• কংগ্রেসের নজরে ২৯৪, শরিক-মত নিচ্ছে সিপিএম
    আনন্দবাজার | ১১ আগস্ট ২০২৫
  • লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর ডাকা নৈশভোজে তাঁর পাশে বসে নৈশভোজ সেরেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর থেকেই রাহুল-অভিষেক রসায়নের ‘উষ্ণতা’ দেখিয়ে সরব হয়েছে তৃণমূলের একাংশ। আর তার জেরে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে বাংলায় আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে জোট-সমীকরণ নিয়ে। এমতাবস্থায় রাজ্যে ২৯৪টি বিধানসভা আসনে লড়ার জন্যই প্রস্তুতি নিতে চাইছে প্রদেশ কংগ্রেস। ঘর গুছিয়ে রাখতে চাইছে সিপিএমও। আসনভিত্তিক দাবি-দাওয়া নিয়ে বাম শরিকদের সঙ্গে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব আলোচনায় বসতে চলেছেন আগামী ১৯ অগস্ট।

    নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ‘ভোট চুরি’র যে অভিযোগ রাহুল তুলেছেন, তা অত্যন্ত গুরুতর এবং কমিশনের উচিত যথাযথ ভাবে এর জবাব দেওয়া— এই দাবিতে ইতিমধ্যে বিবৃতি দিয়েছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক এম এ বেবি, সিপিআইয়ের ডি রাজা-সহ অন্যান্য বিরোধী দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তৃণমূল রাহুলের তোলা অভিযোগ নিয়ে আলাদা করে বাক্যব্যয় না-করে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) বিরোধিতায় সরব, ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের বাকি শরিকদের সঙ্গে যৌথ প্রতিবাদে তারা আছে। দিল্লিতে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের দফতরে আজ, সোমবার বিরোধীদের তরফে প্রতিবাদ জানাতেও তৃণমূল যাবে, যদিও অভিষেক নিজে সম্ভবত সেখানে থাকছেন না। এই রকম পরিস্থিতিতে বাংলায় বিধানসভা ভোটের জন্যও তৈরি হতে হচ্ছে বাম ও কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্বকে।

    প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার বলছেন, ‘‘কংগ্রেস রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা আসনে লড়াই করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কংগ্রেসের প্রথম লক্ষ্য, দলকে শক্তিশালী করা, মানুষের জন্য সর্বত্র লড়াই করা। অতীতে কংগ্রেসের শাসনে বাংলায় যে অগ্রগতি হয়েছিল, সে ইতিহাস মনে রেখে রাজ্যের মানুষ কংগ্রেসকে সমর্থন করবেন বলেই আমরা আশা করি।’’ কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বাম ও কংগ্রেসের জোট হয়েছিল। দু’মাস পেরোনোর আগেই সেই ঘটনা কি অতীত? শুভঙ্করের মতে, ‘‘রাজনীতি সম্ভাবনার শিল্প। ভবিষ্যতে কী হবে, পরে দেখা যাবে। ভোটের আগে এখনও সময় আছে। অহেতুক জল্পনা না-করে আমরা সাংগঠনিক প্রস্তুতি নেব। নির্বাচনের আগে এআইসিসি-র মত নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘ভোট চুরি-সহ বিজেপির তানাশাহির বিরুদ্ধে জাতীয় স্তরে বিভিন্ন দল এক জায়গায় এসে প্রতিবাদ করছে। সেই প্রতিবাদে শামিল কোনও দলের মধ্যে যদি একই দোষ দেখা যায়, তা হলেও আমাদের সরব হতে হবে।’’

    প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ও দলের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরী অবশ্য সরাসরি বলে রেখেছেন, ‘‘আমি সিপিএমের সঙ্গে জোট করারই পক্ষপাতী। পার্টি কী করবে, জানি না। পার্টি যা করবে, তা-ই করব। তবে আগে বামেদের সঙ্গে জোট করে ভুল করিনি, এখনও তা-ই বলছি।’’ তাঁর মতে, ‘‘বামেদের সাম্প্রদায়িক শক্তি বলতে পারি না। বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বামেরা অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন!’’ প্রসঙ্গত, বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও পরিচয়পত্রের দাবিতে এবং এসআইআর-এর নামে গরিব মানুষের ‘ভোট চুরি’র প্রতিবাদে যুব কংগ্রেসের শাহিনা জাভেদদের ডাকে আগামী ১৩ অগস্ট কলকাতায় কর্মসূচিতে থাকার কথা অধীরের। আবার তার আগের দিন এসআইআর-প্রশ্নেই নির্বাচন কমিশনের দফতর অভিযানের ডাক দিয়েছে যুব কংগ্রেসের আর একটি অংশ!

    এর পাশাপাশি জেলাভিত্তিক বিধানসভা আসনের দাবি নিয়ে আলোচনার জন্য ১৯ তারিখ বামফ্রন্টের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘বিজেপি ও তৃণমূলের হাত থেকে বাংলার মানুষ পরিত্রাণ চান। সেই লক্ষ্যে সকলকে নিয়ে লড়াই করতে চাই আমরা। দেখা যাক, কারা শেষ পর্যন্ত সেই পথে শামিল হন!’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)