• নথি হাতিয়ে ঋণের টাকায় দেশভ্রমণ, ডুয়ার্সের হোটেল থেকে ধৃত প্রতারক
    বর্তমান | ১১ আগস্ট ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: প্রথমে পরিকল্পিত উপায়ে হাতানো নথির সাহায্যে খোলা হয় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। তারপর সেই নথির ভিত্তিতে ব্যাঙ্ক বা বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়া হয়। ঋণের টাকায় চলে দেশভ্রমণ! রেলের টিকিট কাটা থেকে হোটেল বুকিং—সবই ঋণের টাকায়। ব্যাঙ্ক ঋণের কাগজ আসার পর নথির আসল মালিক বুঝতে পারেন বিষয়টি। পুলিসের দ্বারস্থ হন। অবশেষে ভবানীপুর থানার হাতে ধরা পড়েছে অভিযুক্ত প্রতারক। পুলিস জানিয়েছে, অভিজিৎ সাহা নামে ওই যুবককে ডুয়ার্সের একটি হোটেল থেকে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার তাকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। তদন্তে জানা গিয়েছে, এই রাজ্য ছাড়াও দেশের অন্যান্য জায়গায়ও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।

     ঘটনা হল, ভবানীপুরের প্রিয়নাথ মল্লিক রোডের বাসিন্দা এক তরুণী গত ১ জুলাই পরিবারের সঙ্গে ধৌলি এক্সপ্রেসে জলেশ্বর থেকে সাঁতরাগাছি আসছিলেন। ট্রেনে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় অভিযুক্তের। সে নিজেকে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্তা বলে পরিচয় দেয়। অভিযোগকারিণীর পরিবারের এক সদস্য অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও আইআরটিসি থেকে টিকিট কাটতে পারছিলেন না। তখন ওই যুবক নিজের আইআরটিসি অ্যাকাউন্ট থেকে টিকিট কেটে দেয়। এরপর কথায় কথায় তাদের আলাপ জমে ওঠে।  যুবক জানতে পারে, তরুণী স্নাতক হওয়ার পর চাকরির চেষ্টা করছেন। ক্ষমতাবলে সে তরুণীকে ব্যাঙ্কে চাকরি করে দেওয়ার আশ্বাস দেয়। ফোন নম্বর আদানপ্রদান হয়। তারপর অভিজিৎ তরুণীর বাড়িতে বেশ কয়েকবার আসে। ব্যাঙ্কের বেশ কিছু জাল নিয়োগপত্র এনে সে দেখায় তরুণীকে। এভাবে বিশ্বাস অর্জন করে সে তরুণীর আধার, ভোটার, প্যান, জন্মের শংসাপত্র, এমনকী ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সমস্ত নথি নিয়ে নেয়। এরপর ১৬ ও ১৭ জুলাই অনলাইন ইন্টারভিউয়ের নাম করে তরুণীর বাড়িতে আসে পরপর দু’দিন। তরুণীকে পাশে বসিয়ে বিভিন্ন তথ্য নিয়ে তাঁর অজান্তে একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের জন্য আবেদন করে। আবেদনে সে নিজের মোবাইল ও ই-মেল আইডি দেয়, যাতে ওটিপি তার কাছেই আসে। তরুণী অভিযোগে আরও জানিয়েছেন, অভিজিৎ তাঁর বাবার অসুস্থতার কথা বলে নানা ছুতোয় তাঁর ল্যাপটপ ও এটিএম কার্ড নিয়ে চলে যায়। বাইপাসের ধারে একটি হাসপাতালে ভর্তি বাবাকে দেখে ফেরার পথে ল্যাপটপ ও এটিএম ফেরত দিয়ে যাওয়ার কথা বলে যায় অভিজিৎ। কিন্তু তা আর হয়নি। তরুণী তার ফোনও বন্ধ পান। কয়েকদিন পর দেখেন, তাঁর নামে একটি বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৩৫ হাজার টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। সেই টাকা দিয়ে অনলাইনে টিকিট বুক করা হয়েছে। ১৯ জুলাই তিনি ভবানীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। মোবাইল ও ব্যাঙ্ক অ্যকাউন্টের লেনদেনের সূত্র ধরে অভিজিৎকে ডুয়ার্সের মেটেলি থানা এলাকার একটি হোটেল থেকে পাকড়াও করে পুলিস। 

    ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদে তদন্তকারীরা জেনেছেন, এটাই তার লোক ঠকানোর কৌশল। এভাবেই সে অন্যের টাকায় ভারত ভ্রমণে অভ্যস্ত! ধৃতের নামে কলকাতার আমাহার্স্ট স্ট্রিট, হাসনাবাদ ও কালিম্পংয়ে অভিযোগ রয়েছে। অনেক হোটেল মালিকও তার প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ। জালিয়াতির টাকার মোট পরিমাণ কত, জানার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিস। 
  • Link to this news (বর্তমান)