ভিন রাজ্যে বাঙালি হেনস্তা, বাংলার অবমাননা, হিন্দি-উর্দু সহ ১১ ভাষাকে সরকারি স্বীকৃতি মুখ্যমন্ত্রীর
বর্তমান | ১০ আগস্ট ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘বন্দেমাতরম’-এর স্রষ্টা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন ‘তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন’! সম্প্রতি রাজ্যে রাজ্যে বাঙালি হেনস্তা ও বাংলা ভাষার অবমাননার প্রেক্ষাপটে এই ঔদার্য, সহনশীলতারই উদাহরণ তৈরি করল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। রাজনীতির জটিল আবর্তে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আক্রান্ত বাংলা ও বাঙালি। বিজেপি শাসিত কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সটান বলে দিচ্ছেন, মাতৃভাষা বাংলা লিখলে বাংলাদেশি শনাক্তকরণ সহজ হবে! কোনও রাজ্যের পুলিস আবার পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকের কথা শুনেই বুঝে ফেলছে, তারা নাকি বাংলাদেশ থেকে বেড়া টপকে এপারে এসেছে! ‘বাংলা বলে কোনও ভাষাই নেই’—এমন ‘আজগুবি’ মন্তব্যও এসেছে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের থেকে। সব মিলিয়ে দেশজুড়ে বাংলা ও বাঙালি বিদ্বেষী হাওয়া তোলার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ। কিন্তু বাংলার চিরাচরিত সংস্কৃতি ও জীবনবোধ যে বিচ্ছিন্নতা নয়, একতার কথা বলে, তারই উদাহরণ তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, এই সময়ে দাঁড়িয়ে তাঁর সরকার হিন্দি, উর্দু, তেলুগু সহ ১১টি ভাষাকে সরকারি স্বীকৃতি দিয়েছে।
শনিবার ছিল বিশ্ব আদিবাসী দিবস। সেই উপলক্ষ্যে মমতা এক্স হ্যান্ডেলের পোস্টে জানিয়েছেন, ‘আমাদের সময়ে সাঁওতালি, কুরুখ, কুড়মালি, নেপালি, হিন্দি, উর্দু, রাজবংশী, কামতাপুরী, ওড়িয়া, পাঞ্জাবি ও তেলুগু ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সাদরি ভাষার মানোন্নয়নেও আমরা সচেষ্ট হয়েছি। আমরা সব ভাষাকেই সম্মান করি।’
নিজের ভাষাকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দেওয়ার অর্থ এই নয় যে অন্য কোনও ভাষাকে ছোট করা—একথা বরাবর বলে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কয়েকদিন আগে বীরভূমে ভাষা আন্দোলনের মিছিলে বা ঝাড়গ্রামে কর্মসূচিতে যোগ দিয়েও এই কথাই বলেছেন তিনি। তারপর শনিবার তিনি যেভাবে হিন্দি, উর্দুর মতো ভাষাগুলিকে সরকারি স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন, তা সাম্প্রতিক আবহে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। তাদের মতে, সব ভাষাকে সম্মান করার যে দাবি মুখ্যমন্ত্রী করে থাকেন, ১১টি ভাষাকে সরকারি স্বীকৃতি প্রদান সেই দাবিকেই মান্যতা দেয়।
এক্স হ্যান্ডেলের ওই পোস্টে মুখ্যমন্ত্রী আদিবাসীদের উন্নতির স্বার্থে তাঁর সরকারের অজস্র কাজের খতিয়ান তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘গত ১৪ বছরে আলাদা আদিবাসী উন্নয়ন দপ্তর গঠন করা হয়েছে। দপ্তরের বাজেট বরাদ্দ ২০১১ সালের তুলনায় ৭ গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। রাজ্যে আদিবাসী মানুষের জমি হন্তান্তর যাতে না হয়, তার জন্য আইন আনা হয়েছে। ৩ লক্ষের বেশি আদিবাসী মানুষকে জয় জোহার প্রকল্পে মাসে এক হাজার টাকা পেনশন দেওয়া হচ্ছে।’ এবার রাজ্যে ৭ থকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত আদিবাসী দিবস উদযাপন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।