'ভুয়ো থানা' কীভাবে চালাচ্ছিল একদা TMC নেতা বিভাস? চোখ কপালে গোটা দেশের
আজ তক | ১১ আগস্ট ২০২৫
‘ইন্টারন্যাশনাল পুলিশ অ্যান্ড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন’। নয়ডার সেক্টর ৭০ এলাকার বিএস-১৩৬ নম্বর ঠিকানায় সাইন বোর্ডে বড় বড় করে লেখা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানতেন এটি একটি তদন্তকারী সংস্থার অফিস। কিন্তু তার আড়ালে যে প্রতারণার ছক কষা হত, তার কোনও ধারণাই ছিল না কারও। রবিবার এই ঠিকানা থেকেই নয়ডা পুলিশ গ্রেফতার করে ৬ জনকে। যার মধ্যে অন্যতম পশ্চিমবঙ্গে নিয়োগ কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত বীরভূমের বাসিন্দা বিভাস অধিকারী। ভুয়ো তদন্তকারী সংস্থা তৈরি করে প্রতারণার বড়সড় ফাঁদ পেতে বসেছিল সে।
ভুয়ো তদন্তকারী সংস্থা খুলে কীভাবে প্রতারণা?
নয়ডা পুলিশ সূত্রে খবর, গত ৪ জুন সেক্টর ৭০ এলাকার এই বাড়িটি ভাড়া নেওয়া হয়। ‘ইন্টারন্যাশনাল পুলিশ অ্যান্ড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন’ বোর্ড লাগিয়ে কাজ শুরু হয়েছিল মাত্র ১০ দিন আগেই। থানার মতো রং ও লোগো ব্যবহার করা হয়েছিল এই সাইন বোর্ডে। ফলে সাধারণ মানুষ খুব সহজেই সেটিকে তদন্তকারী সংস্থার অফিস ভেবে ফেলে। উপজাতি বিষয়ক মন্ত্রক, আয়ুষ মন্ত্রক এবং সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের জাল সার্টিফিকেট রাখা হত এই অফিসে। শুধু তাই নয়, ভুয়ো সংস্থাটি নাকি ইন্টারপোল, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন দ্বারা স্বীকৃত বলেও দাবি করত।
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, কয়েকদিন আগেই কাজ শুরু করায় খুব বেশিদূর প্রতারণার জাল বিস্তার করতে পারেনি বিভাস অ্যান্ড কোং। www.intlpcrib.in ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ভুয়ো পরিচয়পত্র এবং নথি দেখিয়ে তোলাবাজির কারবার চলত। ধৃতরা দাবি করত, ব্রিটেনের তাদের অফিসের শাখা রয়েছে।
ওই ভুয়ো অফিস থেকে উদ্ধার হয়েছে মোবাইল ফোন, তিনটি পৃথক ব্যাঙ্কের চেকবই, ১৬টি রাবার স্ট্যাম্প, একটি স্ট্যাম্প প্যাড, বিভিন্ন আইডি কার্ড, ভিজিটিং কার্ড, বিভিন্ন শংসাপত্র, লেটারহেড, একাধিক ATM কার্ড এবং ৪২ হাজার ৩০০ টাকা নগদ।
ধৃতদের তালিকায় বিভাস অধিকারী ছাড়াও রয়েছে তার ছেলে অর্ঘ্য, বাবুলচন্দ্র মণ্ডল, পিন্টু পাল, সমাপদ মাল, আশিস কুমার। এরা প্রত্যেকেই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা।
কে এই বিভাস?
সালটা ছিল ২০২৩। ওই বছর বাংলা নববর্ষের দিন অর্থাৎ ১৫ এপ্রিল বীরভূমের নলহাটির বাসিন্দা বিভাস অধিকারীর বাড়িতে হানা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার একটি টিম। এলাকা ঘিরে ফেলে শুরু হয় তল্লাশি। কেবল বাড়ি নয়, বিভাসের চালানো একটি আশ্রমেও তল্লাশি চলে।
প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় যুব তৃণমূলের প্রাক্তন নেতা কুন্তল ঘোষ গ্রেফতার হওয়ার পরই এই বিভাস অধিকারীর নাম উঠে এসেছিল। সেই সূত্র ধরেই চলে তল্লাশি অভিযান। এক সময় বেসরকারি বিএড এবং ডিএলএড কলেজ সংগঠনের সভাপতি ছিল বিভাস। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী এবং তৃণমূল বিধায়ক তথা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা ছিল। আবার অনুব্রত মণ্ডলেরও খুব কাছের লোক বলে পরিচিত ছিল এলাকায়। তবে গোরু পাচার মামলায় কেষ্ট গ্রেফতার হওয়ার পর দলত্যাগ করে এই বিভাস। তারপর ‘অল ইন্ডিয়া আর্য মহাসভা’ নামে একটি নতুন দল তৈরি করেছিল।
মাঝে কয়েকটা বছর উধাও ছিল বিভাস। গোয়েন্দারা মনে করছেন, নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে ভাটা পড়ে যাওয়ায় নতুন কোনও প্রতারণার ছক কষছিল সে। আইন পাশ করা পুত্র অর্ঘ্যকে নিয়ে বাংলা ছেড়ে পাড়ি দিয়েছিল উত্তরপ্রদেশে। সেখানে পসার সাজিয়ে বসতে না বসতেই গ্রেফতার বাংলার বিভাস।