নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: শনিবার রাতে পাঁশকুড়া থানার সিদ্ধায় জাতীয় সড়কে বেপরোয়া লরির ধাক্কায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের নাম শেখ আমিরুদ্দিন(৬৩), আনসার পাখিরা(৫১) ও মাহিবুল শেখ(৪৭)। ওইদিন রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ খড়্গপুরগামী বেপরোয়া লরিটি রাস্তার ধারে পরপর তিনটি দোকান ভেঙে ঢুকে যায়। দুর্ঘটনায় স্থানীয় তিনজনের মৃত্যু হয়। এছাড়া মদন মাইতি, অসিত দাস ও মিলন মথুরা নামে তিনজন গুরুতর জখম হয়েছেন। মদনবাবু আশঙ্কাজনক অবস্থায় তমলুক মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন। বাকি দু’জন তমলুক শহরে দু’টি নার্সিংহোমে ভর্তি রয়েছেন। রবিবার তমলুক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনজনের দেহের ময়নাতদন্ত হয়। ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
তমলুকের মহকুমা পুলিস আধিকারিক বলেন, চালক ঘুমিয়ে পড়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে। লরিচালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মদন মাইতির চায়ের দোকানের সামনে অনেকেই দাঁড়িয়েছিলেন। আচমকা লরিটি তাঁদের চাপা দেয়। তাঁরা নিরাপদ দূরত্বে সরে যাওয়ার সুযোগও পাননি।
দুর্ঘটনার পর রাত সাড়ে ৮টা থেকে পৌনে ১১টা পর্যন্ত ঘাতক লরিটি অকুস্থলেই ছিল। পরে ক্রেন এনে লরিটি তুলে পাঁশকুড়া থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। লরির চালককে গ্রেপ্তার করা হলেও ভিড়ের সুযোগে খালাসি চম্পট দেয়।
দুর্ঘটনার পর জাতীয় সড়কের খড়্গপুরমুখী লেনে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দেউলিয়া থেকে সিদ্ধা পর্যন্ত সড়কে যানজট দেখা দেয়। লরিটি তুলে পাঁশকুড়া থানায় নিয়ে যাওয়ার পর রাত সওয়া ১১টা নাগাদ উত্তেজিত জনতা জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। ট্রাফিক সিগন্যাল বসানো ও পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিসের দাবিতে অবরোধ শুরু হয়। অতিরিক্ত পুলিস সুপার(হেডকোয়ার্টার) নিখিল নির্মল, অতিরিক্ত পুলিস সুপার(ট্রাফিক) শ্যামলকুমার মণ্ডল, তমলুকের মহকুমা পুলিস আধিকারিক আফজল আব্রার সহ অন্যরা সেখানে পৌঁছন। পাঁশকুড়া, কোলাঘাট, তমলুক থানার বিশাল পুলিসবাহিনীও ঘটনাস্থলে আসে। পুলিসের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনায় জখম ও নিহতরা ভাঙাচোরা দোকান ও লরির তলায় আটকে ছিলেন। তাঁদের উদ্ধার করতে পুলিসকে হিমশিম খেতে হয়। স্থানীয়রা উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সংজ্ঞাহীন অবস্থায় প্রথমে পাঁচজনকে বের করা হয়। তাঁদের পাঁশকুড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক দু’জনকে মৃত ঘোষণা করেন। ক্রেন দিয়ে লরিটি টেনে তোলা হয়। এরপর আরও একটি দেহ উদ্ধার হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল সামাদ বলেন, মদন মাইতি আমাদের বাড়িতে কাজকর্ম করেন। সন্ধ্যার পর চায়ের দোকান চালান। প্রতিদিনের মতো শনিবারও সেই দোকানে গিয়েছিলেন শেখ আমিরুদ্দিন, আনসার, মাহিবুল সহ আরও অনেকে। খড়্গপুরগামী লরিটি রাস্তা থেকে হঠাৎ দোকানের দিকে চলে আসে। তাঁরা কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই বেপরোয়া লরিটি পর পর তিনটি দোকান ভেঙে ঢুকে যায়। একসঙ্গে তিনজনের প্রাণ চলে গেল।(গভীর রাতে তমলুক হাসপাতালে আনা হয়েছে পাঁশকুড়ায় ট্রাক দুর্ঘটনায় জখমদের। নিজস্ব চিত্র)