বেহাল দশায় ডিভিসি সেতু, একটানা বন্ধ ভারী যান চলাচল, চরম ভোগান্তি কমার আশায় মুখিয়ে স্থানীয়রা...
আজকাল | ১০ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: ডিভিসি খালের লকগেট ব্রিটিশ আমলের। তার উপরে সেতু ভগ্ন দশায়। বড় গাড়ি চলাচল বন্ধের নির্দেশ। দুই পাড়ের বাসিন্দারাদের সমস্যা দূর হল না আজও। দুর্বল সেতু। তাই তিন টনের বেশি যান চলাচল নিষিদ্ধ বলে বোর্ড লাগিয়ে দিয়েছে প্রশাসন।
হুগলির বৈঁচিতে ডিভিসি খালের উপর সেতু দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল অবস্থা। ভারী যান চলাচল বন্ধ। ১১ নম্বর রুটের বাস চলাচল বন্ধ গত কয়েক বছর ধরে। গুরাপ-কালনা রোডের সঙ্গে জাতীয় সড়ক ও কয়েকটি রাজ্য সড়কের যোগাযোগ এই সেতুর মাধ্যমে। তাই এই সেতুর গুরুত্ব অনেক। বৈঁচি স্টেশনে যেতেও ভরসা এই সেতু। বৈঁচি থেকে বৈদ্যপুর, কানলা যাওয়ার রাস্তার উপরেই রয়েছে ডিভিসির এই সেতু। সেই সেতু অনেক দিন ধরেই ভগ্ন প্রায় দশায়।
সেতুর রেলিংয়ের সিমেন্ট, বালি উঠে বেরিয়ে গিয়েছে লোহার রড। সেতুর গায়ে পিলারে গজিয়েছে বট, অশ্বত্থ, আগাছা। পিলারের গায়েও ধরেছে ফাটল। ভারী বর্ষণে ডিভিসি জল ছাড়ায় বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে এই সেতু। প্রতিদিনই কয়েক হাজার মানুষ প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন এই সেতুর উপর দিয়ে। ডিভিসির ছাড়া জল সেতুর নিচ দিয়ে বয়ে চলেছে। ভারী যান চলাচল যাতে না করতে পারে, তার জন্য দু'দিকে লোহার জয়েস পুঁতে দেওয়া হয়েছে।
বড় কোনও যানবাহন এই সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াতে নিষেধ রয়েছে। আর এতেই সমস্যায় পড়তে হয় সাধারণ মানুষদের। ট্যাঁকের কড়ি খরচ করে কাটা সার্ভিসে যেতে হচ্ছে মানুষকে। বাস চালকদেরও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওই এলাকার বর্তমানে জেলা পরিষদের সদস্য মানস মজুমদার এলাকার মানুষদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে। সেই মতো প্রশাসনের বিভিন্ন কর্তারা এসে এলাকা পরিদর্শন করে যান। কিন্তু তারপর সংস্কার বা নতুন করে সেতু তৈরির কাজ এগোয়নি বলেই অভিযোগ স্থানীয়দের। যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে গেছে বৈঁচি ডিভিসি সেতু।
স্থানীয় বাসিন্দা অমরনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, দুর্গাপুর হাইওয়ে এক্সপ্রেস, জিটি রোড, অসম রোড, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক, এই চারটি রাস্তার সঙ্গে সংযুক্ত এই রাস্তা। দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকায় স্থানীয় মানুষজনদের প্রচন্ড অসুবিধার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ব্যবসাদারদেরও অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়। বাস রুট থাকলেও, সেটা কাটা সার্ভিসের মাধ্যমে যাতায়াত করতে হয়। ফলে হয়রানি যেমন হয়, তেমন অতিরিক্ত পয়সা দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে হয়।
বাস চালক মুস্তাফা শেখ বলেন, 'সেতুর বেহাল অবস্থা। বাস যাত্রী থেকে সাধারণ মানুষ তাঁদের যাতায়াতের অসুবিধা হচ্ছে। আমাদেরও বাস চালাতে সমস্যা হচ্ছে। প্রশাসনের কাছে আর্জি দ্রুত যেন এই সেতু ঠিক করা হয়।'
বিজেপি হুগলি জেলা প্রাক্তন সভাপতি তুষার মজুমদার বলেন, 'তৃণমূল ভোট এলেই মানুষকে নানা প্রতিশ্রুতি দেয়।আধিকারিকদের নিয়ে এসে এলাকায় ঘোড়ায়। তারপর ভোট হয়ে গেলে তোমার দেখা নাইরে তোমার দেখা নাই।'
তৃণমূল জেলা পরিষদ সদস্য মানস মজুমদার বলেন, 'নতুন সেতু তৈরির জন্য ডিপিআর তৈরি করা হয়েছে।আমরা বলেছিলাম পুরনো সেতুর ১৫ মিটার দূরে নতুন সেতু তৈরি হবে। ডিভিসির ইঞ্জিনিয়াররা তাতে আপত্তি জানান। তাঁরা বলেন, ১৫ মিটার নয় ৫০ মিটার দূরে করতে হবে। আর সেটা করতে গেলে বাজেট অনেক বেড়ে যাবে। সময়ও অনেক বেশি লাগবে। ডিভিসি এবং পূর্ত দপ্তরের সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনা চলছে। পূর্ত দপ্তরকেও অনেক জিনিস মাথায় রাখতে হচ্ছে। তবে আমরা আশা করব এই জট কেটে গিয়ে শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।' হুগলির সাংসদ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'আমার কাছেও অভিযোগ এসেছে। আমি দেখব কেন কাজ আটকে আছে। সুষ্ঠু ভাবে যাতে তা সম্পন্ন হয় সেটার চেষ্টা করব।'