নাবালিকা গর্ভবতী হলেই শ্রীঘরে স্বামী, সিদ্ধান্ত জেলা স্বাস্থ্যদপ্তরের
বর্তমান | ১১ আগস্ট ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: শুক্রবার গভীর রাতে কন্যাসন্তান প্রসব করে আসানসোল জেলা হাসপাতাল থেকে পালানোর সময়ে ধরা পড়ে যান এক প্রসূতি। তদন্তে উঠে এসেছে, ওই প্রসূতি নাবালিকা ও কুমারী মা। নাবালিকা ও কুমারীদের মা হওয়ার ঘটনা নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্যদপ্তর। মূলত ১৯ বছর বয়সের মধ্যে কোনও মহিলার প্রসব হলে, তাঁকে নাবালিকা হিসেবেই ধরা হয়। ডাক্তারি ভাষায় তাঁদের বলা হয় ‘টিনএজার মাদার’।
গত বছর পশ্চিম বর্ধমান জেলায় ১৩৫০জন টিনএজার মা হয়েছেন। এই পরিসংখ্যানে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে দুর্গাপুর। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত প্রসূতি মায়েদের নিয়ে স্বাস্থ্যদপ্তরে যে রিপোর্ট এসেছে, তা চোখ কপালে তুলবে। গত তিন মাসে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ৩৮০জন নতুন প্রসূতির নাম নথিভুক্ত হয়েছে। তারমধ্যে ৫২জনই টিনএজার। অর্থাৎ, মোট প্রসূতি মায়ের ১৪ শতাংশই টিনএজার। দুর্গাপুর ফরিদপুর ব্লকে মোট ৪৪২জন প্রসূতি মায়ের নাম নথিভুক্ত হয়েছে। তার মধ্যে ৫০জনের বয়স ১৯ বছরের মধ্যে। অর্থাৎ, তাঁদের মধ্যে ১১ শতাংশই টিনএজার। দুর্গাপুর পুরসভায় জমা পড়া তালিকায় দেখা গিয়েছে, তিন মাসে নতুন প্রসূতি মায়ের সংখ্যা ১৩৯৩জন। তার মধ্যে ১০৭জনই টিনএজার মাদার। দুর্গাপুরের এহেন পরিসংখ্যান রীতিমতো মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্যদপ্তরের। যেভাবে নাবালিকারা গর্ভবতী হচ্ছে, তাতে তাদের স্বাস্থ্যের উপর ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের ‘এডুকেশন হাব’ বলে পরিচিত দুর্গাপুর শহরেই একশ্রেণির মেয়ের এমন পরিণতি কেন? জানা গিয়েছে, স্বাস্থ্যদপ্তর এর পিছনে কয়েকটি কারণ খুঁজে পেয়েছে। অল্পবয়সে যারা গর্ভবতী হয়েছে, তাদের একটা বড় অংশ প্রেমের টানে ঘর থেকে পালিয়েছিল। সেই সময়েই গর্ভবতী হয়ে পরবর্তীতে বাড়ি ফিরেছে। আবার, কিছু এলাকায় এখনও ভালো পাত্রের সন্ধান পেলে বয়সের কথা বিবেচনা না করেই নাবালিকার বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তারাও অচিরেই গর্ভবতী হয়ে পড়ছে। আধুনিক শহর দুর্গাপুর বিনোদনের জন্য পরিচিত হয়ে উঠেছে। হোটেলের রুমে অবাধ মেলামেশার সুযোগকেও এক্ষেত্রে অনেকে দায়ী করেছেন। দুর্গাপুর পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, মুখ্যমন্ত্রী রূপশ্রী, কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্প করেছেন। আর্থিক সমস্যার জন্য এই ঘটনা হওয়া উচিত নয়। আমরা পুরসভার পক্ষ থেকেই বিষয়টি নিয়ে সচেতন করব।
স্বাস্থ্যদপ্তরের হাতে আসা চলতি অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, তিনজন এমন প্রসূতি মা রয়েছে যাদের বয়স ১৫বছরের কম। এই বয়সে গর্ভধারণ করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এবার এর বিরুদ্ধে কার্যত একযোগে যুদ্ধ ঘোষণা করতে চলেছে স্বাস্থ্যদপ্তর ও পুলিস-প্রশাসন। জানা গিয়েছে, নাবালিকা অবস্থায় গর্ভবতী হলে তার স্বামীকেও গ্রেপ্তার করা হবে। এমনকী, গ্রেপ্তার হবেন নাবালিকার শ্বশুর-শাশুড়িও।
জেলা মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক শেখ মহম্মদ ইউনুস বলেন, গত বছর টিনএজার বয়সে মা হওয়ার ঘটনার পরিসংখ্যান ছিল সাত শতাংশ। চলতি অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সেই শতাংশ পাঁচে নেমেছে। কিন্তু, দুর্গাপুর এলাকায় এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। নতুন আইন অনুযায়ী নাবালিকা গর্ভবতী হলে তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হবে।