নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: বিধ্বংসী তিস্তা! পাহাড়ে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে বসিয়েছে থাবা। আর সমতলে ছ’টি গ্রাম দখল করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে রবিবার ফের রেনকার্টের হদিশ মিলেছে তিস্তা নদীর বাঁধে। সমগ্র পরিস্থিতি নিয়ে পাহাড় ও সমতলের বাসিন্দারা রীতিমতো আতঙ্কিত। এদিকে, রবিবার মাত্র ১৫ মিনিটের বৃষ্টিতে শিলিগুড়ি শহরের বেশকিছু জায়গায় জল জমেছে। যারমধ্যে হাতপাতল মোড়, বয়েজ স্কুল চত্বর, শিশুউদ্যান মোড় উল্লেখযোগ্য। এরজেরে চরম ভোগান্তির শিকার হন নাগরিকরা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে পাম্পসেট নামিয়ে জলসেচ করা হয়।
তিস্তার উৎপত্তিস্থল সিকিম পাহাড়। সেখান থেকে কালিম্পং, জলপাইগুড়ি ও মেখলিগঞ্জ হয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পাহাড়ে বৃষ্টির পর তিস্তার জলস্তর বাড়ছে। জল নামার সময় কালিম্পংয়ে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক ধসে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে শ্বেতীঝোরা ও ২৯ মাইলে রাস্তার বিশাল অংশ চাপা পড়েছে তিস্তার গর্ভে। শ্বেতীঝোরায় পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি করা হলেও ২৯ মাইলে সেই কাজ এখনও শেষ হয়নি। তাই সংশ্লিষ্ট রাস্তা দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করেছে এনএইচআইডিসিএল।
প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের একদিকে তিস্তা। আর একদিকে পাহাড়। তিস্তার জলস্তর নামতে শুরু করলেই নদীর দিকে রাস্তার অংশ ধসে পড়ছে। এর মোকাবিলা করার চেষ্টা চলছে।
এর বাইরে সংশ্লিষ্ট জাতীয় সড়কের ২০ মাইলে মাঝেমধ্যেই পাহাড়ের চূড়া থেকে খসে পড়ছে পাথর। কালিম্পংয়ের বিটি রোডে গাছ পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিদ্যুতের তার। পুজোর মুখে সমগ্র পরিস্থিতি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের আশঙ্কা, জাতীয় সড়কের এমন দশা অব্যাহত থাকলে পর্যটন ব্যবসা মার খাবে।
এদিকে, মেখলিগঞ্জ থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত তিস্তা নদীর অসংরক্ষিত এলাকায় হলুদ সঙ্কেত জারি হয়েছে। এই অবস্থায় ক্রান্তি ব্লকের মাস্টারপাড়া, কেরানিপাড়া, বাসুসুব্বা ও পূর্ব সাঙ্গাপাড়া এখনও জলমগ্ন। ভেলায় সেখানকার বাসিন্দারা যাতায়াত করছেন। হলদিবাড়িতে বিবিগঞ্জ ও ঝাড়সিংহেশ্বর গ্রামের অবস্থা একই। সেচদপ্তরের এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, দু’বছর আগে সিকিমে হ্রদ বিপর্যয়ের পর তিস্তার গতিপথে পরিবর্তন হয়েছে। অনেক জায়গায় তিস্তার গর্ভ উঁচু হয়ে নাব্যতা কমে গিয়েছে। ফলে অসংরক্ষিত ওই গ্রামগুলি প্লাবিত হয়েছে। নদীর জলও দ্রুত নামছে না।
রবিবার তিস্তা বাঁধের একাধিক জায়গায় রেনকার্ট দেখা গিয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের পাহাড়পুরে জেটিপি বাঁধে ৮০ মিটার অংশে, বিবেকানন্দপল্লিতে বাঁধের ৬০ মিটার অংশে এবং রাজগঞ্জের মান্দাদারিতে ৮০মিটার অংশে একাধিক রেনকার্ট দেখা দিয়েছে। অর্থাৎ বৃষ্টির জেরে বাঁধের মাটি ধসেছে। এনিয়ে তিস্তার বাঁধ সংলগ্ন গ্রামের বাসিন্দারা আতঙ্কিত। সেচদপ্তর উত্তর-পূর্ব বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক অবশ্য বলেন, এনিয়ে ভয়ের কিছু নেই। ইতিমধ্যে রেনকার্টগুলি মেরামতির কাজে হাত দেওয়া হয়েছে। চলতি বর্ষার মরশুমে এধরনের বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে।