'বর্ধমানে মরেও শান্তি নেই', বলছেন এই জেলার মানুষ! কোন সমস্যায় জেরবার? ...
আজকাল | ১০ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: বৃহত্তর বর্ধমানে হিন্দু শবদেহ দাহ করার জন্য রয়েছে মাত্র একটি শ্মশান। ভিড়ের কথা ভেবে এখানে যেমন আছে একটি ইলেকট্রিক চুল্লি তেমনি আছে একটি গ্যাসের চুল্লি। এছাড়াও রয়েছে কাঠে দাহ করার জন্য তিনটি আলাদা আলাদা জায়গা। এগুলি অবশ্য অনেক পুরনো। বিদ্যুৎ চালিত চুল্লি চালু হওয়ার আগে চালু ছিল। কদাচিৎ এই কাঠের জায়গা ব্যবহার করেন লোকজন। কিন্তু বুধবার থেকে যেন গোটা ব্যাপারটাই পাল্টে গিয়েছে।
বলতে গেলে এই শ্মশান বহু পুরনো দিনের সাক্ষ্য দেয়। রাজ আমলে নির্মিত হয়েছিল এই শ্মশানটি। সাধারণের অসুবিধার কথা ভেবে বর্ধমানের রাজ পরিবারের তরফে এই শ্মশানটি নির্মাণ করা হয়। দীর্ঘদিন কাঠেই দাহ কাজ সারা হলেও বাম আমলের শেষ দিকে গ্যাস চুল্লিটি নির্মাণ করা হয়। অন্যদিকে ইলেকট্রিক চুল্লিটি নির্মাণ করা হয় যখন রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বিডিএ'র চেয়ারম্যান ছিলেন। এই শ্মশানের উপর বর্ধমান জেলা ছাড়াও প্রয়োজনে পাশের জেলার লোককেও কখনও কখনও নির্ভর করতে হয়। কিন্তু গত কয়েকদিন আগেই শ্মশানে ঘটে যায় বিভ্রাট।
বড় একধরনের গোলোযোগের কারণে ইলেকট্রিক চুল্লি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে উপায় না পেয়ে কাঠের চুল্লিতেই দাহ করতে হচ্ছে দেহ। কিন্তু এই বর্ষার সময় কাঠ ভিজে যাওয়ার জন্য শবদেহ দাহ করতে লাগছে দীর্ঘ সময়। অন্যসময় যেখানে কাঠে সময় লাগে তিন বা চার ঘন্টা সেখানে বর্তমানে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছয় থেকে সাত ঘণ্টাও লেগে যাচ্ছে। এর ফলে রীতিমতো লম্বা লাইন পড়ে যাচ্ছে দাহ কাজের জন্য। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো অনেক সময় বাইরে থেকে বেশি দাম দিয়ে কাঠ কিনেও আনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই শ্মশানটি ছাড়াও সদরঘাটের কাছে একটি স্থানীয়ভাবে শবদাহ করার জায়গা আছে। কিন্তু সেখানে নেই কোনো পরিকাঠামো। অন্যদিকে যাদের আর্থিকভাবে সক্ষমতা আছে তাঁরা দেহ নিয়ে কালনা, কাটোয়া, ধাত্রীগ্রাম বা ত্রিবেণী নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সকলের সেই সঙ্গতি নেই। স্থানীয়রা জানান, একসময় মরদেহ পোড়াতে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের বিনা পয়সায় কাঠ দিত পুরসভা। কাউন্সিলররা চিঠি লিখে দিলেই এই সুযোগ পাওয়া যেত। এখন সেই সুযোগ পেতে যথেষ্টই কাঠখড় পোড়াতে হয় বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা।
শ্মশানের এই বিভ্রাটের জন্য বর্ধমান পুরসভার দিকে আঙুল তুলেছেন বিরোধীরা। আইএনটিউসি'র জেলা সভাপতি গৌরব সমাদ্দার বলেন, এই শহরে এখন শান্তিতে মরাও যাবে না। এবিষয়ে পুর চেয়ারম্যান পরেশ সরকার বলেন, 'আমি বর্ধমানের মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। তাঁর কথায়, এটা যান্ত্রিক সমস্যা। এরজন্য প্রযুক্তির লোকেদের কাজে লাগানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।'