কোলাঘাট: অর্থবান ব্যবসায়ী ছিলেন একসময়। দুই সন্তান এখন বাবার ব্যবসার দায়িত্বে। কিন্তু বাবার দায়িত্ব নিতে নারাজ তাঁরা। এক ছেলে বৃদ্ধ বাবাকে বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছেন। বৃদ্ধের ঠাঁই হয়েছে বাড়ির কাছের কালীমন্দিরে। সেখানেই শুক্রবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন বৃদ্ধ। কিন্তু ছেলেরা বাবার দিকে ফিরেও চাননি। বাসিন্দা ও পঞ্চায়েত সদস্য বৃদ্ধকে বাড়ি ফেরাতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। বাসিন্দারা সন্তানদের এই অমানবিকতায় ক্ষুব্ধ।
পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট ব্লকের ভোগপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কোদালিয়া গ্রামের বাসিন্দা অনিলকুমার আদক। অনিলের বিড়ির ব্যবসা ছিল। তাঁর তিন মেয়ে, দুই ছেলে। বড় মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। বাকি দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বছর পাঁচেক আগে ব্যবসা ও সম্পত্তি দুই সন্তানের ভাগাভাগি করে দেন। তার পরেও ব্যাঙ্কে থাকা অর্থে মেয়ে ও ছেলেদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
বছরখানেক আগে পর্যন্ত অনিলের দুই ছেলে বিশ্বনাথ ও রঘুনাথ বাবাকে পালা করে দেখাশোনা করতেন। অভিযোগ, বড় ছেলে বিশ্বনাথ মাস দেড়েক আগে বাড়ি থেকে বার করে দেন অনিলকে। এখন অনিলের আস্তানা কোদালিয়ার আমরা কজন ক্লাবের কালীমন্দিরের দালান ঘরে। প্রতিবেশীদের দেওয়া খাবারই ছিল ভরসা। স্থানীয়দের অভিযোগ, মন্দিরের সামনে দিয়েই যাতায়াত দুই ছেলের। গতকাল অনিল হৃদরোগে আক্রান্ত হন। প্রতিবেশীরা পঞ্চায়েত সদস্য শম্পা মাইতির কাছে বৃদ্ধের চিকিৎসা করানোর আবেদন করেন। শম্পা অনিলকে বাড়ি ফেরানোর উদ্যোগ করেন। কিন্তু ব্যর্থ হন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা চেষ্টা চালিয়েছিলাম কয়েকদিন আগে ওই বৃদ্ধকে কোনও বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসার। কিন্তু হঠাৎই তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় নতুন জটিলতা তৈরি হয়েছে। এলাকার সকলেই চাইছি বৃদ্ধের কিছু একটা সুরাহা হোক। বর্তমানে ওঁর শরীরের ডান দিক কাজ করছে না।’’
স্থানীয়দের দাবি, ব্যাঙ্কে এখনও অর্থ রয়েছে অনিলের। বাবা এক ভাইয়ের কাছে থাকলে অন্য ভাইয়ের সন্দেহ হয় তিনি অনিলের অর্থ নিয়ে নিচ্ছেন। অনিলের দুই ছেলে বিশ্বনাথ ও রঘুনাথও বলেন, ‘‘বাবাকে বাড়িতে নিয়ে এলেই শুরু হয় দুই ভাইয়ের লড়াই। সম্পত্তি ও টাকা পয়সা নিয়ে গন্ডগোল বাড়িতে লেগেই থাকে।’’ ঝামেলা মুক্ত হতেই নাকি কেউই তাঁরা দেখতে চান না বাবাকে। পঞ্চায়েত সদস্য শম্পা বলেন, ‘‘প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে বৃদ্ধকে হাসপাতালে পাঠানোর চেষ্টা চালাচ্ছি।’’
বৃদ্ধ বাবা-মাকে অবহেলা বা বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া নিয়ে আদালতে প্রায়ই মামলা হয়। বিচারপতিরা সন্তানদের বিরুদ্ধে কঠোর নির্দেশ নেন। শুধু তাই নয়, নির্দেশ না মানলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে বলেও সতর্ক করেন বিচারপতিরা। অনিল অবশ্য এখনও আদালতের দ্বারস্থ হননি।