রাজ্য জুড়ে শুরু হয়েছে ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ কর্মসূচি। এলাকাবাসীর দাবি খতিয়ে দেখে বিভিন্ন কাজ করার জন্য এই প্রকল্পে বুথ পিছু দশ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। মন্তেশ্বর ব্লকেও শুরু হয়েছে ওই কর্মসূচি। উঠে আসছে নানা কাজের দাবি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকাবাসীর দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে ব্লক অফিস থেকে পরিকল্পনা মাফিক দরপত্র ডেকে সেই কাজে টাকা খরচ করা হবে। মন্তেশ্বর ব্লকের ১৩টি পঞ্চায়েতে দুশোর বেশি বুথ রয়েছে। কিন্তু ব্লকে পর্যাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার না থাকায় সে সব কাজ রূপায়ণে বাধা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রশাসনের একাংশের।
মাসকয়েক আগে মন্তেশ্বর ব্লক কার্যালয়ের ভিতরে চার জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ারকে মারধরের অভিযোগে সরগরম হয়েছিল মন্তেশ্বর ব্লক। নিরাপত্তা ও সুস্থ কাজের পরিবেশের দাবিতে জেলা প্রশাসন ও রাজ্যস্তরে অভিযোগ জানিয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ারদের সংগঠন, প্রহৃত তিন ইঞ্জিনিয়ার সৌভিক ঘোষ, চণ্ডীচরণ কোলে ও প্রসেনজিৎ ধক। তাঁদের দাবিকে মান্যতা দিয়ে ওই তিন ইঞ্জিনিয়ারকে মন্তেশ্বর থেকে অন্যত্র বদলি করা হয়। রেখে দেওয়া হয় চতুর্থ ইঞ্জিনিয়ার অনাবিল সেনগুপ্তকে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই ঘটনার পরে, গত আড়াই মাস ধরে সাংসদ ও বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন তহবিলের কাজ এবং কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের প্রকল্পের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। ব্লক প্রশাসনের দাবি, বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বিরোধীদের দাবি, সন্ত্রাসের পরিবেশের কারণেই মন্তেশ্বর ব্লকের এই অবস্থা।
প্রশাসনের অন্দরের খবর, ইঞ্জিনিয়ার না থাকায় নিয়ম মেনে কাজের দরপত্র আহ্বান করা যাচ্ছে না। ফলে থমকে গিয়েছে অনেক কাজ। শুধুমাত্র সর্বশিক্ষা মিশনের ইঞ্জিনিয়ার অনাবিল সেনগুপ্তের অধীনে যে কাজ রয়েছে, তা চলছে। মন্তেশ্বরের বিডিও সঞ্জয় দাস বলেন, ‘‘সমস্যা উচ্চ স্তরে জানানো হয়েছে।’’ কালনার মহকুমাশাসক শুভম আগরওয়াল বলেন, ‘‘আপাতত যে ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন, তাঁকে দিয়েই কাজ চালানো হচ্ছে। জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। নতুন তালিকা বেরোলেই সমস্যা মিটবে।’’
সিপিএমের মন্তেশ্বর এরিয়া কমিটির সম্পাদক ওসমান গনি সরকারের দাবি, ‘‘মন্তেশ্বর ব্লকের এই হাল তৃণমূল নেতৃত্বের সন্ত্রাসের ফসল। কোনও ইঞ্জিনিয়ার এখানে কাজ করতে আসতে চাইছেন না।’’ বিজেপির বর্ধমান জেলা সাধারণ সম্পাদক, মন্তেশ্বর বিধানসভা এলাকার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ পোদ্দারের অভিযোগ, ‘‘মন্তেশ্বরের তৃণমূল নেতৃত্বের দিনের পর দিন সন্ত্রাস সত্ত্বেও জেলা নেতৃত্ব ব্যবস্থা নেন না। সরকারি কর্মচারীদেরও মারধর করা হয়। স্বাধীন ভাবে কাজ করার পরিবেশ না থাকায় ইঞ্জিনিয়াররা আসতে চাইছেন না।’’
মন্তেশ্বরের বিধায়ক, রাজ্যের গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বলেন, ‘‘সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের কারণেই মন্তেশ্বর ব্লকে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিষয়টি রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েছি। এলাকাবাসীর উন্নয়নের স্বার্থে যাতে মন্তেশ্বর ব্লকে দ্রুত ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ হয়, জেলা প্রশাসনের কাছে তার জন্য আবেদন জানিয়েছি।’’