বাটপাড়ি! নকল সোনা বন্ধক রেখে স্বর্ণব্যবসায়ীকেই ধোঁকা! পাঁশকুড়ায় সুদের কারবারির ২০ লক্ষ টাকা লুট
বর্তমান | ১১ আগস্ট ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: মহাজনী কারবারে ২০লক্ষ টাকা প্রতারণার শিকার হলেন পাঁশকুড়ার স্বর্ণ ব্যবসায়ী। নকল সোনা ও ভোটার কার্ড জমা রেখে ওই টাকা ধার নিয়েছিল রাম সিং নামে এক ব্যক্তি। অভিযুক্ত নিজেকে হরিয়ানার বাসিন্দা হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল। পাশাপাশি পাঁশকুড়ার মুড়াইলে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকে বলেও স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে জানিয়েছিল। সেইমতো নিজের একটি ভোটার কার্ডের কপি ও নকল সোনা জমা রেখে গত ১৬মে ওই টাকা ধার নিয়েছিল। তারপর থেকে অভিযুক্তের ফোন সুইচড অফ। তাতেই খটকা লাগে স্বর্ণ ব্যবসায়ী সন্তোষ সামন্তের। তিনি মুড়াইলে গিয়ে ওই ব্যক্তি কোথায় ভাড়ায় থাকে সেই ঠিকানা খোঁজার চেষ্টা করেন। কিন্তু, এরকম কোনও ঠিকানাও পাননি। প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে ৭আগস্ট সন্তোষবাবু পাঁশকুড়া থানায় এফআইআর করেছেন। তার ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিস। তদন্তকারী অফিসার আমির খান বলেন, সোনা জমা রেখে টাকা ধার দেওয়ার কোনও এগ্রিমেন্ট হয়নি। লাইসেন্স ছাড়া এভাবে বন্ধকী ঋণ দেওয়ার নিয়মও নেই। সেদিক থেকে স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কাজকর্ম নিয়েও প্রশ্ন আছে। আমরা তদন্ত শুরু করেছি।
পাঁশকুড়া থানার কানাসি বৃন্দাবন গ্রামের বাসিন্দা সন্তোষ সামন্ত পেশায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী। পাঁশকুড়ার বাহারগ্রামের বাংলামোড়ে তাঁর সোনার দোকান রয়েছে। সেখানে সোনা জমা রেখে বন্ধকী ঋণ দিয়েছিলেন। রাম সিং পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি বিপুল পরিমাণ সোনা এনে ২০লক্ষ টাকা ঋণ চায়। সঙ্গে ভোটার কার্ডও ছিল। সেসব জমা রেখে ওই স্বর্ণ ব্যবসায়ী তাঁকে ২০লক্ষ টাকা ঋণ দেন। ১৬মে ওই লেনদেনের পর থেকেই রাম উধাও। ফোন নম্বরেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তাঁর মোবাইলে টাওয়ার লোকেশনও পাওয়ার চেষ্টা করেন ওই স্বর্ণ ব্যবসায়ী। কিন্তু, সিমকার্ডের অস্তিত্ব না থাকায় সেটাও পাওয়া যাচ্ছিল না। বাধ্য হয়ে পাঁশকুড়া থানায় এফআইআর করেন। সন্তোষবাবু বলেন, আগে দু’বার অল্প সোনা রেখে টাকা নিয়েছিল। সেকারণে সন্দেহ হয়নি। এভাবে ঠকে যাব ভাবিনি। এক মাস বাদে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, ওই ব্যক্তির মোবাইল বন্ধ।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নানাপ্রান্তে মহাজনী কারবার ব্যাপকভাবে চলছে। সোনা, জমির দলিল প্রভৃতি বন্ধক রেখে মোটা সুদের বিনিময়ে টাকা ধার দেওয়া হয়। সুদের কারবার এই জেলার একটা বড় অংশের মানুষের জীবিকা। আর এই লেনদেনের জটিল অঙ্ক নিয়ে নিত্য ঝামেলা চলে। অপহরণ, ঘরছাড়া এবং হামলা প্রায়ই ঘটে। ২০২৪সালে জানুয়ারি মাসে সুদের কারবারে বলি হন চণ্ডীপুর থানার আটাত্তর গ্রামের বাসিন্দা গৌতম জানা। স্থানীয় এক মুদি দোকানদারকে তিন লক্ষ টাকা ধার দিয়েছিলেন। সেই টাকা আনতে গিয়ে বাদানুবাদে খুন হন। ওই গ্রামের আসরফ আলি খান পাওনাদারের তিন লক্ষ টাকা শোধ করতে না পেরে অপহৃত হয়েছিলেন।
কাঁথি-১ ব্লকের নয়াপুট পঞ্চায়েতের অধীন ফতেপুর গ্রামের বাসিন্দা রাখহরি দাস মহাজনের কাছ থেকে মাসিক ১০শতাংশ সুদে টাকা ধার নিয়ে ছোট পিকআপ ভ্যান কিনেছিলেন। ঠিকমতো রোজগার না হওয়ায় সুদ মেটাতে পারেননি। সুদখোর মহাজনের লোকজন এসে সেই গাড়ি তুলে নিয়ে চলে গিয়েছে। বাস্তুজমি লিখে না দেওয়ায় বাড়ি ভেঙে মাটি তুলে নিয়েছে মহাজন। ঘরবাড়ি হারিয়ে দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামছাড়া হয়ে গিয়েছেন রাখহরি। - প্রতীকী চিত্র