‘শত্রু বিজেপিতে আছে, তৃণমূলেও রয়েছে’! তৃণমূল যুব নেতার খুনে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করলেন বাবা
আনন্দবাজার | ১১ আগস্ট ২০২৫
কয়েক দিনের মধ্যে কোচবিহারে দ্বিতীয় গুলিকাণ্ড কোচবিহারে। আবার খুন হলেন শাসকদলের এক নেতা। ওই ঘটনায় তৃণমূলের একাংশের দিকেই আঙুল তুললেন মৃত যুব তৃণমূল নেতা অমর রায়ের বাবা মহিম রায়। তাঁর অভিযোগ, রাজনৈতিক কারণে অনেকের সঙ্গেই শত্রুতা রয়েছে পরিবারের। শত্রুপক্ষ যেমন বিরোধী বিজেপিতেও আছে, তেমনই তৃণমূলেও আছে। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ এবং দলের কাছে নিরপেক্ষ তদন্ত চাইলেন পুত্রহারা মহিম। পেশায় ঠিকাদার প্রৌঢ়ের দাবি, তাঁর স্ত্রী পঞ্চায়েত প্রধান হওয়া ইস্তক অনেক শত্রু তৈরি হয়েছে। ছেলের খুনে তাঁদের মধ্যে কেউ জড়িয়ে থাকতে পারেন।
শনিবার বিকেল ৪টে নাগাদ ডোডেয়ার হাটে গাড়িতে করে গিয়েছিলেন যুব তৃণমূল নেতা অমর। স্থানীয় সূত্রে খবর, কিছু ক্ষণের মধ্য়ে বাইক নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন কয়েক জন। তাঁদের মধ্যে দু’জনের মাথায় হেলমেট ছিল। প্রথমে একেবারে সামনে থেকে গুলি করা হয় যুব তৃণমূল নেতাকে। একটি গুলি লাগে তাঁর পায়ে। এর পর অমরকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে মাথায় গুলি করে পালিয়ে যান দু’জন। ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত এক জনকে আটক করেছে পুলিশ। মৃতের বাবা বলেন, ‘‘শনিবার দুপুরে আমি মাংস আনতে গিয়েছিলাম। মাংস কিনে ঘরে ঢুকে হাত-পা ধুয়ে বসেছি। হঠাৎ একটা খবর পেলাম। আমি বাইক নিয়ে বেরোলাম। আমায় কয়েক জন পরিচিত আটকে দিল। বলল, আমার যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তার পর কয়েক জন আমায় খবর দিল ছেলেকে শুটআউট করা হয়েছে। ছেলের মৃতদেহ দেখতে গেলাম।’’ প্রৌঢ়ের সংযোজন, ‘‘যে চার জন ছিল (সন্দেহভাজন) তাদের তিন জনকে পুলিশ আটক করেও ছেড়ে দিয়েছে। এক জনকে আটকে রেখেছে। তবে ছেলেকে মারার আগেই ছক করা হয়েছিল।’’
এর আগে কোচবিহারের পুণ্ডিবাড়িতে খুনের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধানের ছেলে ও কোচবিহার-১ ব্লকের যুব তৃণমূলের সহ-সভাপতি অমরকে গুলি করে খুন করা হয়। মহিম জানান, তাঁর স্ত্রী পঞ্চায়েত প্রধান। তিনি এবং ছেলে মূলত ব্যবসা করেন। সেই সঙ্গে শাসকদলের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর দাবি, আগে থেকে খবর ছিল অমর ওই হাটে যাবেন। তাঁর কথায়, ‘‘কয়েক দিন আগে বিজেপি বনাম তৃণমূলের লড়াইয়ে এক জন মারা গিয়েছেন। তার পর এই ঘটনা। রায়বাড়ি অঞ্চলে আমাদের সাংসদ সভাপতি হওয়ার পর জায়গাটার একটু পরিবর্তন হয়েছে। দায়িত্ব পেয়ে আমার ছেলে অনেক কাজ করেছে। কিন্তু আমার স্ত্রীকে ভোটের টিকিট দেওয়ায় দলের অনেক পুরনো নেতা অসন্তুষ্ট ছিলেন। পুরনো নেতাদের মধ্যে কেউ আমাদের হয়ে ভোটে প্রচার করেননি। তার পরেও শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। আমার স্ত্রী জিতেছে। তাই শত্রু তৃণমূলেও আছে। বিজেপিতেও আছে। কে (খুন) করেছে, ঠিক করে বলতে পারব না।’’
অন্য দিকে, যুব তৃণমূল নেতার খুনের ঘটনায় বিজেপিকেই কাঠগড়ায় তুলেছে তৃণমূল। কোচবিহারের তৃণমূল সাংসদ জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়া বলেন, ‘‘বিধানসভা নির্বাচন যত কাছে আসছে, ক্ষমতা দখল করতে তত মরিয়া হয়ে যাচ্ছে বিজেপি। কখনও তারা ইডি-সিবিআই পাঠাচ্ছে নেতাদের বাড়িতে। কখনও কর্মীদের খুন করাচ্ছে দুষ্কৃতীদের দিয়ে। এটাই ওদের স্ট্র্যাটেজি। তবে ওরা বড় ভুল করছে। পুলিশ উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। তদন্তে আমরা সর্বতো সহায়তা করছি।’’ তিনি জানান, অমরের খুনের প্রতিবাদে রবিবার বিক্ষোভ মিছিল করবে তৃণমূল। তার পর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।