• যাদবপুর: ব়্যাগিং কাণ্ডে শাস্তি শেষ হল না দু’বছরেও
    আনন্দবাজার | ১০ আগস্ট ২০২৫
  • দু’বছর পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু মেন হস্টেলে র‌্যাগিংয়ে সহপাঠীর মর্মান্তিক মৃত্যুর ক্ষত ভুলতে পারেনি তখন-নবাগত সহপাঠীদের অনেকে। র‌্যাগিং-কাণ্ডের পরে তখনকার প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের মেন হস্টেল থেকে সরিয়ে যাদবপুরের শিক্ষাঙ্গনের ভিতরে হস্টেলে রাখা হয়েছিল। এখন তৃতীয় বর্ষে উঠে ফের যাদবপুরের মেন হস্টেলে যাওয়া রুখতে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আতঙ্কে চিঠি লিখেছেন।

    ঠিক হয়েছে, এ বার থেকে তৃতীয় আর চতুর্থ বর্ষকে মেন হস্টেলে আলাদা দু’টি ব্লকে রাখা হবে। তাঁদের জন্য আলাদা মেস, কমনরুমও হবে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, শিক্ষার্থীদের একাংশের মেন হস্টেলে থাকতে আপত্তি। কারণ দু’বছর আগের ৯ অগস্ট রাতে মেন হস্টেলের তেতলা থেকে পড়ে প্রথম বর্ষের ছাত্রের মৃত্যুর সঙ্গে পরোক্ষ ভাবে জড়িত কোনও কোনও ছাত্র এখন হস্টেলে রয়েছে। তা ছাড়া, তখনকার প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রদের কাউকে কাউকে ফের কোর্টে ডাকা হতে পারে। র‌্যাগিং-সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত কারও কারও উপস্থিতিতে তাঁরা মেন হস্টেলে নিরাপদ বোধ করছেন না বলে জানিয়েছেন।

    তবে যাদবপুরের র‌্যাগিং-কাণ্ডের দু’বছর বাদেও বিচারের সাক্ষ্য-পর্ব শেষ না হওয়াটা বিঁধছে সংশ্লিষ্ট অনেককে। এখন নিহত ছাত্রের বাবা সাক্ষ্য দিচ্ছেন। অন্য দিকে, এ বছরের গোড়ায় অভিযুক্ত ১৩ জনের মধ্যে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র অঙ্কন সরকার তার পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে বলে জামিনের আবেদন করে। পুলিশি তদন্তে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ চলছে বলে হাই কোর্ট সেই আবেদন খারিজ করে দিয়ে বলে, ছ’মাস বাদে অভিযুক্তেরা জামিনের আর্জি জানাতে পারবে। তা-ও মাসে এক বারের বেশি সাধারণত শুনানি হচ্ছে না। কবে বিচার শেষ হবে, বোঝা মুশকিল। রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন বিচার ত্বরান্বিত করতে হাই কোর্টের জুভেনাইল জাস্টিস কমিটিকে চিঠি লিখেছে বলেও দাবি।

    যাদবপুরের র‌্যাগিং-সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে অন্তত ১৫ জনকে অভ্যন্তরীণ তদন্তে শাস্তি দিতেও ব্যর্থ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কারণ, শাস্তি দিয়ে হস্টেল থেকে তাড়ানো হলেও হাই কোর্টে নামী-দামি উকিল রেখে মামলা লড়ে তারা স্থগিতাদেশ এনেছে। র‌্যাগিং-চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে পরিচিত মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্র ক্যাম্পাস ইন্টারভিউয়ে চাকরি পান। মামলা লড়ার জন্য তাঁর নেতৃত্বে হস্টেলে টাকা চাওয়া হয় বলেও অভিযোগ। যাদবপুর কর্তৃপক্ষ অবশ্য তাঁর মার্কশিট আটকে রেখেছেন। তাঁর কিছু সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষাও বাকি আছে।

    তবে যাদবপুরে প্রথম বর্ষ, দ্বিতীয় বর্ষকে শিক্ষাঙ্গনে আলাদা হস্টেলে রাখা যাচ্ছে। নবাগতেরা ভর্তির পরে প্রথম এবং দ্বিতীয় বর্ষকে র‌্যাগিং-সচেতন করতে মনোবিদ এনে আলাদা ভাবে কাউন্সেলিং করা হচ্ছে বলেও কর্তৃপক্ষের সূত্রের খবর।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)