• আধকাঠা জমিতেও বাড়ি বানানো যাবে কলকাতায়! পুরসভার বিল্ডিং রুলস সংশোধনে সিলমোহর
    আনন্দবাজার | ১১ আগস্ট ২০২৫
  • আধকাঠা বা তারও কম জমিতে বাড়ি বানানোর ক্ষেত্রে এত দিন সমস্যা ছিল। তবে এ বার থেকে অনুমোদন পেতে আর কোনও অসুবিধা হবে না কলকাতাবাসীর। শহর কলকাতায় ছোট জমিতে বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে বড় সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য মন্ত্রিসভা। সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে। বৈঠক শেষে এমনই জানালেন কলকাতার মেয়র তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।

    পুর এলাকায় ছোট জমির ক্ষেত্রে বাড়ি তৈরির অনুমোদন দেওয়ার ভাবনাচিন্তা চলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। সোমবার এ ব্যাপারে ফিরহাদ বলেন, ‘‘ছোট বাড়ির ক্ষেত্রে আমাদের হাত বাঁধা ছিল। ছোট বাড়ির প্ল্যানে অনুমোদন দিতে পারছিল না কলকাতা পুরসভা।’’ ফিরহাদ জানিয়েছেন, এ বার থেকে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য ছোট জমিতেও বাড়ি তৈরির ছাড়পত্র দেওয়া হবে, যা আগে কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং আইনে ছিল না। তবে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে পুরসভার সংশোধিত বিল্ডিং রুলসের সংশোধন অনুমোদিত হয়েছে। একই ভাবে ৫০০ বর্গফুট এলাকা থাকলেও ছোট বাড়ি তৈরির অনুমতি মিলবে।

    ফিরহাদ এ-ও জানান, আধকাঠা বা তারও ছোট জায়গার জমিতে বাড়ি তৈরিতে অনুমোদন দেওয়া হবে। ১৫ দিনের মধ্যে বিল্ডিংয়ের ‘প্ল্যান’ না-পেলে সরাসরি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে। ছোট জমিতে বাড়ির সঙ্গে পাশের বাড়ির দূরত্ব কতটা হবে, তা নির্ভর করবে এলাকার অবস্থা ও নির্মাণ পরিকল্পনার উপর। পুরমন্ত্রীর কথায়, ‘‘সবটাই হবে অনলাইনে।’’

    কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদদের বৈঠকে এর আগে ছোট জায়গায় বাড়ি বানানোর অনুমোদন দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু তার পরেও তা নানা কারণে অনুমোদন দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। সোমবার মন্ত্রিসভা কলকাতা পুরসভার সংশোধিত বিধিতে অনুমোদন দেওয়ার পর আর কোনও জট থাকল না। তবে এই ধরনের বাড়ির সর্বোচ্চ উচ্চতা বা কত তলা তৈরির অনুমতি দেওয়া হবে, সে বিষয়ে এখনও স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। সবটাই পরিস্থিতি এবং জমির চরিত্র খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান ফিরহাদ।

    পুরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই পদক্ষেপ মূলত নিম্নআয়ের পরিবারগুলিকে শহরে বসবাসের সুযোগ করে দিতে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বড় জমি ছাড়া নির্মাণের অনুমোদন পাওয়া কঠিন হওয়ায় বহু মানুষ বাড়ি তৈরির স্বপ্ন পূরণ করতে পারছিলেন না। এই আইন সংশোধনের ফলে তারা আইনি অনুমোদন সাপেক্ষে নিজের জমিতে বাড়ি তুলতে পারবেন।

    রাজনৈতিক মহলের মতে, এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে রয়েছে রাজনৈতিক কৌশলও। গত লোকসভা নির্বাচনে কলকাতা পুরসভার ৪৬টি ওয়ার্ডে পিছিয়ে পড়েছিল তৃণমূল। ভোটব্যাঙ্কে সেই ক্ষত মেরামত করতেই মুখ্যমন্ত্রী এই জনমুখী পদক্ষেপ করেছেন বলে অনেকে মনে করছেন। বিশেষ করে শহুরে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে এই সিদ্ধান্ত ইতিবাচক বার্তা দেবে বলেই ধারণা।

    নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, ছোট জমিতে বাড়ি তৈরির অনুমোদন পেলে শহরে জমির ব্যবহার আরও কার্যকর হবে, তবে সঠিক নিয়ম ও নজরদারি না থাকলে বেপরোয়া নির্মাণের ফলে অবকাঠামোগত চাপ বাড়তে পারে। সেই কারণে পুরসভার উচিত হবে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো, ড্রেনেজ এবং রাস্তার পরিকল্পনা মিলিয়ে অনুমোদন দেওয়া।

    রাজ্য সরকারের এই নতুন নীতি কার্যকর হলে বহু পরিবার শহরে আইনি অনুমোদন নিয়ে বাড়ি নির্মাণের সুযোগ পাবে, যা একদিকে আবাসন সমস্যার সমাধানে সাহায্য করবে, অন্যদিকে রাজনৈতিকভাবে তৃণমূলকে লাভবান করতে পারে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)