• খুঁজে পাওয়া গেল জিলিপির 'বড়দা'কে, বিশালদেহী তার ওজন প্রায় ৫ কেজি ...
    আজকাল | ১২ আগস্ট ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: পাকে পাকে জমা থাকে রস। হালকা কুড়মুড়ে আওয়াজের সঙ্গে দাঁতের নিচ দিয়ে সেই রস ছড়িয়ে পড়ে গোটা মুখে। আবার প্যাঁচানো মনের লোকদেরকে এই মিষ্টির সঙ্গে তুলনা করা হয়। এবার যদি এই মিষ্টির নাম জিজ্ঞাসা করা হয় তবে একবারেই উত্তর পাওয়া যাবে, জিলিপি। বাঙালির দীর্ঘদিনের সঙ্গী। সকালের জলখাবারেই হোক বা সন্ধ্যায় হালকা কিছু মুখে দেওয়াই হোক। খাবারের তালিকায় যদি জিলিপি থাকে তবে সেটা একটু অন্যরকম লাগে বৈকি। আর শুধু এই রাজ্যে কেন, গোটা দেশের লোকজন এই মিষ্টিটির সঙ্গে পরিচিত। 

    তবে এই জিলিপিরও এক 'বড়দা' আছে। তার বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলায়। এই জেলার কেঞ্জাকুড়া গ্রাম ভাদু ও বিশ্বকর্মা পুজোর সময় এক অনন্য মিষ্টির কারণে আলোচনার কেন্দ্রে থাকে। ‘জাম্বো জিলিপি’ নামেই পরিচিত এই বিশেষ জিলিপি শুধু আকারেই নয়, ইতিহাস ও ঐতিহ্যেও অসাধারণ। 

    শোনা যায়, পঞ্চকোট রাজবংশের রাজকন্যা ভদ্রাবতীর অকালমৃত্যুর পর তাঁর স্মরণে ভাদু পুজোর সূচনা হয়। বাঁকুড়ার দ্বারকেশ্বর নদীর তীরে অবস্থিত কেঞ্জাকুড়া সেই প্রাচীন লোকপরম্পরার অন্যতম কেন্দ্র। এখানে ভাদু ও বিশ্বকর্মা পুজোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে রয়েছে এই বিশেষ মিষ্টি—জাম্বো জিলিপি।

    এই জিলিপির আকৃতি সাধারণ জিলিপির তুলনায় অনেক বড়। ওজন শুরু হয় ৫০০ গ্রাম থেকে, যা পৌঁছতে পারে ৩-৪ কেজি পর্যন্ত। কেউ কেউ তো ৫ কেজি ওজনের জিলিপিও তৈরি করেন। প্রতি কেজি জিলিপির দাম ১৫০ টাকা। জিলিপিগুলি আকারে যেমন বড়, তেমনই স্বাদেও অপূর্ব। এর একটা বড় গুণ হল এটি বেশ কয়েকদিন সংরক্ষণ করেও খাওয়া যায়। কারিগর ফটিক রায় জানিয়েছেন, 'এই জিলিপি অন্তত ১০ দিন ভালো থাকে।' 

    স্থানীয় ব্যবসায়ী মুক্তা দত্ত বলেন, 'এই জিলিপির ইতিহাস বহু পুরনো। অন্তত ৭০-৮০ বছর ধরে এই রেওয়াজ চলছে। শুধু বাঁকুড়ার মানুষ নয়, আশেপাশের জেলা থেকেও বহু মানুষ এই জাম্বো জিলিপি কিনতে আসেন। আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে পাঠানো হয় এই বিশেষ মিষ্টি।'

    কেঞ্জাকুড়ার জিলিপি যেন শুধু একটি মিষ্টি নয়, বরং এটি রাঢ় বাংলার একটি সাংস্কৃতিক ও এক ধরনের বিশেষ খাদ্যের পরিচয়। প্রতিবছর ভাদ্র মাসের ২৭ তারিখ থেকে আশ্বিন মাসের ৫ তারিখ পর্যন্ত তৈরি হয় এই জিলিপি। এটি শুধুই পুজোর একটি উপকরণ নয়, বরং বাঁকুড়ার গর্ব, ঐতিহ্য ও জনপ্রিয়তার প্রতীক। 

    তবে বাংলাদেশেও তৈরি হয় বড় আকারের জিলিপি। ঢাকায় তৈরি হওয়া এই 'শাহী জিলিপি' বিশাল আকারের হয়। যা খেতেও খুবই সুস্বাদু। পুরনো ঢাকার যে ঐতিহ্য রয়েছে তাকে বহন করে এই শাহী জিলিপি। আবার ময়মনসিংহে চালের গুঁড়োর সঙ্গে তেঁতুলের টক মিশিয়ে এক ধরনের জিলিপি তৈরি করা হয়। সাধারণ জিলিপির তুলনায় এই জিলিপি কিছুটা সরুও হয়। এই জিলিপিকে বলা হয় 'টক জিলিপি'।
  • Link to this news (আজকাল)