নজরে বিধানসভা নির্বাচন! রাজ্যে আট হাজারের বেশি চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের উদ্যোগ নবান্নের, শুরু তোড়জোড়
আনন্দবাজার | ১১ আগস্ট ২০২৫
আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে সাধারণ বিধানসভা নির্বাচন। তাই রাজ্যের সরকারি দফতরগুলিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। নবান্ন সূত্রে খবর, স্বাস্থ্য পরিষেবা জোরদার করতে বড়সড় পদক্ষেপ করা হচ্ছে। আট হাজারেরও বেশি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে শীঘ্রই। এই নিয়োগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড (ডব্লিউবিএইচআরবি)কে। নবান্নের একটি সূত্র জানাচ্ছে, দ্রুততার সঙ্গে শূন্যপদ পূরণের কাজ সম্পন্ন করা হবে, যাতে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে ঘাটতি দূর হয়।
নবান্নের তালিকা অনুযায়ী, ১৮৪৮ জন চিকিৎসক এবং ৫০১৮ জন নার্সের শূন্যপদ পূরণ করা হবে। চিকিৎসকদের মধ্যে ১২২৭টি পদ জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসারের (জিডিএমও) জন্য। বাকি ৬২১টি পদে নিয়োগ করা হবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা স্পেশ্যালিস্টদের, যার মধ্যে চিকিৎসাবিদ্যার নানা শাখায় ৪৭টি সহকারী অধ্যাপকের পদও রয়েছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মধ্যে একাংশকে এমডি-এমএস উত্তীর্ণ হতে হবে, অন্যদের সুপার স্পেশ্যালাইজেশন অর্থাৎ ডিএম বা এমসিএইচ পাশ হতে হবে। সাধারণ মেডিসিন (৪৮), অ্যানাস্থেসিওলজি (৪৭) এবং জেনারেল সার্জারি (৪৩) বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে সর্বাধিক নিয়োগ হবে।
শুধু চিকিৎসক ও নার্সই নয়, ৬০০-রও বেশি মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট, ৩৫০ জন ফার্মাসিস্ট এবং ৩১ জন রেডিওফিজিসিস্ট পদেও নিয়োগ হবে। এর পাশাপাশি অডিওলজিস্ট, স্পিচ প্যাথোলজিস্ট, ফেসিলিটি ম্যানেজার (পূর্বতন ওয়ার্ড মাস্টার), জলপাইগুড়ির ফার্মাসি কলেজের অধ্যাপক, রাজ্য ড্রাগ ল্যাবরেটরির শূন্যপদ এবং বিভিন্ন নার্সিং কলেজের শিক্ষক পদও পূরণ করা হবে। নার্স নিয়োগে গ্রেড-টু, স্টাফ নার্স পদে মোট ৫০১৮টি শূন্যপদ রয়েছে। এর মধ্যে বেসিক বিএসসি নার্সিংয়ের জন্য ২৩৩০ জন, পোস্ট বেসিক বিএসসি নার্সিংয়ের জন্য ২৫২ জন, জিএনএম মহিলা নার্স ২০৯২ জন এবং জিএনএম পুরুষ নার্স ৩৪৪ জন নিয়োগ পাবেন। বোর্ডের একটি সূত্রের দাবি, সব মিলিয়ে আট হাজারেরও বেশি পদে নিয়োগ হবে। চিকিৎসাবিদ্যার ৪৭টি শাখায় ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞ নেওয়া হবে। যত দ্রুত সম্ভব এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার চেষ্টা চলছে। রাজ্যের মধ্যে প্রথম বেলুড়ে সরকারি যোগ ও নেচারোপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ সম্প্রতি চালু হয়েছে। সেখানেও শিক্ষক ও চিকিৎসক নিয়োগ হবে। স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রস্তাব অনুযায়ী, সমস্ত নিয়োগে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে প্রার্থী নির্বাচন করা হবে।
চিকিৎসক ও নার্স পদে আবেদন করতে হবে অনলাইনে। প্রক্রিয়া শুরু হবে ১৩ আগস্ট সকাল ১০টা থেকে এবং শেষ হবে ৩ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টোয়। আবেদনপত্রের সঙ্গে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে হবে। স্বাস্থ্য ভবন আশা করছে, এই ব্যাপক নিয়োগের ফলে রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলিতে পরিষেবা আরও দ্রুত ও উন্নত হবে। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক ও নার্স সংকটে থাকা জেলা হাসপাতাল, গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিও স্বস্তি পাবে। একই সঙ্গে মেডিক্যাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার শূন্যপদ পূরণের ফলে পড়ুয়াদের পড়াশোনার মানও উন্নত হবে।
রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে রাজ্যের যুবক যুবতী ভোটারদের কর্মসংস্থানের ইতিবাচক বার্তা দিতে চায় রাজ্য সরকার। সেই লক্ষ্যই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন। তবে এই নিয়োগের ক্ষেত্রে যাতে কোনও ভাবেই দুর্নীতির অভিযোগ না ওঠে, সে বিষয়ে এখন থেকেই সজাগ থাকছেন নবান্নের আধিকারিকরা। তা ছাড়া আরজি কর হাসপাতালে গত বছর আগস্ট মাসে যুবতী চিকিৎসকের ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার পর যে ভাবে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তাতে সুষ্ঠু নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বাস্থ্য দফতরের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করাও নবান্নের অন্যতম লক্ষ্য। নিয়োগের ক্ষেত্রে ন্যূনতম তারতম্য দেখা দিলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে এই নিয়োগের বিষয়টিও ভোটের রাজনীতিতে একটি ইস্যু হতে পারে বলে মনে করছেন নবান্নের আধিকারিকদের একাংশ। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নিয়োগ প্রক্রিয়া মসৃণ করতে স্বাস্থ্য ভবনকে নবান্নের পরামর্শ মতো চলতে বলা হয়েছে বলেই প্রশাসন সূত্রে খবর।