আজকাল ওয়েবডেস্ক: গত কয়েকদিন ধরে রাজ্য জুড়ে প্রবল বর্ষণের পর গত ২৪ ঘন্টায় বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কমলেও ঝাড়খণ্ড এবং বিহারের বন্যার জল গঙ্গা নদী দিয়ে নিম্ন অববাহিকার দিকে নেমে আসতে শুরু করায় প্রবল বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলার গঙ্গা এবং পদ্মা তীরবর্তী প্রচুর গ্রামে। এর পাশাপাশি প্লাবিত হতে পারে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অংশ। গঙ্গা নদীতে জলস্তর বৃদ্ধি পেতে শুরু করায় ইতিমধ্যেই মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে ফরাক্কা, সুতি, সামশেরগঞ্জ, রঘুনাথগঞ্জ, ভগবানগোলা, জলঙ্গি সহ একাধিক ব্লকে সর্তকতা জারি করা হয়েছে।
গত দু’দিন ধরেই মুর্শিদাবাদের সুতি, সামশেরগঞ্জ এবং রঘুনাথগঞ্জের বহু গ্রামে ধীরে ধীরে গঙ্গা নদীর জল ঢুকতে শুরু করেছিল। রবিবার সকাল থেকে সেই জল ঢোকার পরিমাণ বেশ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফরাক্কা বাঁধ প্রকল্প কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে জানা গিয়েছে, বাঁধ এলাকায় গঙ্গা নদীর বিপদসীমা ২২.২৫ মিটার। রবিবার সকালে গঙ্গার ‘আপ স্ট্রিমে’ অর্থাৎ ঝাড়খণ্ডের দিকে গঙ্গা ২৬.৪০ মিটার উচ্চতায় বইছে এবং ‘ডাউন স্টিমে’ গঙ্গা ২৩.৪৮ মিটার উচ্চতায় বইছে। বাঁধ প্রকল্প সূত্রে খবর, ঝাড়খন্ড থেকে বিপুল পরিমাণ জলপ্রবাহ ব্যারেজের দিকে বয়ে আসতে শুরু করায় প্রকল্পের বেশিরভাগ গেট রবিবার সকাল থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে। এদিন সকাল থেকে সেখানে ১৪.৫ লক্ষ কিউসেক হারে জল ছাড়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গঙ্গা নদী ঝাড়খণ্ড থেকে মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রবাহিত হয়ে আসার পর ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের দিকে এই নদীর জল প্রবাহের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু যে বিপুল পরিমাণ জলরাশি এই মুহূর্তে ‘আপ স্টিম’ থেকে বয়ে ব্যারেজের দিকে আসছে তা আটকে রাখার ক্ষমতা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষের নেই। জলের চাপ বেশি বাড়লে ব্যারেজ ভেঙে পর্যন্ত যেতে পারে। সূত্রের খবর, সেই কারণে গত প্রায় ১৫ দিনের মধ্যে সর্বাধিক হারে ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ জল ছাড়তে শুরু করে দিয়েছে। সে কারণে সুতি, সামশেরগঞ্জ থেকে শুরু করে জলঙ্গি পর্যন্ত গঙ্গা এবং পদ্মা নদীতে জলস্তর বাড়তে শুরু করেছে।
ফরাক্কা ব্যারেজ প্রকল্পের এক আধিকারিক জানান, ‘সুতি, সামশেরগঞ্জ হয়ে পদ্মা নদীর যে শাখা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে সেখানেও জলস্তর বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিমধ্যেই ব্যারেজ কর্তৃপক্ষের তরফে বাংলাদেশের আধিকারিকদের অতিরিক্ত জল ছাড়ার বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে’। অন্যদিকে, ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ বিপুল পরিমাণে জল ছাড়া শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে মুর্শিদাবাদ জেলার সুতি, সামশেরগঞ্জ, রঘুনাথগঞ্জ -২ সহ আরও একাধিক ব্লকের নিচু জল ঢুকতে শুরু করেছে। সামশেরগঞ্জ ব্লকে লহরপুর, শিবনগর সহ একাধিক এলাকায় যেমন নতুন করে জল ঢুকছে, তেমনই গঙ্গা নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে নদী ভাঙন নতুন করে ভয়াবহ আকার নিয়েছে।
বিভিন্ন জায়গায় গ্রামবাসীরা বস্তার মধ্যে বালি ভরে বাঁধ তৈরি করে গঙ্গা নদীর জল আটকানোর চেষ্টা করছেন। রঘুনাথগঞ্জের বিধায়ক আখরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা শুনেছি বেশকিছু গ্রামে গঙ্গা এবং পদ্মা নদীর জল ধীরে ধীরে প্রবেশ করছে। তবে নদীতে জল বাড়লেও যাতে সাধারণ মানুষের বেশি ক্ষয়ক্ষতি না হয় সেদিকে আমরা নজর রাখছি। নদীর জল বেড়ে বড় বিপর্যয় হলে গ্রামবাসীদের ত্রাণ দেওয়া হবে এবং তাদেরকে নিকটবর্তী স্কুলে এনে রাখার ব্যবস্থা করা হবে’।
অন্যদিকে গত কয়েকদিনে নদীর বাবলা এবং ভাগীরথী নদীর জল বৃদ্ধির কারণে জলমগ্ন হয়ে রয়েছে সাটুই, চৌরীগাছা, কামনগর, শক্তিপুর, সোমপাড়া সহ আরও একাধিক এলাকা। দ্বারকা নদীর জল বাড়ার কারণে কান্দি মহাকুমার অন্তর্গত কান্দি, খড়গ্রাম, ভরতপুর -১ এবং বড়ঞা ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও প্লাবিত হয়ে রয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কান্দি মহকুমায় একসঙ্গে দ্বারকা, ময়ূরাক্ষী, কুয়ে এবং ব্রাহ্মণী নদীর জল বেড়েছে। তার ফলে প্রায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ জলবন্দী হয়ে পড়েছেন। ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনের তরফ এবং তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে বিভিন্ন জায়গায় ‘কমিউনিটি কিচেন’ খুলে বন্যা দুর্গতদের খাওয়ার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।