বাঙালিয়ানার অহংয়ে সুপারহিট বর্ষামঙ্গল, গরম ভাতে ইলিশের সঙ্গে চুটিয়ে আড্ডা, গান
বর্তমান | ১১ আগস্ট ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সকাল থেকেই আকাশে পেঁজা তুলোর দখল জানান দিচ্ছে, বাঙালির শারদোত্সব আসন্ন। তবে সেই উত্সব তো আসবে পাঁজি মেনে। তার আগে বর্ষার বিদায় আছে। সঙ্গে ইলিশের স্বাদ পরখও। নিম্নচাপের চাপমুক্ত রোদ ঝলমল রবিবারের দুপুরের থেকে বেশি ভালো মুহূর্ত এর জন্য আর কীই বা হতে পারে! তাই পেটপুজোর উৎসব পালন করল বাঙালি—গরম ভাতে-ইলিশে। আর বাঙালি উত্সবে মাতবে, সেখানে আড্ডা-গান থাকবে না, সে আবার হয় নাকি!
‘বর্তমান’ ও ‘ফরচুন’-এর উদ্যোগে রবিবার দিনভর কলকাতার ওয়েস্টসাইড প্যাভেলিয়নে অনুষ্ঠিত হল ‘বর্ষামঙ্গল’। রান্না প্রতিযোগিতার অপর প্রান্তে চলল নাচ-গান-আড্ডা। গরম তেলে ইলিশ ডুব দিতেই ঝাঁঝে-গন্ধে চারদিক যেন মায়ায় ভরে যায়। সকাল থেকেই উত্সাহী প্রতিযোগীদের ভিড়। একমাসজুড়ে ১৪টি আবাসনে চলেছে সেরা রাঁধুনি বাছাইয়ের লড়াই। শুধু তাই নয়, ই-মেল মারফত হাজারের বেশি রেসিপি জমা পড়েছে। সব মিলিয়ে এদিন ২০জন রাঁধুনি খুন্তি হাতে ফ্রাইং প্যানে যুদ্ধে নেমেছিলেন। খুন্তি-কড়াইয়ের খুটখাট শব্দ ছাপিয়ে প্রায় দেড় হাজার মানুষ এদিন কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া-দাওয়া করলেন। ধোঁয়া ওঠা ভাতে ডাল মেখে মুখে দিতেই গয়না বড়ি চেয়ে রইল থালা থেকে। সঙ্গে আলু ভাজা, শুক্তো। কোনও মতে শেষ করেই ইলিশের হাতছানি। ইলিশের মাথা দিয়ে ছ্যাঁচড়া, ইলিশের তেল, ইলিশ ভাজা, ইলিশের তেল ঝাল, ইলিশের ভাপা, এখানে ইলিশনামা শেষ হতে না হতেই দই ও তিন রকমের মিষ্টি। বাঙালিয়ানা কাকে বলে, বুঝতে অসুবিধা হয় না!
পেট ভরানো শুরুর আগে ছিল পৌষালী বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন ভরানো মাটির গান। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা গেল, ইলিশে গন্ধ যতদূর গিয়েছে তার থেকেও দূরে খাওয়ার লাইন। ততক্ষণে পুরোদমে আড্ডা শুরু করেছেন অপরাজিতা আঢ্য, বিশ্বনাথ বসুরা। দর্শকরা টিভির পর্দায় দেখা তাঁদের প্রিয় অভিনেতাদের চোখের সামনে দেখে আপ্লুত। সেই ভালো লাগা আরও বেড়ে গেল যখন মঞ্চে এলেন সৌরভ গাঙ্গুলি ও আবির চট্টোপাধ্যায়। এই মঞ্চে ওঠার আগে সৌরভ আবার পাকা রাঁধুনির মতো খুন্তি নাড়িয়ে ইলিশও ভেজেছেন। বলছিলেন বর্ষায় জমা জল পেরিয়ে স্কুলবেলায় বাড়ি ফেরার গল্প। আবির ‘ফরচুন’-এর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন। উপস্থিত ছিলেন আদানি গোষ্ঠির অন্যতম সিইও-এমডি অংশু মল্লিক। তারপর দূর্নিবারের গলায় ‘আমি বাংলায় গান গাই’ একসঙ্গে গাইতে শুরু করলেন প্রায় হাজার বাঙালি। আম বাংলার রান্নার স্বাদের মায়া কোথায় যেন বাংলা ভাষার অহংয়ের সঙ্গে মিশে গেল। বিকেলের প্লেটে ছিল বাংলার চপ! সঞ্চালনা করলেন রাজন্যা মিত্র, সাহেব চট্টোপাধ্যায় ও কুণাল। হাজির হয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসু, বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী সহ একাধিক বিশিষ্ট।
সবশেষে বাঙালির মুখে হাসি। রান্না প্রতিযোগিতায় প্রথম হলেন ই-মেল মারফত রেসিপি পাঠিয়ে অংশ নেওয়া কসবার বাসিন্দা তানিয়া মাইতি। দ্বিতীয় গড়িয়ার প্রুডেন্ট প্রাণা আবাসনের বাসিন্দা রূপা হালদার ভৌমিক ও তৃতীয় বাঘাযতীনের একতা হাইটসের বাসিন্দা তাপস কুমার বিশ্বাস।