• কেন্দ্রের বঞ্চনা, এক বছর ভাতা মিলছে না ৭৬ হাজার ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীর, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনে বকেয়া ৩ হাজার কোটি
    বর্তমান | ১১ আগস্ট ২০২৫
  • বিশ্বজিৎ দাস, কলকাতা: পুজোর আর বেশি দিন বাকি নেই। ক’দিনের মধ্যেই জমে উঠবে পুজোর বাজার। কেনাকাটার ধুম পড়ে যাবে। স্বাস্থ্যদপ্তরের জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন শাখার আওতাধীন ৭৬ হাজার চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর মুখে অবশ্য হাসি নেই! তাঁরা কেন্দ্রের বঞ্চনার শিকার। কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের (এনএইচএম) ৩ হাজার কোটি টাকা আটকে রেখেছে। ফলে এই বিপুল সংখ্যক কর্মীর ইনসেনটিভ দেওয়া যাচ্ছে না। অথচ রাজ্যের গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত এলাকায় স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম কাণ্ডারীর ভূমিকা পালন করেন এই কর্মীরা। তাঁরাই রাজ্যের ১০ হাজারের বেশি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিচালনা করেন। উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র—সর্বত্র মা ও শিশুর স্বাস্থ্য, সুগার-প্রেশার পরিমাপ, প্রাথমিকভাবে ক্যান্সার নির্ণয়, ডেঙ্গু ও মশাবাহিত রোগ দমনে বাড়ি বাড়ি অভিযান, অনলাইনে বড় হাসপাতালে ডাক্তার দেখানো সহ কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের যাবতীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তাঁদের। এঁদের মধ্যে আছেন কমিউনিটি হেলথ অফিসার (সিএইচও), হেলথ অ্যাসিন্ট্যান্ট (ফিমেল) বা এএনএম-১ এবং কমিউনিটি হেলথ অ্যাসিন্ট্যান্ট বা এএনএম-২ এবং আশাকর্মী।   

    স্বাস্থ্যভবন সূত্রের খবর, গত বছরের জুন থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত (১৩ মাস) তাঁদের ‘পারফরম্যান্স লিঙ্কড ইনসেনটিভ’ (পিএলআই) বকেয়া রয়েছে। এক-একজন কর্মীর ভাতা বাবদ প্রাপ্য ২৪-২৫ হাজার থেকে ৬৫-৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে সবথেকে বেশি সংখ্যায় আছেন আশাকর্মীরা। তাঁদের সংখ্যা ৫০ হাজার ৯৩৮। এর পরেই আছেন ১৫ হাজার ২৫০ জন প্রথম ও দ্বিতীয় এএনএম। সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলির পরিচালক তথা কমিউনিটি হেলথ অফিসারের সংখ্যা ৯ হাজার ৮৮১। এঁদের সিংহভাগই বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সিং কর্মী। ৪৫০ জন আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল অফিসারও আছেন সিএইচও তালিকায়। 

    দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৩ মাসে ৭৬ হাজার কর্মীর শুধু পিএলআই খাতেই ১৩০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। প্রতি তিন মাস অন্তর বকেয়া থেকে যাচ্ছে ৩১ কোটি টাকার বেশি। আশাকর্মীদের বকেয়ার পরিমাণ সর্বাধিক—প্রতি তিন মাসে প্রায় ১২ কোটি ৮৭ হাজার টাকা। প্রথম ও দ্বিতীয় এএনএমদের মোট বকেয়া ৫.৭৮ কোটি টাকা। সেখানে সিএইচওদের প্রতি তিন মাস অন্তর বকেয়া হচ্ছে ১২ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা। 

    কর্মী পিছু ধরলে, সবচেয়ে বেশি পিএলআই বাকি সিএইচওদের। মাসে ৫ হাজার করে ১৩ মাসে ৬৫ হাজার টাকা। তারপরেই আছেন প্রথম ও দ্বিতীয় এএনএমরা। এক-একজন আশাকর্মীর পিএলআই বাবদ ১৩ মাসের জন্য ১৩ হাজার টাকা বকেয়া। পশ্চিমবঙ্গ আশাকর্মী ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদিকা ইসমত আরা খাতুন বলেন, ‘১৩ মাসের পিএলআই ছাড়াও আমাদের চার মাসের উৎসাহ ভাতা বাকি। সে বাবদ আমরা পাই প্রায় ১২ হাজার টাকা। বাকি রয়েছে মোবাইলের খরচ বাবদ পাওনাও।’ স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘কেন্দ্র ৩ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে না। সেই জন্যই সমস্যা। তবে রাজ্য বাজেট থেকে ২০০ কোটি টাকা পেয়েছে দপ্তর। রাজ্যই মিটিয়ে দেবে টাকা। আশা করছি, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই ইনসেনটিভ পেয়ে যাবেন এনএইচএম কর্মীরা।’  
  • Link to this news (বর্তমান)