• মাঝরাতে দ্বারকেশ্বর নদে ভেঙে পড়ল রামকৃষ্ণ সেতুর একাংশ, বন্ধ ভারী যান চলাচল, আরামবাগে দুর্ভোগ
    বর্তমান | ১১ আগস্ট ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আরামবাগ: আশঙ্কা ছিলই। তাকে সত্যি করেই শনিবার মাঝরাতে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল আরামবাগের রামকৃষ্ণ সেতুর ফুটপাত সহ গার্ডওয়ালের একাংশ। রাতেই সেতুতে পুলিস মোতায়েন করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে ভিড়ও জমান। গার্ডরেল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয় গার্ডওয়ালের ভাঙা অংশ। রবিবার সকাল থেকেই সেতুতে যান নিয়ন্ত্রণ করে প্রশাসন। সেতুর আগে বসানো হয়েছে হাইট বার। ভারী যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে মাইকিং করে পুলিস। বাস সহ অন্যান্য যানগুলি একমুখী চলাচল করছে। তার জেরে সেতুর মুখে যানজটও হচ্ছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন চার-পাঁচটি জেলার বাসিন্দারা। পূর্তদপ্তরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার সহ একাধিক আধিকারিক এদিনই সেতুর অংশ পরিদর্শনে আসেন। দফায় দফায় স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরেও সেতুর সংস্কার হল না কেন? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। 

    পূর্তদপ্তরের আরামবাগ মহকুমার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার নিখিলেশ দে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সেতুর ভাঙা অংশ পরিদর্শন করেছে। দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। 

    পূর্তদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, রামকৃষ্ণ সেতু লম্বায় প্রায় ৩২৫ মিটার। চওড়া সাত মিটার। শনিবার রাতে পল্লিশ্রী থেকে কালীপুরের দিকে যাওয়ার সময় সেতুর মাঝামাঝি অংশে বাঁ দিকের গার্ডওয়াল ভেঙে যায়। প্রায় ১৫-১৬ মিটার অংশের কংক্রিট ভেঙে সেতুর নীচে পড়ে যায়। তাতেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে আরামবাগ মহকুমাজুড়ে। গোঘাটের বাসিন্দা বাপ্পাদিত্য রায় বলেন, শনিবার রাত ১২টা নাগাদ বাইক নিয়ে আরামবাগ থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। সেইসময় দেখি সেতুর গার্ডওয়াল ভেঙে রয়েছে। বিপজ্জনকভাবে ওই অবস্থাতেই যান চলাচল করছে। দ্রুত সেতুর সংস্কার প্রয়োজন। 

    উল্লেখ্য, মাস কয়েক আগে পূর্তদপ্তরের তরফে রামকৃষ্ণ সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। দু’বার সেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু, তারপরেও সেতুর সংস্কার হয়নি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দ্বারকেশ্বর নদের উপর সেতুটি ১৯৬৫ সালে তৈরি হয়। বর্তমানে তার বয়স প্রায় ৬০ বছর। আগের তুলনায় সেতুর ভারবহন ক্ষমতা কমেছে। ইতিমধ্যেই ব্রিজের দু’দিকে দুর্বল সেতুর বোর্ড দিয়েছে পূর্তদপ্তর। কিন্তু, তারপরেও সেতুর সংস্কার  না হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে। 

    উল্লেখ্য, রামকৃষ্ণ সেতুর উপর দিয়ে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান জেলার বহু ভারী যান নিত্যদিন চলাচল করে। কলকাতা যাতায়াত করতে এই সেতুই একমাত্র ভরসা। অভিযোগ, প্রতিদিন বহু ওভারলোডেড ভারী যানও এই সেতু দিয়ে চলাচল করে। কিন্তু, তা নিয়ন্ত্রণ করা হয় না। 

    আরামবাগের এসডিপিও সুপ্রভাত চক্রবর্তী বলেন, সেতুতে ভারী যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে কয়েক মাস আগেই আমরা সেখানে হাইট বার বসানোর জন্য প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছিলাম। তারসঙ্গে ওভারলোডেড যানের উপর নিয়মিত নজরদারিও চালানো হয়। 

    পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, সেতুর গার্ডওয়ালের একাংশ ভেঙে যাওয়ায় কলকাতামুখী ভারী যানগুলিকে গোঘাটের বেঙ্গাই হয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলার উচালন আমতলা দিয়ে আরামবাগে ঘোরানো হচ্ছে। বাঁকুড়া, মেদিনীপুরগামী যানগুলিকে ওই একই পথে ঘোরানোর নির্দেশ হয়েছে। তার জেরে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। ভোগান্তিও বাড়ছে। কবে সেতুর সংস্কার হবে, এখন সেই দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন বাসিন্দারা।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)