পরিমাণ জল ছাড়া হচ্ছে। একই দৃশ্য পাঞ্চেতের ক্ষেত্রেও। বাঁধের জলস্তর বহু নীচে নেমে গেলেও বাংলার উদ্দেশে জল ছাড়া অব্যাহত রয়েছে।
সোমবার ডিভিসির তরফে সাংবাদিকদের একটি তথ্য দেওয়া হয়েছে। সেই তথ্য অনুযায়ী, শেষ ২৪ ঘণ্টায় মাইথনে জল ঢুকেছে ২৫ হাজার ৬৭৫ একরফুট। আর মাইথন থেকে জল ছাড়া হয়েছে ৪৭ হাজার ৮৮৯ একরফুট। অর্থাৎ, যে পরিমাণ জল বাঁধে ঢুকেছে, তার প্রায় দ্বিগুণ ছাড়া হয়েছে। এদিন সকালে মাইথনের জলস্তর ছিল ৪৬৮.৫৭ ফুট। একইভাবে পাঞ্চেত জলাধারে জল ঢুকেছে ৪৩ হাজার ৬৭৩ একরফুট। জল ছাড়া হয়েছে ৫১ হাজার ৮৩৭ একরফুট। জলস্তর নেমে দাঁড়িয়েছে ৪০১.৬০ ফুটে।
বর্ষাকালে দু’টি বাঁধেই এই জলস্তর থাকা রীতিমতো ব্যতিক্রমী ঘটনা। যে পরিমাণ জল বাঁধে ঢুকছে, তার থেকে বেশি পরিমাণে বেরিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে জলস্তর আরও নামছে। ফলে বর্ষাতেও মাইথন ও পাঞ্চেতের অবস্থা দাঁড়িয়েছে গ্রীষ্ণের মতোই। আর তাদের ছাড়া জলে ভাসছে হুগলির খানাকুল থেকে হাওড়ার আমতা।
কেন এই সিদ্ধান্ত? ডিভিসির আধিকারিকদের ব্যাখ্যা, বাঁধে জলস্তর কম থাকলে অতিবৃষ্টিতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে। নিম্নচাপের কারণে হঠাৎ বিপুল জল ঢুকলে তা ধরে রাখা যাবে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী ধীরে ধীরে ছাড়া সম্ভব হবে।
যদিও এই দাবি অনেকেই মানতে পারছেন না। সাম্প্রতিক এক দশকে দেখা গিয়েছে, মাইথনে বর্ষাকালে জলস্তর ৪৮০ ফুটের বেশিই থাকে। জলস্তর যখন ৪৯০ ছুঁইছুঁই হলেই বেশি পরিমাণে জল ছাড়া শুরু হতো। এবার সেটা করা হচ্ছে না।
প্রায় দু’মাস ধরে টানা জল ছাড়ার তীব্র আপত্তি জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সেই আপত্তি উড়িয়েই জল ছাড়া জারি রেখেছে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে থাকা এই সংস্থা। বাঁধে গ্রীষ্ণকালের মতো জল রয়েছে। নিম্নদামোদর এলাকার মানুষ এখনও জলবন্দি রয়েছে। তা সত্ত্বেও ছাড়া বন্ধ করছে না ডিভিসি। তাতে বিপাকে পড়ছেন বানভাসিরা।
তৃণমূল জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার যে বাংলা বিরোধী, এর থেকে বড় উদাহরণ আর কী আছে? অতিরিক্ত জল ছেড়ে বাংলাকে প্লাবিত করতে চাইছে কেন্দ্র। বিজেপি নেতা প্রশান্ত চক্রবর্তী বলেন, ভিত্তিহীন অভিযোগ করে বাংলার মানুষকে আর বোকা বানানো যাবে না।-নিজস্ব চিত্র