করোনাকাল থেকে ভাড়া নিচ্ছে না রেল, এবার কি রেলওয়ে আদর্শ বিদ্যামন্দির রেলের কোপে?
বর্তমান | ১১ আগস্ট ২০২৫
সংবাদদাতা, রামপুরহাট: স্কুলের থেকে ভাড়া নিতে চাইছে না রেল। ফলে শিক্ষক ও পড়ুয়াদের অভিভাবকদের মনে জেঁকে বসেছে ভয়— রেল কর্তৃপক্ষ কি স্কুল তুলে দিতে চাইছে! রামপপুরহাট রেলওয়ে আদর্শ বিদ্যামন্দিরকে বাঁচাতে শাসক এবং বিরোধী সব রাজনৈতিক দলই একজোট। প্রয়োজনে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তৃণমূল, সিপিএম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। রামপুরহাট শহরের অর্ধেকই রেলের জমি। বর্ধমান-সাহেবগঞ্জ লুপ লাইন এই শহরকে দু’ ভাগে বিভক্ত করেছে। লাইন ও রেলগেট পার করে শহরের অন্য প্রান্তে স্কুলে যেতে সমস্যা হচ্ছিল পড়ুয়াদের। বিপদের ঝুঁকিও ছিল। তাই শহরের রেল কলোনি এলাকায় ১৯৭২ সালে রামপুরহাট রেলওয়ে আদর্শ বিদ্যামন্দির (প্রাথমিক) চালু হয়। ১৯৮৪ সালে স্কুলটি জুনিয়র বেসিক ও ১৯৯৮ সালে হাইস্কুল স্তরে উন্নীত হয়। ২০০২ সালে হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের মর্যাদা পায়। বর্তমানে এখানে একই বিল্ডিংয়ে সকালে প্রাথমিক স্কুল ও বেলায় পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস হয়। বর্তমানে হাইস্কুলে ১১০০ ও প্রাথমিকে দুশোর বেশি পড়ুয়া রয়েছে। প্রথম থেকেই চুক্তি অনুয়ায়ী রেলকে ভাড়া দিয়ে আসছে স্কুল। কয়েক বছর আগে সেটা বেড়ে হয় ৫০৬০ টাকা। অর্থাৎ প্রাইমারি ও হায়ার সেকেন্ডারি মিলিয়ে প্রতিমাসে ১০ হাজার ১২০ টাকা ভাড়া দিয়ে আসছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ, করোনাকাল থেকে সেই ভাড়া নিচ্ছে না রেল। স্কুলের তরফে জানতে চাইলেও কেন ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না, সে ব্যাপারে সদুত্তর মেলেনি। প্রধান শিক্ষক গোপীনাথ ঘোষ বলেন, কয়েকবছর অন্তর ফি বৃদ্ধির কথা চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে। চুক্তির মেয়াদ রয়েছে ২০৩০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু করোনার পর থেকে সেই ফি নিচ্ছে না রেল। সম্প্রতি রামপুরহাটের এইএন ও আইডব্লু অফিসারের কাছে স্কুলের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন রেলের কর্তারা। সেইমতো ওই অফিসারদের হাতে সমস্ত তথ্য জমা দিয়েছি। তিনি বলেন, ব্যান্ডেল, বর্ধমানে রেলের জায়গায় থাকা স্কুলগুলি উঠে গিয়েছে। স্বভাবতই আমরা আশঙ্কিত। স্কুলের প্রাক্তনী তথা কংগ্রেসের শহর সভাপতি শাহাজাদা হোসেন বলেন, এই স্টেশন অমৃত ভারত প্রকল্পের অর্ন্তভুক্ত হওয়া থেকেই রেলের জায়গায় থাকা ব্যবসায়ী ও বস্তিবাসীদের ঘর গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এবার ঐতিহ্যবাহী স্কুলের উপর কোপ পড়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাঁচাতে পড়ুয়া ও অভিভাবকদের নিয়ে রাস্তায় নামব। সিপিএম নেতা সঞ্জীব বর্মণ বলেন, পুঁজিপতিদের হাতে রেলকে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদি। রেলের উচ্ছেদের বিরুদ্ধে আগেও আন্দোলনে করেছে বামপন্থীরা। কিন্তু উচ্ছেদ ঠেকানো যায়নি। স্কুল বাঁচাবার জন্য নাগরিক আন্দোলনকে সংগঠিত করতে হবে। স্থানীয় বিধায়ক তথা তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, রেলের তো এরকম আগ্রাসী মনোভাব রয়েছে। ওই স্কুলে শত শত পড়ুয়া রয়েছে। বিষয়টি দেখছি। প্রয়োজনে রাস্তায় নামব। বিজেপির জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, যদি কর্তৃপক্ষ সহয়তা চায়, তাহলে স্কুলটি বাঁচাতে রেলের কাছে দরবার করব। পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক দীপ্তিময় দত্ত বলেন, অনেক আগেই ওই স্কুল কর্তৃপক্ষকে সরে যাওয়ার নোটিস দেওয়া হয়েছিল। তবে এখন কী অবস্থায় আছে সেটা জানতে হবে।