• নবান্ন অভিযানে পুুলিশের উপর হামলা, বিজেপি নেতাদের নামে ৭টি এফআইআর দায়ের
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১১ আগস্ট ২০২৫
  • আরজি কর মেডিক্যালে ধর্ষণ-খুন হওয়া তরুণী চিকিৎসকের মাকে মারধরের যে অভিযোগ উঠেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। নবান্ন অভিযানের সময় জখম পুলিশকর্মীদের হাসপাতালে দেখতে গিয়ে এ কথা জানিয়েছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা। তিনি জানিয়েছেন, নির্যাতিতার মাকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত পুলিশের কাছে এ বিষয়ে কোনও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে কলকাতা পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিতভাবে তদন্ত শুরু করেছে। অন্যদিকে, নবান্ন অভিযানের সময় কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের উপর হামলা, কাজে বাধাদান ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগে বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে ৭টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।

    শনিবার আরজি কর কাণ্ডের এক বছরে নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন নির্যাতিতার বাবা–মা। এই কর্মসূচিতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ একাধিক বিজেপি নেতানেত্রী ও কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এর ফলে অরাজনৈতিক এই কর্মসূচিতে রাজনীতির রঙ লাগে। শুক্রবারই পুলিশ জানিয়ে দিয়েছিল, নবান্ন অভিযান কর্মসূচি করা যাবে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও শনিবার এই কর্মসূচির জেরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কলকাতা ও হাওড়ার কয়েকটি এলাকা। কর্মসূচির শুরু থেকেই রাজ্যের পুলিশের প্রতি আক্রমণাত্মক দেখিয়েছে আন্দোলনকারীদের। আন্দোলনকারীদের হামলায় মোট পাঁচ জন পুলিশকর্মী জখম হন। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। পুলিশের দাবি, এক আইপিএস পদ মর্যাদার অফিসারকেও মারধর করা হয়েছে।

    নবান্ন পর্যন্ত যাওয়ার জন্য ধর্মতলা থেকে একটি মিছিল রওনা দিয়েছিল। সেই মিছিলে ছিলেন নির্যাতিতার বাবা–মা। তাঁদের সঙ্গে প্রথমে ছিলেন বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল, জোয়েল মুর্মু, আশিস বিশ্বাসরা। পরে তাঁদের সঙ্গে মিছিলে যোগ দেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, শঙ্কর ঘোষ, সুব্রত ঠাকুর, অশোক দিন্দা, নীলাদ্রিশেখর দানা-সহ আরও অনেকে। পার্ক স্ট্রিট মোড়ের কিছুটা আগে ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা আটকে দেয় পুলিশ। পুলিশের বাধা পেয়ে ব্যারিকেডে ধাক্কা দিতে থাকেন বিজেপি কর্মীরা। পরিস্থিতি সামলাতে তৎপরতা শুরু করে পুলিশ। এই পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে আহত হন নির্যাতিতার মা। তবে বিজেপির অভিযোগ, পুলিশের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন নির্যাতিতার মা–বাবা দুই জনেই। অন্যদিকে, এই ঘটনায় পুলিশের দিকেই আঙুল তুলেছেন নির্যাতিতার মা–বাবাও। যদিও তাঁদের মারধরের অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে পুলিশ।

    জানা গিয়েছে, নির্যাতিতার মায়ের কপালে ও পিঠে আঘাত লেখেছে। শনিবার তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হওয়ায় রবিবার তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

    রবিবার সকালে কলকাতার পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, নির্যাতিতার মা কীভাবে চোট পেলেন তা খতিয়ে দেখে ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সব খতিয়ে না-দেখে এখনই তাঁদের পক্ষে কিছু বলা সম্ভব নয়। নির্যাতিতার মায়ের আঘাত লাগার ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন মনোজ বর্মা। কীভাবে তাঁর আঘাত লাগল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, নবান্ন অভিযানে পুলিশের উপর যাঁরা হামলা চালিয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে। দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে।

    উল্লেখ্য, শনিবার নবান্ন অভিযান চলাকালীন কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীদের উপর হামলা, তাঁদের কাজে বাধা দেওয়া ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগে বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে ৭টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বিজেপি বিধায়ক অশোক দিন্দা-সহ কয়েকজন বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে নিউ মার্কেট ও হেয়ার স্ট্রিট থানায় এই অভিযোগগুলি দায়ের করা হয়েছে। জওহরলাল নেহরু রোডের একটি ভিডিও (এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি দৈনিক স্টেটসম্যান) ফুটেজ প্রকাশ করেছে লালবাজার। সেখানে দেখা যাচ্ছে এক পুলিশকর্মীকে কীভাবে নিগ্রহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি ভিডিও প্রকাশ করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি করার যে নির্দেশ হাইকোর্ট দিয়েছিল তা মানা হয়নি।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)