• ব্যারিকেড ভেঙে চায়ের দোকানে ঢুকে পড়ল ট্রাক, মুহূর্তে গুঁড়িয়ে গেল সব, রক্তের মধ্যে ভাসছে দেহ, পাঁশকুড়ার ঘটনায় শিউরে উঠছেন মানুষ...
    আজকাল | ১০ আগস্ট ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: সব ঠিক ছিল কিছুক্ষণ আগেও। সব উলটে পালটে গেল কিছুক্ষণ পরেই। মুহূর্তে হাহাকার, মৃত্যুমিছিল। রক্তারক্তি অবস্থা মাঝ রাস্তায়। 

    ঘটনাস্থল পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া। শনিবার রাতে সেখানে ঘটে গিয়েছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্যারিকেড ভেঙে একটি ট্রাক উঠে পড়ে রাস্তায়। দোকান ভেঙে ঢুকে পড়ে। পরপর তিনটি দোকান গুঁড়িয়ে দেয়। প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত জানা গিয়েছে, পিষে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। আহত একাধিক।

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাঁশকুড়া থানার অন্তর্গত সিদ্ধা বাজার গতকাল রাতে পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ১৬ নম্বর জাতীয় সড়কে খড়গপুরগামী একটি কাগজ বোঝাই লরি হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাজারের পাশে থাকা চায়ের দোকান ও আরও দুটি দোকানে সজোরে ধাক্কা মারে। ধাক্কার তীব্রতায় দোকানগুলির কাঠামো মুহূর্তে ভেঙে পড়ে, দোকানে বসে থাকা ও আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা ক্রেতারা মাটিতে ছিটকে পড়েন।

    প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার মুহূর্তে বাজার এলাকায় প্রচুর ভিড় ছিল। স্থানীয় সিদ্ধা গ্রামের বাসিন্দা শেখ আনসার, শেখ দুলাল ও শেখ মাইদুল ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। গুরুতর জখম হন আরও ৬ জন, তাঁদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

    দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পাঁশকুড়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজে নেমে পড়ে। স্থানীয় মানুষও হাত লাগান। প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় ক্রেন এনে লরিটি সরানো হয়। পুলিশ জানিয়েছে, লরির চালক দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। তার খোঁজে তল্লাশি চলছে।

    এলাকার মানুষ প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন, ক্ষোভ স্থানীয়দের। শনিবার রাতের পরে, ক্ষোভের মাত্রা বাড়ে আরও। অভিযোগ, কিছুদিন আগে প্রশাসন ডিভাইডার বসানো, সড়ক চিহ্ন বসানো ও গতিনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও দুর্ঘটনা রোধে তেমন ফল পাওয়া যায়নি। রাতের বেলায় অতিরিক্ত গতিতে ট্রাক ও পণ্যবাহী যান চলাচলই এই সমস্যার বড় কারণ বলে মনে করছেন অনেকে।

    ঘটনার পর এলাকায় হাজার হাজার মানুষের ভিড় জমে যায়। মৃতদেহ রাস্তার উপর রেখে ক্ষুব্ধ জনতা সাময়িক বিক্ষোভ দেখায় এবং প্রশাসনের কাছে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তোলে। ক্ষোভ প্রকাশের কারণে বেশ ঘণ্টা খানেক ওই রাস্তায় গাড়িচলাচল বন্ধ ছিল। প্রায় এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মৃতদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণের প্রক্রিয়া চলছে এবং আহতদের চিকিৎসার সমস্ত খরচ প্রশাসন বহন করবে।

    পথ দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে নানা সময়ে, ভিন্ন আঙ্গিকে সতর্কতার কথা বলা হলেও, সাধারণ মানুষ ঠিক কতটা কর্ণপাত করছেন? সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া পথ দুর্ঘটনা সেই প্রশ্ন তুলে ধরছে যেন বারেবারে। এর আগেও, শহর কলকাতায় এবং রাজ্যের নানা প্রান্তে ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনা সামনে এসেছে। রাজ্যের বাইরেও ছবি একই। বারবার সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা চালাচ্ছে প্রশাসন, তবু একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি রাজ্যের নানা প্রান্তে। 
  • Link to this news (আজকাল)