• বালিগঞ্জে বহুতল থেকে পড়ে মৃত্যু আইনজীবীর
    এই সময় | ১১ আগস্ট ২০২৫
  • এই সময়: ‘জুনিয়ররা অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে সব মামলা নিয়ে নিল। আমার সব ক্লায়েন্ট চলে গিয়েছে...’— এ সব বলতে বলতে চারতলার ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে পায়চারি করছিলেন বছর বাহান্নর প্রৌঢ়। তার কিছুক্ষণ পরেই উপর থেকে ভারী কিছু পড়ার শব্দ পান বাড়ির লোকজন। তাঁরা দৌড়ে গিয়ে দেখেন, আবাসনের নীচে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন ওই প্রৌঢ়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে মৃত্যু হয় তাঁর।

    শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ ঘটনাটি বালিগঞ্জের একটি অভিজাত আবাসনে। ওই তল্লাটে বেশ কয়েকজন নামী শিল্পপতি, সাহিত্যিক, আমলাদের বাস। ওই আবাসনের ‘এ’ ব্লকে চারতলার ফ্ল্যাটে থাকতেন কৌস্তুভচন্দ্র দাস। পেশায় আইনজীবী। নিজের ফ্ল্যাটের ব্যালকনির জানলা খুলে ঝাঁপ দিয়ে তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন বলে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান।

    কৌস্তুভের স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে আছেন। মৃতের পরিবার ও পড়শিদের সঙ্গে কথা বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, কৌস্তুভ কলকাতা হাইকোর্টে বেশ পরিচিত আইনজীবী ছিলেন। তবে গত বেশ কয়েক মাস ধরে তিনি নানা রকম শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন। একরকম শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিলেন।

    সেই সময়ে তিনি নিজে আদালতে কোনও মামলার প্রতিটি ডেটে উপস্থিত থাকতে পারছিলেন না। সেই সুযোগে পরিচিত কিছু জুনিয়র আইনজীবী তাঁর মামলাগুলি নিয়ে নেন বলে মনে হচ্ছিল কৌস্তুভের। জুনিয়ররাই তাঁর ক্লায়েন্ট হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে ভেবে তিনি মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন।

    পুলিশ জানতে পেরেছে, এ কথা তিনি বাড়িতে বারবার বলছিলেন। শনিবার বিকেলেও তেমনই কথা বলতে বলতে উদ্বিগ্ন হয়ে কৌস্তুভ পায়চারি করছিলেন ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে। তাঁর স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে অন্য ঘরে শুয়েছিলেন।

    তদন্তকারীদের দাবি, ব্যালকনির গ্রিলের মধ্যে একটা ছোট জানলা মতো করা ছিল। সেটা তালা দিয়ে বন্ধ রাখা হতো। প্রয়োজনে খোলা হতো ওই জানলা। পুলিশ কৌস্তুভদের এক পড়শির কাছ থেকে জানতে পেরেছে, কৌস্তুভ নীচে পড়ে যাওয়ার সময়ে ওই জানলাটি খোলা ছিল।

    তদন্তকারীদের অনুমান, নিজেই গ্রিলের জানলাটি খুলেছিলেন কৌস্তুভ। নীচে পড়ে যাওয়ার পরে তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় শিশুমঙ্গল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে রাত ৯টা নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়। প্রাথমিক ভাবে এটিকে আত্মহত্যার ঘটনা বলেই অনুমান পুলিশের। কারণ, গ্রিলের জানলাটি খুলে সেখানে বসতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে, এমনটা মনে হচ্ছে না পুলিশের।

    ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য তদন্তকারীরা অপেক্ষা করছেন। তবে রবিবার পর্যন্ত ফ্ল্যাট থেকে কোনও সুইসাইড নোট মেলেনি। ওই আবাসনের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখছে পুলিশ। প্রতিবেশীদের বয়ানও রেকর্ড করা হচ্ছে। পড়শিদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, গত এক সপ্তাহ ধরে ‘এ’ ব্লকে সংস্কারের কাজ চলছিল।

  • Link to this news (এই সময়)