একী 'মানববোমা' না অন্য কিছু! কিশোরের জামা খুলে হতভম্ব পুলিশ ...
আজকাল | ১১ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা থানার অন্তর্গত শঙ্করপুর এলাকা। ভর দুপুরে রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে রয়েছে এক কিশোর। এলাকার রাস্তাঘাট চেনা না থাকায় কোন্ দিকে যাবে তা ঠিক ঠাহর করতে পারছে না। কিন্তু অজানা এক আশঙ্কার কথা মাথায় থাকায় কাউকে রাস্তাও জিজ্ঞাসা করতে পারছে না। ঠিক সেই সময় ওই পথ দিয়ে যাওয়া কয়েকজন পুলিশকর্মীর অভিজ্ঞ চোখে, বছর ষোলোর ওই কিশোরকে হতভম্বের মতো ১২ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর একটি সবুজ ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা সন্দেহ হয়। এরপর ফরাক্কা থানার পুলিশ কর্মীরা ওই কিশোরের কাছে গিয়ে সে কোথা থেকে এসেছে এবং কোথায় যাবে জানতে চাইলে নাবালক পুরোপুরি হতচকিত হয়ে পড়ে। পুলিশকে দেখে সে আর কোনও কথাই বলতে পারেনি।
সূত্রের খবর, প্রথমে ফরাক্কা থানার কয়েকজন আধিকারিক মনে করেছিলেন, ওই কিশোর হয়তো পথ ভুল করে শঙ্করপুরে চলে এসেছে। কিন্তু তাকে কিছুক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করতেই পুলিশের চক্ষু চড়ক গাছ হয়ে যায়। দেহাতি হিন্দি ভাষায় ওই কিশোর এরপর যা বলে তা শুনে পুলিশের আধিকারিকরা তাকে নিজের গায়ে থাকা জামা খুলে ফেলতে বলে। এরপরে পুলিশের জন্য আরেক প্রস্থ চমক অপেক্ষা করছিল। ঠিক হিন্দি সিনেমায় 'মানববোমারা' যেমন জামার ভিতরে বোমা লুকিয়ে রাখে ওই কিশোর জামা খুলতেই পুলিশ দেখতে পায় তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় 'সেল্লো টেপ' দিয়ে ছোট ছোট ১০ টি প্যাকেট লাগানো রয়েছে।
এক ঝলক দেখে পুলিশের কেউ কেউ মনে করেছিলেন, কোনও বড় অপরাধের জন্য হয়তো দুষ্কৃতীদল ওই কিশোরকে 'মানববোমা' হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু তার কাছে গিয়ে সেল্লো টেপ দিয়ে গায়ে লাগানো ছোট ছোট প্যাকেটগুলো পরীক্ষা করতেই পুলিশ বুঝতে পারে ওই কিশোরকে দিয়ে মাদক পাচারের চেষ্টা করছে কোনও এক মাদক পাচারকারীর দল।
অভিনব পদ্ধতিতে মাদক পাচারের এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা থানার অন্তর্গত শঙ্করপুর এলাকায়। মাদক পাচারের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ফরাক্কা থানার পুলিশ বিহারের ভাগলপুর জেলার বছর ষোলোর এক কিশোরকে আটক করেছে। সোমবার ওই কিশোরকে বহরমপুরে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে পেশ করা হচ্ছে। জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৌমজিৎ বড়ুয়া বলেন,'গোপন সূত্রে প্রাপ্ত খবরের ভিত্তিতে রবিবার দুপুর নাগাদ ওই কিশোরকে আটক করা হয়েছে। ওই কিশোরের কাছ থেকে প্রায় এক কেজি ব্রাউন সুগার উদ্ধার করা হয়েছে।' সূত্রের খবর উদ্ধার হওয়া মাদকের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় ১ কোটি টাকা। তিনি জানান ,'প্রাথমিক তদন্ত আমরা জানতে পেরেছি ওই কিশোর মালদা জেলার কালিয়াচক থেকে মাদক নিয়ে ভাগলপুরে ফিরে যাচ্ছিল। এই চক্রের সঙ্গে আর কারা জড়িয়ে রয়েছে পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।' জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান ,কয়েক বছর আগেও মুর্শিদাবাদ জেলার লালগোলা থানা এলাকা হেরোইন এবং ব্রাউন সুগার তৈরির জন্য রাজ্যে 'হেরোইন হাব' হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বারবার পুলিশ অভিযানে জেরে ওই এলাকার প্রায় সমস্ত হেরোইন প্রস্তুতকারকরা তাদের ব্যবসা মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে ধীরে ধীরে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে। আপাতত কয়েকটি প্রত্যন্ত এলাকায় গোপনে হেরোইন তৈরি হচ্ছে এবং সেখান থেকে গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।
ওই আধিকারিক জানান, মাদক পাচারকারীরা পুলিশের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য মাঝেমধ্যেই মহিলাদেরকে 'ক্যারিয়ার' হিসেবে ব্যবহার করছিল। কিন্তু পুলিশ এখন মহিলাদের বিষয়ে সজাগ হয়ে যাওয়ায় মাদক পাচারকারীরা এখন স্কুল পড়ুয়া এবং নাবালকদের মাদক পাচারের ক্যারিয়ার হিসেবেও ব্যবহার করছে।
ফরাক্কা থানার সূত্রে জানা গিয়েছে, যে কিশোরকে এক কেজি ব্রাউন সুগার-সহ আটক করা হয়েছে সে বর্তমানে বিহারের একটি স্কুলে একাদশ শ্রেণির ছাত্র। দ্রুত কিছু টাকা রোজগারের আশায় মাদক পাচারের ক্যারিয়ারে হিসেবে সম্প্রতি সে কাজ শুরু করেছিল।
ওই আধিকারিক বলেন , প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি কালিয়াচক থেকে ওই কিশোর মাদক সংগ্রহ করে ফরাক্কায় এসে পৌঁছায়। এরপর একটি অটো ধরে তার ঝাড়খন্ড এবং সেখান থেকে বিহার চলে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ফরাক্কার রাস্তাঘাট না চেনার কারণে এবং পুলিশ দেখে সে হকচকিয়ে যায়।
অন্যদিকে গত দু'দিনে মুর্শিদাবাদের লালগোলা থানা এলাকা থেকে প্রায় ৬০০ গ্রাম হেরোইন-সহ পাঁচ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে লালগোলা থানার পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হেরোইনের বাজার মূল্য প্রায় ৬৫ লক্ষ টাকা। মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, এবছর ২৭ জুলাই পর্যন্ত তারা মোট ৭৯ টি এনডিপিএস মামলা রুজু করেছেন এবং মাদক পাচারের ঘটনায় ১৩৮ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। ধৃত মাদক পাচারকারীদের কাছ থেকে পুলিশ ৫.৩ কেজি হেরোইন, ৩.২ কেজি ব্রাউন সুগার, প্রায় পঞ্চাশ হাজার বোতল বিশেষ কাশির সিরাপ এবং ১,৭৯০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করেছে।