• বাতানুকূল ট্রেনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে শাসক-বিরোধী তরজা
    আনন্দবাজার | ১১ আগস্ট ২০২৫
  • বাতানুকূল লোকাল ট্রেন চালানোর আগ্রহ প্রকাশ করে প্রস্তাব পাঠানোর প্রায় চার বছর পরে পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনে ওই ট্রেনের পরিষেবা আজ, সোমবারথেকে শুরু হচ্ছে। তার আগে রবিবার বাতানুকূল ট্রেনের পরিষেবা সূচনার অনুষ্ঠান হয়। কর্নাটক থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে দেশ জুড়ে রেলের বিভিন্ন প্রকল্পের পাশাপাশি শিয়ালদহ ডিভিশনের বাতানুকূল লোকাল ট্রেন পরিষেবারও সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শিয়ালদহে পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজারমিলিন্দ দেউস্করের উপস্থিতিতে পতাকা নেড়ে ট্রেন যাত্রার সূচনা করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার এবং শান্তনু ঠাকুর।

    অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য এবং রানাঘাট থেকেসাংসদ জগন্নাথ সরকার। তবে এ দিনের নানা পর্বে প্রকট হয়ে দেখা দিল শাসক-বিরোধী তরজা। এ দিনের অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারঅভিযোগ করেন, রাজ্যে রেলের বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণে জমির প্রশ্নে রাজ্য সরকারের সহযোগিতা মিলছে না। একই অভিযোগ করেন বিজেপি সাংসদ শমীকও। পরে শিয়ালদহ স্টেশনের নাম শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নামে রাখার দাবি জানান দু’জনেই।

    বিজেপির নাম বদলের ওই দাবি খণ্ডন করে পরে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ শিয়ালদহ স্টেশনের নাম স্বামী বিবেকানন্দের নামে রাখার পাল্টা দাবি জানান। শিকাগো বক্তৃতার পরে ট্রেনে স্বামী বিবেকানন্দের বজবজ থেকে শিয়ালদহে আসার ঘটনাকে স্মরণে রেখে ওই দাবি তোলেন তিনি।

    এ দিন শিয়ালদহ স্টেশনে নতুন ট্রেনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কর্মসূচি ঘিরে স্কুলপড়ুয়া, বিজেপির কর্মী-সমর্থক ছাড়াও রেলপ্রেমীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।শিয়ালদহ থেকে ট্রেন যাত্রার সূচনা করে তাতে ওঠেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। দমদম স্টেশনে নেমে তিনি স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় বিবেকানন্দের মূর্তিতে মালা দিতে এলে রাজ্যের শাসকদলের শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা তাঁকে ঘিরে‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে থাকেন। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৃণমূল এবং বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে বচসা ও মারামারির উপক্রম হয়।পরে রেল রক্ষী বাহিনীর কর্মীরাতৎপর হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

    ওই ঘটনাকে ঘিরে দমদম স্টেশনে সাময়িক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তৃণমূল সমর্থকদের আচরণের নিন্দা করেন সুকান্ত। বিপরীতে বিক্ষোভকারীরা বহিরাগতদের এনে রেলের অনুষ্ঠান করার অভিযোগ তোলেন।রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার নতুন ট্রেনে শিয়ালদহ থেকে রানাঘাট পর্যন্ত সফর করেন। বাতানুকূল লোকাল চালু করার ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই তিনি তৎপর থেকেছেন বলে রেল সূত্রের খবর। ওই ট্রেনের বিপরীতে শিয়ালদহ থেকে সকালে ট্রেন চালু করার বিষয়ে আগ্রহের কথাও জানান জগন্নাথ। কল্যাণীতে বিকল্প টার্মিনাল চালু করার বিষয়েও রেলের কাছে দাবি জানানোর কথা বলেন তিনি।

    যাত্রীদের সুবিধা ছাড়াও প্রযুক্তিগত নৈপুণ্যের কারণে নতুন রেকের পরিষেবা জনপ্রিয় হবে বলে রেলকর্তাদের আশা। এয়ার স্প্রিং, ডিস্ট্রিবিউটেড পাওয়ার, ডিস্ক মাউন্টেড ব্রেক-সহ একাধিক প্রযুক্তির কারণে ওই রেক দ্রুত গতি অর্জন করা ছাড়াও খুব দ্রুত থামতেও পারে। কার্যত ঝাঁকুনিবিহীন ওই ট্রেনের প্রত্যেক কামরায় ১৫ টনের দু’টি বাতানুকূল যন্ত্র, চারটি সিসি ক্যামেরা, জিনিস রাখার সুবিধাজনক তাক ছাড়াও প্রশস্ত ভেস্টিবিউল এবং স্বয়ংক্রিয় দরজা রয়েছে।

    ট্রেনের বাতানুকূল যন্ত্র থেকে বেরোনো জল ব্যবহার করে চালকের কেবিনের সামনের কাচ পরিষ্কার করার ব্যবস্থাও রয়েছে ওই ট্রেনে।বাতানুকূল যন্ত্র থেকে যাতে জল কামরার ভিতরে না পড়ে, সে জন্যে কামরার দু’পাশে বাইরের দিকেবিশেষ পাইপ নীচ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

    রেল কর্তাদের আশা, যাত্রীরা এক বার সফর করতে শুরু করলে, এর স্বাচ্ছন্দ্য বুঝতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে যাত্রীর সংখ্যা ধাপে ধাপে বাড়বে। ইতিমধ্যেই অনলাইনে মোবাইল অ্যাপ থেকে ওইট্রেনের দৈনিক এবং মাসিক টিকিট কাটার খুঁটিনাটি জানানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। আজ থেকে ওই ট্রেন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে যাত্রী পরিষেবা শুরু করবে। ট্রেন চলার সময়ে আকস্মিক বিভ্রাট এড়াতে রক্ষণাবেক্ষণের কর্মীদের একাংশ ট্রেনে থাকবেন বলেও জানানো হয়েছে। নতুন ট্রেনে ওই দূরত্ব সফর করতে মোট সময় লাগছে ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের কাছাকাছি।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)