অতুলচন্দ্র নাগ, ডোমকল: একেই বোধহয় বলে প্রকৃত বন্ধুত্ব। রাজদ্বার থেকে শ্মশান ? নিঃস্বার্থ সঙ্গ দেয় যে, সে-ই তো প্রকৃত বন্ধু। আর সেই বন্ধুর জন্য জান কবুল করল ডোমকলের কিশোর। নদীতে ডুবতে থাকা বন্ধুদের বাঁচাতে গিয়ে নিজেই নদীর জলে তলিয়ে প্রাণ দিল। স্থানীয়দের প্রায় ঘন্টা দেড়েকের চেষ্টায় নদী থেকে মারুফ মিঞা নামে ওই কিশোরের নিথর দেহ উদ্ধার হয়। রবিবার দুপুরে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে ডোমকল পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বঘারপুর রমনা এলাকার শিয়ালমারী নদীতে। এদিনের ঘটনায় নদীতে তলিয়ে যেতে থাকা অসুস্থ এক কিশোরকে উদ্ধার করে ডোমকল মহকুমা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রবিবারে দুপুরে এই দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ডোমকল থানার আইসি পার্থসারথী মজুমদারের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী পৌঁছয় ঘটনাস্থলে। পাড়ে দাঁড়িয়ে আইসি গ্রামবাসীদের নদীতে জাল ফেলে নিখোঁজ মারুফের খোঁজ করতে পরামর্শ দেন। স্থানীয়রা জানান, ওটা নামেই নদী, আসলে বৃষ্টির জলে পুষ্ট। তাতে তেমন স্রোত নেই। সেই জমা জলেই রবিবার দুপুরের দিকে চার বন্ধু স্নান করতে নেমেছিল। তারপরই ঘটে বিপত্তি। ডোমকল পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর সেলিম রেজা জানান, “চার বন্ধুর মধ্যে মারুফ মিঞাই একমাত্র সাঁতার জানত। সে সাঁতরে গভীর জলে চলে যায়। বাকি তিন বন্ধুও ওই পরিমাণ জলে পৌঁছে হাবুডুবু খেতে থাকে। ওই সময় দু’জনকে টেনে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেওয়ার পর তৃতীয়জনকে আনতে গিয়ে নিজেই নদীতে তলিয়ে যায় মারুফ। উদ্ধার হওয়া দুই বন্ধুর চিৎকারে কাছেই পাট ছাড়াতে থাকা লোকজন ছুটে গিয়ে উদ্ধার করেন একজনকে। তার নাম রামিজ শেখ। ততক্ষণে জল খেয়ে রামিজের অবস্থায় শোচনীয় হয়ে গিয়েছিল। ওই অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে দ্রুত ডোমকল মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কিছুক্ষণের চিকিৎসায় সে স্বাভাবিক হয়। কিন্তু মারুফকে বাঁচানো যায়নি।”
মৃতের মা নিরূপা বিবি বলেন, “নিষেধ করলেও ছেলে শুনত না। বন্ধুদের ডাকে নদীতে স্নান করতে চলে যেত। আজও গিয়েছিল। তার কিছুক্ষণ পরেই জানতে পারি, ছেলে ডুবে গিয়েছে। ছুটে গিয়ে আর ছেলেকে পাইনি গো। পরে লোকেরা মৃতদেহ পেয়েছে।” গত ৬ আগস্ট, বুধবার দুপুরের দিকে রানিনগরের কালীনগর মীরপাড়ায় ওই শিয়ালমারী নদীর উপর তৈরি কালভার্টে বসে মাছমারা দেখতে গিয়ে নদীতে পড়ে মৃত্যু হয়েছিল ১৯ বছরের এক সদ্য তরুণের। এবার বন্ধুদের রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ দিল ১৩ বছরের কিশোর।