• শোলার ভেলা নিয়েই ভরা করলা নদীতে ঝাঁপ, দাঁড়িয়ে দেখল প্রশাসন, ঝুঁকি নিয়ে দেহ উদ্ধার কিশোরের
    বর্তমান | ১২ আগস্ট ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: কার্যত ‘অসহায়’ পুলিস ও পঞ্চায়েত। বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শোলার ভেলায় চেপে মাঝনদী থেকে দেহ উদ্ধার করে আনল এক কিশোর! রোহিত সরকার নামে ১৪ বছরের ওই কিশোরের সাহসিকতাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকশো বাসিন্দা। যা দেখে শেষমেশ রোহিতকে পুরস্কৃত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া খড়িয়া পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ।

    সোমবার দুপুর বারোটা নাগাদ জলপাইগুড়ির গন্ডারমোড় সংলগ্ন খাটাল এলাকার বাসিন্দারা দেখতে পান, বর্ষায় টইটম্বুর করলা নদীতে একটি দেহ ভাসছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসেন খড়িয়া পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মনোজ ঘোষ। আসে জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার পুলিসও। ধীরে ধীরে নদীর পাড়ে ভিড় বাড়তে থাকে। শনিবার দুপুর থেকে জলপাইগুড়ি শহরের বামনপাড়ার বাসিন্দা গৌতম দে (৫২) নিখোঁজ ছিলেন। খবর পেয়ে তাঁর বাড়ির লোকজনও চলে আসেন। তাঁরা দূর থেকে দেখে দেহটি চিনতে পারেন। 

    কিন্তু মাঝনদীতে পৌঁছনো সমস্যার হয়ে দাঁড়ায়। পুলিসের কাছে কোনও নৌকা নেই। দূরের ঘাটে একটি নৌকা বাঁধা থাকলেও দেহ উদ্ধারে সেটি দিতে রাজি হননি মাঝি। পঞ্চায়েতও নৌকা জোগাড় করতে ব্যর্থ হয়। এভাবে কেটে যায় প্রায় চার ঘণ্টা। এবার শুরু হয় সিভিল ডিফেন্সের নম্বর জোগাড়ের পালা। ঠিক সেই সময় ‘মুশকিল আসান’ হয়ে দাঁড়ায় খড়িয়া পঞ্চায়েতের সারদাপল্লির বাসিন্দা নবম শ্রেণির ছাত্র রোহিত। বাড়ির পাশে একজনের কাছ থেকে শোলার ভেলা জোগাড় করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভরা করলায় নেমে পড়ে সে। ভেলায় তুলে নেয় পুলিসের সঙ্গে দেহ উদ্ধারে আসা একজনকে। তারপর লাঠি দিয়ে ওই শোলার ভেলা চালিয়ে পৌঁছে যায় মাঝনদীতে। তারপর দু’জনে মিলে দড়ি বেঁধে ভাসতে থাকা দেহ টানতে টানতে পাড়ে নিয়ে আসে।

    ওই কিশোরের কথায়, অনেকক্ষণ ধরে দেহটি ভাসছিল। কেউ নদীতে নামার সাহস পাচ্ছিল না। নৌকাও মিলছিল না। তাই এলাকার একটি বাড়ি থেকে শোলার ভেলা জোগাড় করে তাতে চেপে নদীতে নেমে পড়ি। একটু ভয় লাগছিল। তবে মনে হল, এটা ভালো কাজ। তাই করলাম।

    স্থানীয় বাসিন্দা যুবক মহম্মদ ইরফান বলেন, বর্ষায় করলা নদী টইটম্বুর। ফলে পুলিস-পঞ্চায়েত কেউই দেহ উদ্ধারে নদীতে নামার সাহস পাচ্ছিল না। রোহিতের এই কাজের জন্য সত্যিই গর্ব হচ্ছে।

    খড়িয়া পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মনোজ ঘোষ বলেন, পঞ্চায়েতের নিজস্ব নৌকা রাখা জরুরি। ওই কিশোর যদি শোলার ভেলা চেপে মাঝনদীতে না পৌঁছতে পারত, দেহ উদ্ধারে আরও সময় লাগত। ছেলেটিকে আমরা পঞ্চায়েতের তরফে সংবর্ধিত ও পুরস্কৃত করব। 

     নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)