প্রসেনজিত্ মালাকার: বীরভূম জেলার তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। অন্যদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Bandyopadhyay) তৈরি করে দেওয়া বীরভূম জেলার কোর কমিটির কনভেনারের পদে রয়েছেন তিনি। বরাবরই তিনি দেবদেবীদের ভক্ত। তিনি বোলপুরে তৃণমূল কার্যালয়ের কালীপুজোর আয়োজন করে থাকেন প্রত্যেক বছর। একদিকে যেমন তিনি কালী মায়ের ভক্ত ঠিক অন্য দিকে তিনি মহাদেবের বড় ভক্ত। আর এই দিন শ্রাবণ মাসের শেষ সোমবার। শ্রাবণের শেষ সোমবারে যেন ভিড় উপচে পড়ছে শিবমন্দিরগুলিতে।
রবিবার রাত থেকেই দূর-দুরান্ত থেকে পায়ে হেঁটে শিবের মাথায় জল ঢালতে আসছেন ভক্তরা। আর রবিবার রাতে সেই শিবভক্তদের (Pilgrims) সেবা করতে দেখা গেল বীরভূমের তৃণমূল নেতা (Birbhum TMC leader) অনুব্রত মণ্ডলকে (Anubrata Mondal)। কখনও ভক্তদের পায়ে ব্যথানাশক স্প্রে (Pain Relief Spray) করেছেন, আবার কারোর হাতে তুলে দিয়েছেন ঠান্ডা জলের বোতল।
শ্রাবণের শেষ সোমবার উপলক্ষ্যে রবিবার রাত থেকেই উৎসবের আমেজ দেখা করা গিয়েছে বোলপুরের তৃণমূল কার্যালয়ে। শিবের মূর্তি বসিয়ে করা হয়েছিল প্যান্ডেল। চারিদিকে ঝলমল করছিল আলো। আর কার্যালয়ের সামনে থাকা রাস্তা দিয়ে পুণ্যার্থীরা কাঁধে বাঁক নিয়ে দীর্ঘ পথ হেঁটে শিবের মাথায় জল ঢালতে যাচ্ছিলেন। মূলত কঙ্কালীতলা অথবা কাটোয়ার গঙ্গা থেকে জল নিয়ে বোলপুরের শিবতলা শিব মন্দিরে যান পুণ্যার্থীরা।
দূর দুরান্ত থেকে ভক্তরা বীরভূমের মধ্যে অন্যতম সতীপীঠ কঙ্কালীতলা মন্দির থেকে জল নিয়ে গিয়ে সেই জল বীরভূমের বিভিন্ন শিব মন্দির অর্পণ করে থাকেন। ভক্তদের বিশ্বাস কঙ্কালীতলা মন্দিরের জল মহাদেবকে অর্পণ করলে মহাদেব প্রসন্ন হন। এবার সেই সমস্ত শিব ভক্তদের জন্য বোলপুরের তৃণমূল কার্যালয়ের বাইরে একটি ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। যেখানে সমস্ত শিব ভক্তদের জল, শরবত, লুচি, মিষ্টি বিতরণ করা হয়।
আর সেখানেই অনুব্রত মণ্ডলকে একজন রাজনৈতিক নেতা নয় বরং সাধারণ মানুষ হিসাবে দেখতে পেলেন ভক্তরা। যেখানে অনুব্রত মণ্ডল সমস্ত শিব ভক্তদের পায়ে ব্যথা উপশমের ওষুধ স্প্রে করে দিচ্ছেন নিজের হাতে। অনুব্রত মণ্ডলের বিশ্বাস সনাতনী হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসব এই শ্রাবণ মাসের শেষ সোমবার। আর সেই কারণেই তিনি শিব ভক্তদের পায়ে ব্যথা উপশমের ওষুধ স্প্রে করে দিচ্ছেন। কার্যালয়ের সামনে থাকা রাস্তার ধারেই চেয়ার পেতে বসেছিলেন অনুব্রত। আর ওই রাস্তা দিয়েই যেসব শিবভক্তরা বাঁক নিয়ে যাচ্ছিলেন, তাঁদের পায়েই ব্যথানাশক স্প্রে করে দেন তিনি। এখানেই শেষ নয়, অনুব্রত নিজের হাতে জলের বোতল, ফলের রস, লুচি, তরকারি তুলে দিয়েছেন পুণ্যার্থীদের হাতে। রাজনীতির ময়দানে তো সকলের পরিচিত মুখ কেষ্ট। কিন্তু এদিন যেন তাঁর এক অন্য রূপ দেখলেন পুণ্যার্থীরা।
রবিবার রাত্রে বোলপুর দিয়ে যাঁরা বাঁক নিয়ে যাচ্ছিলেন, পায়ে স্প্রে করে দিচ্ছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। শুধু কী স্প্রে! না এর পাশাপাশি তিনি হাতে তুলে দিচ্ছিলেন জলের বোতল, ফলের রস, নুন চিনি দিয়ে লেবুর সরবত, লুচি, তরকারি, বোঁদে। অন্যদিকে কাজল শেখকেও এই দিন দেখা গিয়েছে জনসেবায়। ভক্তদের হাতে লুচি মিষ্টি তুলে দিচ্ছেন তিনি।
বোলপুরে তৃণমূল কার্যালয়ে কার্যত উৎসবের মেজাজ দেখা গিয়েছে। সেখানে বাঁধা হয় সুন্দর ভাবে প্যান্ডেল। বসানো হয় শিবের মূর্তি। বিভিন্ন আলোকসজ্জায় সাজিয়ে তোলা হয়েছে প্যান্ডেল থেকে শুরু করে পার্টি অফিস। অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামীদের কাছ থেকে জানা যায় অনুব্রত মণ্ডল পুজো-অর্চনায় বিশ্বাসী। সকালে ঠাকুরকে পুজো না দিয়ে তিনি জলস্পর্শও করেন না। আর সেই কারণেই এই উদ্যোগ।
পুজো শেষ না করে জলস্পর্শ নয়, শ্রাবণের শেষ সোমবারে ভক্তিভরে পুজো কেষ্টর। শিবের উপোস করে জল ঢাললেন বাবার মাথায়।