নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: একদল এসেছিলেন বেলদা থেকে। একদল নারায়ণগড়ের। আবার কেউ কেউ ওড়িশা লাগোয়া মোহনপুর থেকেও সাতসকালে সাঁতরাগাছির উদ্দেশে দলবেঁধে ট্রেনে সওয়ার হয়েছিলেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের এই বাসিন্দাদের অনেকেই শুধু এটুকু জানতেন, দলের ডাকে শনিবার নবান্ন অভিযানে যেতে হবে। এদিন অভয়ার বিচার চেয়ে ‘অরাজনৈতিক’ নবান্ন অভিযান কর্মসূচিতে সাঁতরাগাছিতে জমায়েত হওয়া মাত্র শ’দুয়েক লোকের মধ্যে দেখা মেলেনি কোনও আম জনতার। ছবিটা মনে করাচ্ছিল, গত বছর ২৭ আগস্ট ছাত্র সমাজের ডাকা নবান্ন অভিযানের কথা। এদিন অবশ্য দুপুর আড়াইটের মধ্যেই অভিযান সম্পূর্ণ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। হাওড়া ময়দানের বঙ্গবাসী মোড়ে আন্দোলনকারীদের ভিড়ে উত্তেজনার পারদ খানিকটা চড়লেও, উদ্দেশ্যহীন অভিযানেই শেষ পর্যন্ত শো সম্পূর্ণ ‘ফ্লপ’!
এদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই কাজিপাড়া, মল্লিক ফটক, মন্দিরতলা, শৈলেন মান্না সরণি, আন্দুল রোড, রামরাজাতলা সহ হাওড়া শহরের বহু এলাকার বাসিন্দাকে চাক্ষুষ করতে হয়েছে ব্যারিকেডে বন্দি শুনশান সড়ক। অলিগলি তো বটেই, গোটা হাওড়া শহর এদিন ছিল নিশ্ছিদ্র ঘেরাটোপে। মল্লিকফটক ও সাঁতরাগাছি স্টেশনের সামনে—এই দুই জায়গায় লোহার উঁচু ব্যারিকেড প্রস্তুত রেখেছিল হাওড়া সিটি পুলিস। মোতায়েন ছিল একাধিক কমিশনারেট থেকে আনা বাহিনী। ছিল র্যাফ, জল কামান, টিয়ার শেল। তবে ‘টমসন’এর মতো ছুটে এসে বিজেপি ‘প্রসন্ন’র মতো ডেলিভারি করায়, ব্যবহার করতে হয়নি কিছুই। শুক্রবার রাতেই দুর্গাপুর থেকে একদল আন্দোলনকারী সাঁতরাগাছি স্টেশনে এসে জমায়েত করে। এদিন বেলা সাড়ে বারোটা পর্যন্ত মাত্র শ’তিনেক লোককে সাঁতরাগাছি স্টেশনের সামনে ভিড় করতে দেখা যায়। অধিকাংশই দুই মেদিনীপুর থেকে ট্রেনে চেপে এসেছিলেন। দুপুর একটা নাগাদ আন্দোলনকারীদের ভিড় গিয়ে পৌঁছয় ব্যারিকেডের সামনে। বাধা পেয়ে অনেককেই ব্যারিকেডের উপর চড়তে দেখা যায়। কেউ কেউ পুলিসকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করলেও, হাইকোর্টের নির্দেশ স্মরণ করিয়ে বাহিনী বারবার শান্ত ভঙ্গিমাতেই মাইকিং করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের প্রস্তাব দেয়।
অভয়ার বাবা-মা তো সিবিআইয়ের উপর থেকে আস্থা তুলে নিয়েছেন, তাহলে আপনারা নবান্ন অভিযানে এলেন কেন? প্রশ্ন করলে আন্দোলন করতে আসা রাজু সামন্ত, রাকেশ গড়াই, বিজন মাইতিরা বলেন, ‘এসব জানি না। দল বলেছে আজকে নবান্ন অভিযানে যেতে হবে।’ কোন দল? সেই উত্তর না এলেও, অভিযানে নাগাড়ে উচ্চারিত পরিচিত কিছু স্লোগানে স্পষ্ট ‘গেরুয়া’ ইঙ্গিত মিলেছে। শেষ পর্যন্ত বেলা তিনটে বাজতেই আন্দোলনকারীদের একে একে উল্টোদিকে সাঁতরাগাছি স্টেশনে ফিরতি লোকাল ধরতে যেতে দেখা যায়। অন্যদিকে গড়বেতা থেকে একরত্তি সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে সাঁতরাগাছি স্টেশনে নেমে মাথায় হাত পড়ে স্বপন কোলের। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে স্ত্রীর চিকিৎসা চলছে। সংকটজনক অবস্থা। বাস, ট্যাক্সি কিছু নেই জেনে বসে পড়েন রাস্তায়। কলকাতার নার্সিংহোমে ডায়ালিসিস করাতে যেতে পারলেন না উনসানির বাসিন্দা মীর জাকির হোসেন। শহর কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়লেন বহু যাত্রী। হাওড়ার যান চলাচল স্বাভাবিক হতে সন্ধ্যা পেরিয়ে যায়।