দলের বুথ সভাপতিদের নিজেদের বাড়ির সামনে দাঁড় করিয়ে ছবি তোলাচ্ছে বিজেপি। শুধু দাঁড়ানো ছবি নয়, কখনও ডান হাত তুলে, কখনও আঙুল উঁচিয়ে, চোখ খুলে, চোখ বন্ধ করে নানা কায়দায় ছবি তোলানো হচ্ছে। সেই ছবি সেখান থেকেই ‘আপলোড’ করা হচ্ছে দলের পোর্টালে।
কেন?
বিজেপির অন্দরে তৈরি হয়েছে ‘ভুয়ো’ শঙ্কা। ভোটার তালিকায় ভুয়ো নাম রয়েছে বলে জেলায় জেলায় গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ জানিয়েছে বিজেপি। এ বার দলের উপর মহল থেকে চাপ দিয়ে সব বুথে কমিটি গঠনের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল। গঠন করা সব কমিটির বাস্তব অস্তিত্ব রয়েছে তো, মুখরক্ষায় দলের নিচুতলা থেকে বুথ সভাপতিদের ‘ভুয়ো’ নাম পাঠানো হয়নি তো? এই আশঙ্কাতেই বুথ সভাপতিদের নিজের বাড়ির সামনে দাঁড় করিয়ে ছবি তোলানো হচ্ছে।
দলীয় সূত্রে খবর, বুথ সভাপতি যে ওই এলাকাতেই থাকেন, ভিন্ জেলা বা ভিন্ রাজ্যে নন, তা বোঝাতে ছবি তাঁর বাড়ির সামনে তোলা হচ্ছে, যাতে ছবির ফ্রেমে বাড়িটিও দেখা যায়। দ্বিতীয়ত, ছবিটি যে এখনকার তোলা এবং এআই দিয়ে তৈরি নয়, তা বোঝাতে দিন তারিখ-সহ নানা ভঙ্গিমার মুহূর্ত ক্যামেরায় ধরা হচ্ছে। যেমন ভাবে মোবাইলের সিমের সংযোগ নেওয়ার সময় গ্রাহকের ছবি নেওয়া হয়, ঠিক সে ভাবেই।
সে জন্যে খরচও করছে দল। ছবি তুলতে লোক ভাড়া করেছে বিজেপি। রাখা হয়েছে প্রশিক্ষিত কর্মীদের। সূত্রের খবর, তাঁদের দৈনিক মোটর বাইকের তেল বাবদ ২০০ টাকা এবং ১০০ টাকা দেওয়া হচ্ছে খাবারের খরচ বাবদ। এ ছাড়াও পারিশ্রমিকও রয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলায় দুই হাজারের কিছু বেশি বুথ রয়েছে। যার মধ্যে প্রায় এগারশো বুথে ছবি তোলার কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি। দলের এক নেতার কথায়, “আসলে নেতৃত্ব যাচাই করছেন, জেলা থেকে সব তথ্য ঠিক দেওয়া হয়েছে কি না। এত দিন অনেক জায়গায় খাতায়-কলমে কমিটি দেখানো হলেও ভোট কেন মেলেনি, এজেন্ট কেন বসেনি— সে সব জানতে গিয়ে খোঁজ করে দেখা গিয়েছে সেই বুথে কমিটিই নেই। যে নাম দেওয়া হয়েছিল সেগুলিরও অস্তিত্ব নেই, সে কারণেই এ বার এ ভাবে যাচাই করা হচ্ছে।”
বুথ সভাপতি যাচাইয়ের কথা মেনে নিলেও ছবি তোলার খরচ দেওয়ার কথা মানতে চাননি দলের নেতৃত্ব। বিজেপির বুথ শক্তিশালী করার কর্মসূচির শিলিগুড়ি বিভাগ তথা চার জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত বাপি গোস্বামী বলেন, “এক জন সারা দিন বুথে বুথে ঘুরে দলের কাজ করবেন, তাঁর খাবারের ব্যবস্থা করা হবে না? দলের কর্মীরাই সেই ব্যবস্থা করছেন।”