সরকারিভাবে মাইনে পেলেও যান না স্কুলে, শিক্ষকদের চেনেই না পড়ুয়ারা
বর্তমান | ১১ আগস্ট ২০২৫
পিনাকী ধোলে পুরুলিয়া
সরকারের খাতায়-কলমে সবাই শিক্ষক। মাসের শেষে মোটা মাইনে। অথচ, স্কুলের পড়ুয়ারা সেই শিক্ষকের নাম শুনলে আকাশ থেকে পড়ে! বলে—‘মাস্টার মশাইকে তো দেখিনি কখনও।’ তবে, কেউই ‘ভূতুড়ে’ নামধারী নন। সকলেই সঠিক। বেঠিক শুধু স্কুলে আসার সময় নেই কারও। আসলে, ওঁদের কেউ কেউ রাজ্যের প্রভাবশালী দলের অঞ্চল, ব্লক কিংবা জেলা সংগঠনের পদাধিকারী। কেউ আবার জনপ্রতিনিধি। ‘জনসেবা’ করতেই দিন কাবার! স্কুলে এসে পড়ানোর সময় কোথায়? এমনই অভিযোগ ঘিরে এখন সরগরম পুরুলিয়া। প্রশ্ন উঠেছে, শাসকদলের নেতা হলেই কি সব মাফ? দিনের পর দিন স্কুলে না এসেও বেতন তোলা যায়? তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান রাজীব লোচন সরেন অবশ্য বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’ জেলা শিক্ষাদপ্তরের এক আধিকারিক বিষয়টি শুনে তাজ্জব। তিনিও জানিয়েছেন, খোঁজ নিয়ে দেখব।
এর আগে শাসক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ‘ডামি শিক্ষক’ রাখার অভিযোগ উঠেছিল পূর্ব মেদিনীপুরে। এবার স্কুল কামাই করে সবেতন ‘জনসেবা’র অভিযোগ উঠল। একজন বা দু’জন নয়, একাধিক নেতাই অভিযুক্ত। বাঘমুণ্ডির দাপুটে এক যুব নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির পদাধিকারী। তিনি ওই ব্লকেরই একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। নিয়মিত বেতন পান। যদিও পড়ুয়ারা তাঁকে চেনেই না! তিনি সারাক্ষণ থাকেন পঞ্চায়েত সমিতিতেই। মাঝেমাঝে স্কুলে গিয়ে হাজিরা খাতায় সইটা করে আসেন। ওই একই পদে রয়েছেন রঘুনাথপুর-১ এবং রঘুনাথপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির দুই জনপ্রতিনিধিও। দু’জনেই প্রাথমিকের শিক্ষক। তাঁদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ, স্কুলে ঠিকমতো আসেন না। নির্ধারিত সময়ে বেতন ঢুকে যায় দু’জনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। রঘুনাথপুর-২ ব্লকের তৃণমূলের এক দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা আবার প্রভাব খাটিয়ে বাড়ির কাছের স্কুলে বদলি নিয়ে চলে আসেন। তা সত্ত্বেও তিনি খুব একটা স্কুলমুখো হন না বলে এলাকায় গুঞ্জন। তালিকায় রয়েছে সাঁতুড়ির এক যুব নেতা, হুড়া ব্লক তৃণমূলের এক পদাধিকারী তথা প্রাথমিকের শিক্ষকও।
পুরুলিয়া জেলা পরিষদের একাধিক সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন রঘুনাথপুর মহকুমা থেকে। যাঁদের মধ্যে অনেকেই প্রাথমিক কিংবা হাইস্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা। তাঁরাও অভিযোগের তিরে বিদ্ধ। বেতন নেওয়ার জন্য কেবল সই করতে দু’একবার স্কুলে যান সকলেই। ছাত্র পড়ানোর সময় নেই কারও। আবার স্কুলে না গিয়ে বেতন নেওয়ার তালিকায় রয়েছেন মন্ত্রী কিংবা জেলা তৃণমূলের শীর্ষ পদাধিকারীদের পরিবারের সদস্যরাও। বিধানসভায় হেরে যাওয়া তৃণমূলের প্রার্থীরাও কার্যত সবেতন ‘ছুটি’ কাটাচ্ছেন বলে অভিযোগ। অনেকে আবার দু’জায়গা থেকেই বেতন নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এমনিতেই দীর্ঘ বছর ধরে সরকারি স্কুলে নিয়োগ নেই। শিক্ষকের সংখ্যা কমতে কমতে তলানিতে ঠেকেছে। তার উপর দলীয় পদাধিকারী কিংবা জন প্রতিনিধিদের এই আচরণ শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও অবনতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে মত স্থানীয় বাসিন্দাদের। তবে কেউই প্রতিবাদ করার সাহস পান না। স্কুল শিক্ষাদপ্তরের কর্তারাও খোঁজ নিয়ে দেখেন না। এসএফআইয়ের রাজ্য সহ সভাপতি সুব্রত মাহাত বলেন, ‘পুরুলিয়ায় এমন শিক্ষক রয়েছেন যিনি পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি, কিংবা ব্লক সভাপতি। স্কুলে না গিয়ে সারাক্ষণ দলের কাজ করছেন। বেতন নিচ্ছেন সরকারি কোষাগার থেকে।