রাস্তা খারাপ হওয়ার অন্যতম কারণ বালির গাড়ির চলাচল। খারাপ রাস্তায় বেসামাল হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন সাইকেল আরোহী। বালি বোঝাই করতে যাওয়া ট্রাকের ধাক্কায় তাঁর মৃত্যুতে ধুন্ধুমার বাধল পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসার সিলামপুরে। শুক্রবার কাঁটাবাগান বাউরিপাড়ায় রাস্তা অবরোধ থেকে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়, পুলিশকর্মীদের তাক করে ইট, পাথর ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। আহত হন এসিপি-সহ কয়েক জন পুলিশকর্মী। বেগতিক দেখে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। দেহ আটকে রেখে প্রায় আট ঘণ্টা বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসী। পরে, পুলিশের আশ্বাসে দেহতোলা হয়।
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্ত বলেন, “স্থানীয় লোকজনের যা অভিযোগ রয়েছে, খতিয়ে দেখছি। প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’’ পুলিশকর্মীদের উপরে হামলা প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এলাকায় পুলিশমোতায়েন রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই এলাকা দিয়ে প্রতিদিন শ’য়ে শ’য়ে বালির ট্রাক, ডাম্পার যাতায়াত করায় রাস্তা নষ্ট হচ্ছে বলে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ রয়েছে। এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ সাইকেলে করে সিলামপুর থেকে আইমার দিকে যাচ্ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা কৃষ্ণ বাউড়ি (২৪)। খারাপ রাস্তায় বেসামাল হয়ে পড়ে যান তিনি। পিছন থেকে একটি ট্রাক তাঁকে পিষে দেয়। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। খবর ছড়াতেই এলাকাবাসী দুর্ঘটনা ঘটানো ট্রাক এবং একটি ডাম্পারে ভাঙচুর চালান বলে অভিযোগ।
পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে বিক্ষোভের মাত্রা বাড়ে। পরিস্থিতি বুঝে আরও বাহিনী পাঠায় কাঁকসা থানা। ঘটনাস্থলে যান আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এসিপি (কাঁকসা) সুমনকুমার জয়সওয়াল। সে সময় জনতার ছোড়া ইট, পাথরের ঘায়ে এসিপি, আইসি-সহ বেশকয়েক জন। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের চারটি গাড়িও। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের তিনটিশেল ছোড়ে। পৌঁছয় কমব্যাট ফোর্স। বিকেল ৪টে নাগাদ মৃতদেহ তোলা সম্ভব হয়।
মৃতের দাদা অশোক বাউড়ির অভিযোগ, ওই রাস্তার প্রায় এক কিলোমিটার অংশ দীর্ঘদিন বেহাল। প্রতিদিন দামোদরের বালিঘাট থেকে প্রচুর গাড়ি যাতায়াতে আরও খারাপ হচ্ছে তার দশা। দুর্ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। তিনি বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা সারানোর দাবি করছি। রাস্তাটা ঠিক থাকলে, ভাইকে হারাতে হত না!’’
গ্রামীণ রাস্তা দিয়ে বালির ভারী গাড়ি চলাচলের বিষয়ে বার বার রাজ্য পুলিশ ও প্রশাসনকে সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘‘প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করছি। বালির গাড়ি চলার বিষয়টি দেখা হচ্ছে। রাস্তার ওই অংশ বেহাল কেন, কী করা যায় দেখছি।’’