বোমা ছোড়ার পর ৪২ কিমি ছুটেছিলেন ক্ষুদিরাম! মুজফ্ফরপুরের সেই পথে দৌড়লেন মেদিনীপুরের অরিন্দম
বর্তমান | ১১ আগস্ট ২০২৫
রাজদীপ গোস্বামী মেদিনীপুর
১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল। ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছুড়েছিলেন বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী। কিন্তু আঘাত লাগে ব্যারিস্টার কেনেডির পরিবারের গাড়িতে। ওইদিন ঘটনাস্থল থেকে পালাতে মুজফ্ফরপুর থেকে পুসা রোড স্টেশন পর্যন্ত প্রায় ৪২ কিলোমিটার দৌড়েছিলেন ক্ষুদিরাম। তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। ধরা পড়ে গিয়েছিলেন। সেই ঐতিহাসিক পথকেই স্মরণে রাখতে শনিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রায় ৫৪ কিলোমিটার দৌড়লেন মেদিনীপুরের গবেষক ও লেখক অরিন্দম ভৌমিক। তাঁর সাফল্যে গর্বিত শহরবাসী।
জানা গিয়েছে, শনিবার শহিদ ক্ষুদিরাম বসু স্মারক স্থল থেকে অরিন্দমবাবু যাত্রা শুরু করেন। মুজফ্ফরপুর থেকে পুসা রোডের মধ্যে থাকা ছ’টি স্টেশন তিনি অতিক্রম করেন। প্রতিটি রেল স্টেশনে তিনি বৃক্ষ রোপণ করেছেন। অরিন্দমবাবুকে দেখতে ভিড়ও জমান সাধারণ মানুষ। রেল লাইন বরাবর সড়ক পথে দৌড়েছেন তিনি। এরফলে অতিরিক্ত কয়েক কিলোমিটার বাড়তি ঘুরতে হয়েছে তাঁকে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, আজ সোমবার ক্ষুদিরাম বসুর আত্মবলিদান দিবস। তার আগে নয়া ইতিহাস রচনা করলেন অরিন্দমবাবু।
এদিন অরিন্দমবাবু বলেন, ‘বহু দিনের স্বপ্ন পূরণ হল। ক্ষুদিরাম বসু দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন। তা দেশবাসী কোনও দিন ভুলবেনা। ক্ষুদিরাম বসুকে নিয়ে মানুষের আবেগ দেখে আমি আপ্লুত। আগামী প্রজন্মের ছেলে মেয়েদেরকে তাঁর কৃতিত্বের কথা জানাতেই হবে। মুজফ্ফরপুর থেকে পুসা রোড স্টেশনের মধ্যে ৬ টি স্টেশন পড়ে। প্রতিটি স্টেশনেই আমরা ক্ষুদিরামের জন্মভিটা থেকে আনা মাটি ও সিদ্ধেশ্বরী কালী মায়ের চরণামৃত দিয়ে বৃক্ষরোপণ করেছি। কারণ, ক্ষুদিরাম বসুর শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী তিনি একবার মেদিনীপুরের মাটি স্পর্শ করতে চেয়েছিলেন এবং সিদ্ধেশ্বরী কালী মায়ের চরণামৃত পান করতে চেয়েছিলেন।’ স্থানীয় ইতিহাসবিদদের মতে, ৩০ এপ্রিল ঘড়ির কাটায় তখন রাত ৮টা ৩০ মিনিট। সেই সময় ইংরেজদের গাড়িতে বোমা ছুড়ে পালিয়েছিলেন মেদিনীপুরের ভূমিপুত্র ক্ষুদিরাম। পরে ১১ আগস্ট তাঁকে ফাঁসি দেয় তৎকালীন ইংরেজ সরকার। ফাঁসি দেওয়ার আগে কয়েকটি শেষ ইচ্ছের কথা জানিয়েছিলেন ক্ষুদিরাম। তার মধ্যে প্রথম ইচ্ছে ছিল, তিনি একবার তাঁর জন্মভূমি মেদিনীপুরকে স্পর্শ করবেন। দ্বিতীয় ইচ্ছে ছিল, দিদি ও ভাগ্নের সঙ্গে দেখা করবেন। পাশাপাশি সিদ্ধেশ্বরী কালীমায়ের পাদোদক (চরণামৃত) পান করারও ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। সেই কাহিনী আজও ইতিহাসের পাতায় লেখা রয়েছে। ছোট বেলায় এই কাহিনী পড়েই বড় হয়েছেন মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা অরিন্দমবাবু। একসময় মোটা বেতনের চাকরি করলেও পরিবর্তী সময়ে তিনি চাকরি ছেড়ে বাড়ি ফিরে আসেন। শুধু ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করার টানে। বর্তমানে তিনি মেদিনীপুরের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করছেন। জানা গিয়েছে, বিহারের মুজফ্ফরপুর পৌঁছে সকালেই তিনি দৌড়তে শুরু করেন। রাস্তায় বিভিন্ন এলাকার মানুষ অরিন্দমবাবুকে সংবর্ধনা জানান। মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা রাহুল দাস বলেন, ‘ভালোবাসা না থাকলে এত দুর পর্যন্ত দৌড়নো সম্ভব নয়। উনি মেদিনীপুরের গর্ব। উনি ক্ষুদিরাম বসুর ইচ্ছে পূরণ করছেন।’ নিজস্ব চিত্র