পুজোর আনন্দটাই মাটি হতে বসেছে! কচিকাঁচাদের নিয়ে কয়েকটা দিন আনন্দ করার আশা ধীরে ধীরে মুছে যেতে বসেছে গঙ্গারামপুরের হস্তচালিত তাঁতিদের পরিবারে।
মাস দেড়েক বাকি পুজোর। অথচ গঙ্গারামপুরের তাঁতিদের কাছে আসছে না শাড়ি তৈরির বরাত। জেলা ও বাইরের মহাজনেরা পুজোর কাপড় তৈরির জন্য এখনও সেভাবে বরাত দিচ্ছেন না তাঁদের। তাঁতিদের দাবি, জেলার ঐতিহ্যবাহী হস্তচালিত তাঁতের শাড়ির কদর কমতে শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিতে তাঁতিরা সুতো কিনে কাপড় তৈরি করে রাখার কথা ভাবলেও বিক্রির অনিশ্চয়তার জন্য অনেকে পিছিয়ে এসেছেন। কারণ, বিক্রি না হলে বাড়তি লোকসানের আশঙ্কা থাকবে। তাঁতিদের একাংশের অভিযোগ, হস্তচালিত তাঁতের শাড়ির ডিজাইন পাওয়ারলুমে চলে আসছে। যন্ত্রের উত্পাদন ক্ষমতা বেশি বলে খরচও অনেকটা কম হয়। এই প্রতিযোগিতায় ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছেন জেলার হস্তচালিত তাঁতশিল্পীরা। তাঁদের অভিযোগ, টাঙ্গাইলের শাড়িতে কিছু বুটিক করে জামদানি বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। জামদানি কয়েক ধরনের হয়। যেমন সুতি, হাফ সিল্ক, সিল্ক জামদানি। হাতের বুননের জামদানিই আসল। যেমন আরামদায়ক, টেকেও অনেক বছর। অন্যদিকে, জামদানির ডিজাইন নকল করে পলিয়েস্টার সুতোয় বুনে অল্প দামে বিক্রি করা হচ্ছে। উত্পল সরকারের কথায় ফুটে উঠল আক্ষেপ। বললেন, কয়েক বছর আগেও পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অন্যরকম ছিল। পুজোর কয়েক মাস আগে থেকেই আমাদের ব্যস্ততা শুরু হতো। এখন আর সেসবের বালাই নেই। পেট চালানোর জন্য বাধ্য হয়ে মুদির দোকান করতে হয়েছে। এক সময় পুজোয় জামদানি, টাঙ্গাইল ও ১০০ সুতো, বুটিক শাড়ির ব্যাপক চাহিদা থাকত। এখন পুজোর আগে সেভাবে কাজ না থাকলেও সরকারিভাবে ডিজাস্টার শাড়ি তৈরির বরাত পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ শিল্পীদের। তন্তুবায় সংগঠনের সভাপতি উৎপল গোস্বামী জানান, বর্তমানে গঙ্গারামপুরের তাঁতিদের শোচনীয় অবস্থা। এক শ্রেণির তাঁতিরা নবদ্বীপ, ফুলিয়ার মহাজনদের সঙ্গে সরাসরি কাজ করেন। বাকি তাঁতিরা ছোটখাট অর্ডারের উপরই নির্ভরশীল। বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি অর্ডার সেভাবে পান না তাঁরা। পুজোর আগেও সেভাবে কাজ নেই এবার। টেক্সটাইল হাব হওয়ায় বিভিন্ন রাজ্য থেকে কম দামে শাড়ি চলে আসছে দোকানে। ফলে হস্তচালিত তাঁতের শাড়ির চাহিদা নিম্নমুখী। সেজন্য তাঁতিদের অবস্থা দিনদিন খারাপ হচ্ছে। গঙ্গারামপুর মহকুমা হ্যান্ডলুম দফতরের আধিকারিক জয় রায় বলেন, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তাঁতিদের সেমি পাওয়ারলুম দেওয়া হয়েছে। তাঁতিদের উন্নতির জন্য আমরা কাজ করে চলেছি। তাঁতিরা একটু আধুনিক কাজ করলে বাজারে তাঁদের পণ্যের চাহিদা বাড়বে। প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও তাঁতিরা হ্যান্ডলুম আঁকড়ে রয়েছেন। ব্যবসা কমার এটাও একটা বড় কারণ।