লাগাতার ভারী বৃষ্টি এবং ইছামতী-যমুনার জল উল্টে লোকালয়ে ঢুকে বনগাঁ মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবিয়ে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ছেলেয়েদের পড়াশোনা কার্যত বন্ধ। স্কুলগুলিতে ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। বেশ কিছু স্কুলে পঠনপাঠনও বন্ধ। অনেক পড়ুয়া নিজেদের স্কুলের ত্রাণ শিবিরেই ঠাঁই নিয়েছে। অভিভাবকদের অনেকে জানালেন, আগে তো খেয়েপড়ে বেঁচে থাকা, তারপরে পড়াশোনা হবে!
ত্রাণ শিবিরে আসা বা জলবন্দি মানুষ জানালেন, জমা জল সরতে প্রায় চার মাস লেগে যাবে। পরিবারের অনেকের কাজকর্ম কার্যত বন্ধ। বছরের পর বছর বর্ষার মরসুমে এই পরিস্থিতি চলছে। ছেলেমেয়েদের স্কুলছুট হওয়ার প্রবণতা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁ মহকুমায় এখন প্রায় ৪০টি ত্রাণ শিবির চলছে। সেখানে বাবা-মায়ের সঙ্গে পড়ুয়ারাও উঠে এসেছে। ত্রাণ শিবিরগুলি মূলত স্কুলেই করা হয়েছে। ফলে বেশিরভাগ স্কুল বন্ধ।
শিবিরে থেকে পড়াশোনা হয় না বলেই জানাল অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ঋতুপর্ণা বিশ্বাস। তার কথায়, ‘‘গত বছরও পরিবারের সকলের সঙ্গে ত্রাণ শিবিরে আসতে হয়েছিল দুর্গা পুজোর আগে। এ বার অবশ্য অনেক আগেই আসতে হল। বাড়ি জলে ডুবে গিয়েছে। পুজোর আনন্দ বলে আমাদের কিছু নেই। এই পরিবেশে কি পড়াশোনা করা সম্ভব!’’
বনগাঁর পাইকপাড়া এফপি স্কুলে ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। স্কুলে পঠনপাঠন আপাতত বন্ধ। স্কুলের ত্রাণ শিবিরে খেলা করছিল তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী মেঘলা দাস, প্রথম শ্রেণির ছাত্রী অনুষ্কা দাস। তাদের আনন্দ, নিজেদের স্কুলেই আছে, অথচ পড়াশোনা করতে হচ্ছে না! এতে তাদের ভারী আনন্দ।
গাইঘাটার ইছাপুর হাই স্কুল চত্বরে জল জমে গিয়েছে। পড়ুয়াদের স্কুলে যাতায়াত করতে অসুবিধা হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক অশোক পাল বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীরা এখনও স্কুলে আসতে পারছে। তবে শৌচাগারে যেতে হলে জলের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। জানি না, কত দিন স্কুল খোলা রাখতে পারব।’’ গাইঘাটার পাঁচপোতা ভারাডাঙা হাই স্কুলে ত্রাণ শিবির হলেও স্কুল চালু রেখেছে কর্তৃপক্ষ। স্কুল চত্বর ও মাঠে জল জমে গিয়েছে। তার মধ্যেই চলছে পঠনপাঠন।
গাইঘাটা ব্লকের এক ছাত্রের কথায়, ‘‘জল উঠলেও বাড়িতে রয়েছি। স্কুলে যাচ্ছি। তবে রাস্তায় জল জমে। স্কুলের পোশাক, বইয়ের ব্যাগ হাতে নিয়ে জলমগ্ন রাস্তা দিয়ে ডাঙায় উঠে পোশাক বদলে নিচ্ছি। তারপরে স্কুলে যাচ্ছি।’’
শিক্ষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ থাকায় যেমন অনেকেই স্কুলছুট হয়েছিল, এই পরিস্থিতিতে টানা স্কুল বন্ধ থাকলে স্কুল-বিমুখ হতে পারে অনেকে। প্রধান শিক্ষক তথা এবিটিএ-এর বনগাঁ মহকুমার সম্পাদক পীযূষকান্তি সাহা বলেন, ‘‘ইছামতী, যমুনা-সহ মহকুমার খাল-বিল সংস্কারের অভাবে মৃতপ্রায়। সে কারণেই প্রতি বছর বিস্তীর্ণ এলাকার জলমগ্ন হচ্ছে। পড়ুয়াদের পড়াশোনা তিন-চার মাস বন্ধ থাকছে। এর ফলে তাদের স্কুলছুট হওয়ার আশঙ্কা থাকছে।’’
প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, ত্রাণ শিবির করতে বিকল্প জায়গা তেমন না থাকায় স্কুলেই শিবির করতে হচ্ছে। তবে পঠনপাঠন স্বাভাবিক রাখারও চেষ্টা করা হচ্ছে।