• দিল্লিতে দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত শ্রমিকদের দেহ ফিরিয়ে আনল রাজ্য সরকার, দায়িত্ব নিলেন সাংসদেরা
    আনন্দবাজার | ১১ আগস্ট ২০২৫
  • দিল্লিতে দেওয়াল চাপা পড়ে বাংলার কয়েকজন শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে তাঁদের গ্রাম ও পরিবারে। ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই সক্রিয় ভূমিকা নেয় রাজ্য সরকার ও পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ বোর্ড। দুর্ঘটনার পরপরই রাতেই দিল্লির এমস ট্রমা কেয়ার সেন্টার এবং সফদরজং হাসপাতালে পৌঁছে যান তৃণমূলের তিন সাংসদ। রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম, জঙ্গিপুরের লোকসভার সাংসদ খলিলুর রহমান এবং মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ আবু তাহের খান। শনিবার রাতে পাঁচিল চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তিদের নাম রবিউল মণ্ডল (২২), রুকসানা খাতুন (৭), রুবিনা বিবি (২০) এবং হাসিনা খাতুন (৭)। তাঁদের সকলের বাড়ি নওদা থানার অন্তর্গত গঙ্গাধারী-জোড়তলা গ্রামে। মৃত শ্রমিকের তালিকায় আছেন নদিয়ার হোগলবেড়িয়া থানায় এলাকার শিকারপুরের বাসিন্দা ডলি খাঁ। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন পড়শি জেলা মালদহ ও আসামের আরও চার শ্রমিক। তাঁদের প্রত্যেকেরই মৃত্যু হয়েছে।

    রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, নিহত শ্রমিকদের মরদেহের ময়নাতদন্তের সমস্ত প্রক্রিয়ায় আজ সকাল থেকে সরেজমিনে উপস্থিত ছিলেন কর্মকর্তারা। শুরু থেকেই প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ও পরিবহণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষ হওয়ার পর বিমানযোগে মরদেহ পশ্চিমবঙ্গে পাঠানো হয়। কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছনোর পর মরদেহ সরাসরি তাঁদের নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে।

    এ ছাড়াও, নিহতদের পরিবারের চার সদস্যকে দিল্লি থেকে বিমানে রাজ্যে ফেরার ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার। পুরো প্রক্রিয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সরকার জানিয়েছে, প্রয়োজনে স্বজনহারাদের পাশে সবসময় থাকবে রাজ্য প্রশাসন। রাজ্যের শ্রম দফতর সূত্রে খবর, নিহতদের পরিবারকে প্রয়োজনীয় আর্থিক ও প্রশাসনিক সহায়তা দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী ব্যক্তিগত ভাবে বিষয়টি নজরে রেখেছেন।

    মৃত পরিবারের আত্মীয় দিল মহম্মদ মণ্ডল বলেন, “দিল্লির যে এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সেখানে গত কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের বাড়ির লোকেরা সেখানে একটি বস্তিতে একটি বড় পাঁচিলের সঙ্গে ত্রিপল খাটিয়ে কোনওরকমে গত কয়েক মাস ধরে থাকতেন।’’ তিনি আরও বলেন, “শনিবার সকালে আমাদের বাড়ির এক মহিলা সদস্যা সেখানে ঝুপড়ির বাইরে বসে রান্না করছিলেন। সেই সময় হুড়মুড়িয়ে ওই পাঁচিলটি সকলের উপর ভেঙে পড়ে এবং ঘটনাস্থলেই চারজনের মৃত্যু হয়েছে। আমরা শুনেছি প্রচন্ড বৃষ্টির কারণে পাঁচিলটি দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং সেই কারণে ভেঙে পড়েছে।’’

    মুর্শিদাবাদের সাংসদ আবু তাহের খান বলেছেন ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ইতিমধ্যেই শনাক্ত হওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের দেহ সরকারি খরচে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। আহত ব্যক্তির উন্নততর চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।’’

    দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লির সিনিয়র পুলিশ অফিসার ঐশ্বর্য শর্মা সাংবাদিক বৈঠকে বলেছেন, “এখানে একটি পুরনো মন্দির রয়েছে, যার পাশে বহুদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা ঝুপড়িতে কিছু পরিত্যক্ত জিনিসপত্রের ব্যবসায়ী পরিবার বাস করছিল। শনিবার রাতের প্রবল বৃষ্টিতে দেওয়ালটি ভেঙে পড়ে। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে আমরা ঝুপড়িগুলি সম্পূর্ণভাবে খালি করে দিয়েছি।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)