ঠিক বছরদুয়েক আগের কথা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে র্যাগিংয়ের জেরে মৃত্যু হয়েছিল প্রথম বর্ষের পড়ুয়া এক নবাগত ছাত্রের। সেই ঘটনার দু’বছর পর এ বার নিরাপত্তা আরও বাড়তে চলেছে যাদবপুরে! দুই ক্যাম্পাস এবং হস্টেল মিলিয়ে ৭০টি নজরদারি ক্যামেরা বসানোর কথা ভাবছেন কর্তৃপক্ষ। শুধু তা-ই নয়, ক্যাম্পাসে বেশি সংখ্যায় নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েনের কথাও ভাবা হচ্ছে।
সোমবার আদালতের নির্দেশে বৈঠকে বসেছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক কমিটি (এগ্জ়িকিউটিভ কাউন্সিল বা ইসি)। ইসি-র সোমবারের এই বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল একটাই— ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো এবং ক্যাম্পাসের সামগ্রিক নিরাপত্তা বৃদ্ধির বিষয়টি আলোচনা করা। এ বিষয়টি বিশদে খতিয়ে দেখতে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটি সব দিক দেখে রিপোর্ট জমা দেয়। বৈঠকে সেই রিপোর্ট সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ হিসাবে টেন্ডার ডেকে সিসিটিভি বসানো এবং নিরাপত্তা বৃদ্ধির বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হবে।
এই গোটা প্রক্রিয়ার বাজেটও নির্ধারিত হয়েছে ইসির বৈঠকে। আলোচনার পর স্থির হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সল্টলেক ও যাদবপুর ক্যাম্পাস এবং হস্টেল মিলিয়ে মোট ৭০টি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর প্রয়োজন। এ জন্য প্রাথমিক বাজেট ধার্য করা হয়েছে ৬৯ লক্ষ টাকা। এ ছাড়াও, যাদবপুরে স্থায়ী নিরাপত্তারক্ষীর পদ রয়েছে ১৩০টি। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষী রয়েছেন ৭৮ জন। বাকি ৫২টি পদ বর্তমানে খালি। এর মধ্যে দু’জন সুপারভাইজারের পদও রয়েছে। ওই শূন্যপদগুলিতে অবিলম্বে কর্মী নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া, স্থায়ী নিরাপত্তারক্ষীদের পাশাপাশি ক্যাম্পাসে বেসরকারি সংস্থা মারফত অস্থায়ী ভাবে নিযুক্ত নিরাপত্তারক্ষীরাও থাকেন। এই মুহূর্তে তিনটি শিফ্টে মোট ১১ জন অস্থায়ী নিরাপত্তারক্ষী ৮ ঘণ্টা করে কাজ করছেন। সেই সংখ্যাও শিফ্ট-প্রতি ১০ জন করে বাড়ানোর কথা ভাবছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যাদবপুরের দু’টি ক্যাম্পাসেই এই সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। এর জন্য বছরে একটি মোটা অঙ্কের টাকা প্রয়োজন। সে জন্য শীঘ্রই সরকারকে চিঠি পাঠানো হবে বলে স্থির হয়েছে ইসি বৈঠকে।
এ বিষয়ে জুটার সাধারণ সম্পাদক পার্থ প্রতিম রায় বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে এগোতে পারছিল না। আদালতের নির্দেশে আজ সেই সিদ্ধান্তে সিলমোহর দেওয়া হল। আশা করছি এ বার দ্রুত এই ধরনের সমস্যার সমাধান হবে।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর এক উচ্চপদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘আমরা আদালতের নির্দেশে সব রকম নিয়ম মেনেই ইসি বৈঠক করেছি। বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে, তা আমরা সরকারকে পাঠাব। আদালতকেও তা জানানো হবে।’’
হঠাৎ কেন জরুরি ভিত্তিতে এই বৈঠক? উল্লেখ্য, একের পর এক অনভিপ্রেত ঘটনার পর আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়নি, এমন অভিযোগে সম্প্রতি হাই কোর্টে বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি স্মিতা দাসের ডিভিশন বেঞ্চে জনস্বার্থ মামলা হয়েছিল। আদালতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান, প্রায় দু’বছর ধরে স্থায়ী উপাচার্য না থাকার কারণে সর্বত্র সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো সম্ভব হয়নি। এর জেরে ইসি বৈঠকও ডাকা যাচ্ছে না। কারণ, ২০১৭–র আইন অনুযায়ী উপাচার্যই রাজ্য সরকারের অনুমতি নিয়ে ইসি–র বৈঠক ডাকতে পারেন। এর পরেই আদালত জানায়, স্থায়ী উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে সহ-উপাচার্য জরুরি ভিত্তিতে ইসি–র বৈঠক ডাকতে পারেন। সে জন্য উচ্চশিক্ষা দফতরের অনুমতির প্রয়োজন নেই। আরও নির্দেশ দিয়ে জানানো হয়, সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে যা খরচ হবে, তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মিটিয়ে দিতে হবে রাজ্যকে। এই নির্দেশের পরেই সোমবার জরুরি ভিত্তিতে ইসি বৈঠক ডাকেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যদিও পরে উচ্চশিক্ষা দফতরও চিঠি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে ইসি বৈঠক ডাকার অনুমতি দেয়। সেই বৈঠকের পরেই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।