• ‘জলদস্যু’র আতঙ্ক! রাত পাহারা ক্রান্তির গ্রামে
    বর্তমান | ১২ আগস্ট ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি ও সংবাদদাতা, নাগরাকাটা: ‘জলদস্যু’র আতঙ্ক! তাই থার্মোকলের ভেলায় তিস্তা নদীর জলে প্লাবিত তিনটি গ্রামে চলছে রাত পাহারা। সোমবার একথা জানান ক্রান্তি ব্লকের প্লাবিত গ্রামের বাসিন্দারা। অন্যদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় উত্তরবঙ্গের ১৭টি জায়গায় হয়েছে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি। এর জেরে বিভিন্ন জেলার গ্রামীণ এলাকায় জমেছে বৃষ্টির জল। যা বের করতে ময়দানে নেমেছে প্রশাসন। 

    তিস্তার জলে প্লাবিত ক্রান্তি ব্লকের বাসুসুবা, মাস্টারপাড়া ও কেরানিপাড়া। গ্রামের প্রায় ছ’শো পরিবার জলমগ্ন। কোথাও হাঁটু, আবার অনেক জায়গায় কোমর সমান জল। দুর্গতদের অধিকাংশই আশ্রয় নিয়েছেন পাশের গ্রামের আত্মীয়ের বাড়িতে। কয়েকজন গ্রামবাসী চৌকির উপর চৌকি তুলে দিন কাটাচ্ছেন। জলমগ্ন সংশ্লিষ্ট গ্রামগুলিতে দুষ্কৃতীদের হানা দেওয়ার আশঙ্কা করছেন দুর্গতরা। তাই তাঁরা থার্মোকল ও কলাগাছ দিয়ে ভেলা বানিয়ে গ্রামে রাত পাহারা দিচ্ছেন। 

    বাসুসুবা গ্রামের বাসিন্দা আলাবক্স আলি বলেন, পরিবারের সদস্যদের পাশের গ্রামে আত্মীয়র বাড়িতে রেখেছি। বাড়ি পাহারা দেওয়ার জন্য আমি এখানে রয়েছি। এজন্য থার্মোকল দিয়ে ভেলা বানিয়েছি।

    জলমগ্ন মাস্টারপাড়ায় একটি প্রাথমিক স্কুলের পঠনপাঠনও লাটে উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দা মঙ্গলু রায় বলেন, জলমগ্ন প্রাথমিক স্কুলে যেতে পারছে না পড়ুয়ারা। ক্রান্তি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পঞ্চানন রায় বলেন, প্লাবিত ওই গ্রামগুলির অবস্থা সম্পর্কে অবহিত। গ্রামগুলির বাসিন্দাদের পাশে রয়েছি। দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিলি করা হয়েছে। 

    তিস্তার জলে প্লাবিত হলদিবাড়ি ব্লকের বিবিগঞ্জ ও ঝাড় সিংহেশ্বর গ্রামের অবস্থাও একই। তবে তিস্তা নদীর জলস্তর সেভাবে বাড়েনি। সেচদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, মেখলিগঞ্জ থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত তিস্তার অসংরক্ষিত এলাকায় জারি রয়েছে হলুদ সঙ্কেত। আর জলপাইগুড়ি ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে মাথাভাঙা পর্যন্ত জলঢাকা নদীর অসংরক্ষিত এলাকায় হলুদ সঙ্কেত জারি রয়েছে। সেচদপ্তরের ইঞ্জিনিয়াররা জানান, সংশ্লিষ্ট দু’টি সহ উত্তরবঙ্গের সমস্ত নদীর উপর নজর রাখা হয়েছে। প্রতিটি নদীর পরিস্থিতি আপাতত স্বাভাবিক। 

    এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ি, কোচবিহারের পারাডুবি, হলদিবাড়ি, মেখলিগঞ্জ, আলিপুরদুয়ারের কালচিনি, আলিপুরদুয়ার ও কুমারগ্রাম, এই সাতটি জায়গায় অতিভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে বৃষ্টির পরিমাণ ১০০ থেকে ১৫০ মিলিমিটারের কাছাকাছি। বাকি ১০টি জায়গায় হয়েছে ভারী বৃষ্টি। সেগুলিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫০ থেকে ১০০ মিলিমিটারের মধ্যে। এর জেরে হলদিবাড়ি, ময়নাগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, শিলিগুড়ির বেশকিছু গ্রামে জমেছে বৃষ্টির জল। স্থানীয়দের অভিযোগ, বেহাল নিকাশির জেরে জমা জল বের হতে পারছে না। প্রশাসন জানিয়েছে, নালা কেটে বেশকিছু গ্রামের জল বাইরে বের করা হয়েছে। 

    এদিকে, ধস বিধ্বস্ত কালিম্পংয়ের ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। রাস্তার ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামতির কাজ চলছে। দার্জিলিংয়ের রংলিরংলিয়টে ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দু’টি বাড়ি। • ক্রান্তির বাসুসুবা এলাকায় থার্মোকলের  ভেলায় চড়ে পাহারা বাসিন্দাদের। -নিজস্ব চিত্র

          
  • Link to this news (বর্তমান)