খাস কলকাতায় ফের বিপর্যয়, ভেঙে পড়ল 'বিপজ্জনক' বাড়ির একাংশ, ধসে চাপা পড়ে গুরুতর আহত পাশের বাড়ির দুই বাসিন্দা
আজকাল | ১০ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: ফের খাস কলকাতায় ভেঙে পড়ল বহু পুরনো বাড়ি। এবার ঘটনাস্থল এন্টালি বাজার এলাকা। ওই এলাকায় একটি পুরনো বাড়ি ভেঙে পড়েছে। দুর্ঘটনায় দু'জন গুরুতর আহত হয়েছেন। এন্টালি বাজার এলাকায় একটি বাড়ি ভেঙে পড়ায় সেটির পাশের বাড়ির অংশে সেই ভাঙাচোরা গিয়ে পড়লে, তার জেরে দু'জন গুরুতর আহত হন বলে জানা গেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে এন্টালির ডক্টর সুরেশ সরকার রোডে। বাড়িটিতে কিছুদিন ধরেই মেরামতের কাজ চলছিল। আরও জানা গেছে, বর্তমানে দু'জনেই আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন স্থানীয় হাসপাতালে। ঘটনার পরেই সঙ্গে সঙ্গে তাঁদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় হাসপাতালে। এলাকায় পৌঁছেছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর টিম, কলকাতা কর্পোরেশনের কর্মীরা এবং দমকল বাহিনী। জোরকদমে শুরু হয়েছে উদ্ধারকার্য। ঘটনার খবর পেয়েই এন্টালি থানার পুলিশ পৌঁছে উদ্ধারকাজে সহযোগিতায় হাত লাগিয়েছে। পুরো জায়গাটি ঘিরে রেখেছে তারা।
কলকাতার বুকে এ ধরনের বাড়ি বারবার ভেঙে পড়ায় বেশ চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ক্রমাগত বৃষ্টি হওয়ার কারণে এ ধরনের বিপর্যয় ঘটেছে বলেই জানাচ্ছে কলকাতা কর্পোরেশন। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় এই বাড়িটিতে বহুদিন আগেই কলকাতা কর্পোরেশন বিপজ্জনক বাড়ি হিসেবে বোর্ড লাগিয়ে দিয়েছিল। পূর্বেও একাধিক বাড়ি কলকাতার বুকে ভয়াবহ বৃষ্টির কারণে ভেঙে পড়ার খবর উঠে এসেছে। এবং সে সমস্ত বাড়িগুলি পূর্বেই কলকাতা কর্পোরেশন বিপজ্জনক বাড়ি বলে বোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছিল।
বলাবাহুল্য, এন্টালি বাজারে এলাকায় আজকের এই বাড়িটির বারান্দার পুরো অংশ ভেঙে পাশের বাড়িতে তার ধ্বংসাবশেষ পড়ে। পাশের বাড়ির দুই বাসিন্দা গুরুতর আহত হন। ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে দমকল বাহিনী এবং বিপর্যয় মোকাবিলা টিম যুদ্ধকালীন তৎপরতার সাথে উদ্ধারকার্যে কাজ চালাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে শনিবার সাতসকালে উত্তর কলকাতায় ভয়াবহ দু্র্ঘটনা। এদিন সকালে হঠাৎই মানিকতলা মেইন রোডের ওপর ভেঙে পড়ল এক দোতলা বাড়ির একাংশ। জানা গিয়েছে, বাড়িটি কমপক্ষে ২০০ বছরের পুরনো জমিদার বাড়ি। কাঠের পাটাতন রয়েছে, মূলত পুরনো দিনের কাঠামো দিয়ে তৈরি। গত কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে এদিন এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানান তিনি। জানা গিয়েছে, এই বাড়িটিকে বিপজ্জনক বাড়িত হিসেবে চিহ্নিত করে পাঁচ বছর আগে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল কলকাতা পুরসভার তরফে। কিন্তু বড় জমিদার বাড়ি হওয়ায় শরিকি সমস্যার জন্য হস্তক্ষেপ করতে পারেনি পুরসভা। শরিকি সমস্যা নিয়ে মামলা ঝুলে রয়েছে আদালতেও। ফলে, গত পাঁচ বছর ধরে বিপজ্জনক বাড়ি হয়েই থেকে গিয়েছে। এদিন হঠাৎই ওই জমিদার বাড়ির একপাশ থেকে চাঙড় খসে পড়ে পাশের বাড়িতে।
