নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি ও কোচবিহার: তৃণমূল কংগ্রেস নেতা খুনের নেপথ্যে সিন্ডিকেটরাজ! ডাউয়াগুড়ির তৃণমূল নেতা অমর রায় ওরফে সঞ্জিত খুনের পর এমন প্রশ্ন তুলেছেন একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, কোচবিহার-১ ব্লকের একাংশে জমি, মাটি, বালি, কয়লা, ঠিকাদারি সিন্ডিকেটের রমরমা। সেই সিন্ডিকেটের গদি দখল নিয়ে লেনদেন সংক্রান্ত বিবাদের জেরেই ওই খুনের ঘটনা ঘটেছে। এমন অপারেশনে সুপারি কিলার ব্যবহার করা হয়েছে বলে সন্দেহ। যদিও এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিস। সমগ্র ঘটনা গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখছে পুলিস। অতিরিক্ত পুলিস সুপার কৃষ্ণগোপাল মিনা জানান, তদন্ত চলছে। এর বেশি কিছু বলা এখন সম্ভব নয়।
কোচবিহার-১ ও ২ ব্লকের স্পর্শকাতর পঞ্চায়েতগুলির মধ্যে ডাউয়াগুড়ি অন্যতম। এখানে জমি, বালি, মাটি ও কয়লার বেআইনি কারবারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সেগুলি নিয়েই গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেটরাজ। যার দাপট মারুগঞ্জ পর্যন্ত। অভিযোগ, উত্তর-পূর্ব ভারতের কয়লা ইটভাটায় সরবরাহ করা থেকে জমির বেআইনি কারবার, বালি ও মাটি পাচার নিয়ন্ত্রণ করে সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেট। ইদানিং, তারা সরকারি বিভিন্ন সংস্থার ঠিকাদারি কাজও নিয়ন্ত্রণ করছে। এসব কারণেই ওই গ্রাম অপরাধ প্রবণ হয়ে উঠেছে বলে স্থানীয়দের একাংশের ধারণা।
তৃণমূল নেতা অমর খুন হওয়ার পর ওই সিন্ডিকেটরাজ নিয়ে একাংশ সরব হয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, ওই সিন্ডিকেট কব্জা করা নিয়ে কিংবা লেনদেন সংক্রান্ত বিবাদের জেরেই ওই তৃণমূল নেতা খুন হয়েছেন। তিনি গাড়ির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ডাউয়াগুড়ি থেকে মারুগঞ্জ পর্যন্ত ছিল তাঁর প্রভাব। বিজেপি রাজ্য কমিটির সদস্য তথা বিধায়ক নিখিলরঞ্জ দে বলেন, জমি, বালি, মাটির বেআইনি কারবারের জেরে ডাউয়াগুড়ি উত্তেজনাপ্রবণ হয়ে উঠছে। ওই সব বেআইনি কারবার নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়েই তৃণমূল নেতা খুন হয়েছেন বলে মনে হচ্ছে।
যদিও তৃণমূল নেতা তথা উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান পার্থপ্রতিম রায় বলেন, রাজনৈতিক পরিবারের ছেলে অমর। তাঁর নেতৃত্বে তৃণমূলের সংগঠন সেখানে চাঙ্গা হয়েছে। কাজেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই তাঁকে খুন করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। পুলিস শীঘ্রই দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তার করবে বলে আশা করছি।
কয়েক বছর আগেও ডাউয়াগুড়িতে কিছু হাঙ্গামার ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের বক্তব্য, ভৌগোলিক দিক থেকে ডাউয়াগুড়ির গুরুত্ব অপরিসীম। শিলিগুড়ি থেকে পুণ্ডিবাড়ি, খগড়াবাড়ি, নিউ কোচবিহার হয়ে সহজে আসা যায় ডাউয়াগুড়ি। আবার কোচবিহার শহর থেকে রেলগুমটি, বাবুরহাট, চকচকা হয়েও ডাওয়াগুড়িতে আসা যায়। এখান থেকে সহজে প্রতিবেশী জেলা আলিপুরদুয়ার এবং প্রতিবেশী রাজ্য অসম যাওয়া সম্ভব। এমন ভৌগোলিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়েই মাটি, বালি, জমি, কয়লার সিন্ডিকেটরাজ সক্রিয়। যারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় রয়েছে। যার জেরে এখানে রাজনৈতিক হানাহানির ঘটনা ঘটছে।
এদিকে, ডোডেয়ারহাটে খাসির মাংস কিনতে গিয়ে খুন হন অমর। স্থানীয়দের একাংশের সন্দেহ, রেকি করে সুপারি কিলার লাগিয়ে তাঁকে খুন করা হয়েছে। যার সঙ্গে মৃত নেতার ঘনিষ্ঠ কেউ জড়িত। তা না হলে ভরদুপুরে হাটে ওই অপারেশন চালানো সম্ভব হতো না। নিহত অমর রায়।