জগন্নাথ ধামের পর দুর্গা অঙ্গন! মমতার ঘোষণার পর সিদ্ধান্ত হয়ে গেল রাজ্য মন্ত্রিসভাতেও, সবিস্তার ঘোষণা দিনকয়েকেই
আনন্দবাজার | ১১ আগস্ট ২০২৫
দিঘার জগন্নাথ ধামের পর এ বার ‘দুর্গা অঙ্গন।’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণামতো বাংলায় আরও একটি ‘দর্শনীয় স্থান’ বা ‘সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’ তৈরির তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে। সোমবার নবান্নে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ওই নির্মাণের সিদ্ধান্তে সরকারি সিলমোহর দেওয়া হয়েছে।
নবান্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, পর্যটন দফতর এবং হিডকো যৌথ ভাবে ‘দুর্গা অঙ্গন’ তৈরি করবে। নির্মাণের জন্য একটি ট্রাস্ট গঠন করা হবে বলে ঘোষণা করেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। মন্দির নির্মাণের বাজেট কত হবে, কোথায় এই মন্দির তৈরি হবে সে বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য সরকার। নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং ফিরহাদ হাকিম। সেখানে অরূপ বলেন, ‘‘ইউনেস্কো বাংলার দুর্গাপুজোকে হেরিটেজ তকমা দিয়েছে। তাকে সম্মান জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘দুর্গা অঙ্গন’ তৈরির ঘোষণা করেছিলেন। আজ ক্যাবিনেট বৈঠকে সেটা পাস হয়েছে। একটি ট্রাস্ট তৈরি হবে। ট্রাস্টের সদস্যদের নাম পরে জানিয়ে দেওয়া হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘দিঘার মন্দিরের মতো একটি দর্শনীয় স্থান হবে আমাদের বাংলায়।’’
তবে সেটা কোথায় হবে তার জন্য কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি এ-ও জানান, এখনও বাজেট নির্ধারণ হয়নি। আগে জায়গা দেখা হবে, তার পর সে সব জানানো হবে। উল্লেখ্য, গত ২১শে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে মমতা ‘দুর্গা অঙ্গন’ তৈরির কথা ঘোষণা করার পরে তৃণমূল কংগ্রেসের ‘দুর্গা-প্রীতি’ নিয়ে প্রশ্ন তোলে বিজেপি। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সফরে এসে দুর্গাপুরের সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘জয় মা দুর্গা’, ‘জয় মা কালী’ বলে বক্তব্য শুরু করেছিলেন। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ওই ২১-এর মঞ্চ থেকে তা নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেন। তাঁর দাবি, ঠেলায় না-পড়লে বেড়াল গাছে ওঠে না! তার পরেই মঞ্চে উঠে তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা ‘দুর্গা অঙ্গন’ তৈরির কথা ঘোষণা করেন। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, বিজেপির সঙ্গে ‘হিন্দুত্বের প্রতিযোগিতা’য় কোনও ছাড় দিতে চান না মমতা। এর আগে জগন্নাথ ধাম তৈরি করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলায়। এখন ‘দুর্গা অঙ্গন’ কোথায় তৈরি হবে, সেই নিয়ে শুরু হয়েছে চর্চা।
বিজেপির বিভিন্ন স্তরের নেতারা বারবার তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘তোষণে’র রাজনীতির অভিযোগে সরব হয়েছেন। এমনকি, রাজ্যে দুর্গাপুজোর বিসর্জন, সরস্বতীপুজোয় ‘বাধা’ দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ তোলা হয়েছে কোনও কোনও মহল থেকে। সেই প্রসঙ্গ টেনে এ দিন মমতা বলেন, “অসমে কালীর মন্দির ভেঙে দিলেন। বাংলায় এটা হলে কী করতেন? আগে বলতেন, মমতা দুর্গাপুজো, সরস্বতীপুজো করতে দেন না। এখন ভোটের সময় কালী-দুর্গার কথা মনে পড়ল। মা দুর্গা আমাদের জাতীয় সম্পদ। জগন্নাথ ধাম যেমন করেছি, তেমনই তার অনুকরণে দুর্গা অঙ্গন করে দেব। সারাবছর যাতে মানুষ দেখতে পারেন সবটা।”