জানা গিয়েছে, সকাল ৬টা নাগাদ পাশের একতলা বাড়ির উপর ভেঙে পড়ে পুরনো বাড়ির পিছনের অংশ। আচমকা দুর্ঘটনায় আহত হয় দুই শিশু এবং এক মহিলা। আহত শিশুদের মানিকতলা ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আহত মহিলাকে আপাতত হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছ। জানা গিয়েছে, রবিবার সকালে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন স্থানীয় কাউন্সিলর। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যবস্থা করেন। পাশাপাশি, বাড়ির শরিকদেরও খবর দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুরসভার কর্মীরাও। বাড়ির বিপজ্জনক অংশ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুরসভার কর্মীদের। পাশাপাশি, বাড়ির শরিকদেরও এই বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসার কথা জানানো হয়েছে স্থানীয়দের তরফে।
এর আগে জুলাইয়ের শেষদিকে রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকায় একটি বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়ে। দাসানি স্টুডিওর পাশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলের একটি পরিত্যক্ত শতাব্দী প্রাচীন বিল্ডিংয়ের সামনের দিকের কিছুটা অংশ ভেঙে পড়ে। বাড়িটি পরিত্যক্ত হলেও সেখানে কিছু ভবঘুরে মানুষ থাকতেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে এই দুর্ঘটনায় কোনও হতাহতের খবর নেই। শহরে একটানা বর্ষণের জেরেই বাড়িটির একাংশ ভেঙে পড়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। গত কয়েকদিন ধরেই একটানা বৃষ্টি হয়ে চলেছে রাজ্য জুড়ে। কলকাতাও ব্যতীত নয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ কলকাতার রিজেন্ট পার্কের ওই বাড়িটিতে পাঁচ ছয় জন থাকতেন। সকাল সাড়া ৯টা নাগাদ বাড়িটির একাংশ ভেঙে পড়ে। ওই সময় কেউ বাড়িটিতে উপস্থিত ছিলেন না। তাই বড়সড় বিপর্যয় এড়ানো গিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গত ২৫ জুলাই কলকাতার গিরিশ পার্ক এবং বৌবাজার এলাকায় দু’টি বাড়ি ভেঙে পড়ে। কলকাতা ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে গিরিশ পার্ক অঞ্চলের তিনতলা বাড়িটিকে আগেই বিপজ্জনক বলে তকমা দিয়েছিল কলকাতা পুরসভা। এরপর একটানা বৃষ্টির জেরে সেটির ছাদের একাংশ ও দেওয়াল ধসে পড়ে। তবে বাড়িটি ফাঁকা থাকার কারণে কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। বৌবাজার অঞ্চলে ৪৮ নং ওয়ার্ডে মুচি পাড়া থানা এলাকায় ২০০ বছরের পুরনোর বাড়ির ঝুল বারান্দা ভেঙে রাস্তার উপর মিষ্টির দোকানে এসে পড়ে। এছাড়াও ভেঙে পড়ার সময় সেই বাড়ির সামনে ছিল একটি চার চাকার গাড়ি। গাড়িটি পুরো দুমরে মুচড়ে যায়। এক্ষেত্রেও হতাহতের কোনও খবর নেই। সম্প্রতি পানিহাটিতে পুরনো বাড়ি ভেঙে মৃত্যু হয়েছিল গৃহকর্তার। পানিহাটি পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ঘটনাটি ঘটেছিল। মৃতের নাম দেবকুমার শ্রীমানী। বাড়ির বয়স ছিল প্রায় ২০০ বছর। ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে গিয়েছিলেন দেবকুমার শ্রীমানী। সাগর দত্ত হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত্যু হয় বছর ষাটের প্রৌঢ়ের।