• ভিন রাজ্যে ফের মৃত্যু চার বাংলাভাষীর, দিল্লিতে মৃত একই পরিবারের চার সদস্য ...
    আজকাল | ১০ আগস্ট ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: পরিবারের আর্থিক হাল ফেরানোর জন্য দিল্লিতে ফেরিওয়ালার কাজ করতে গিয়ে দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হল মুর্শিদাবাদের নওদা থানা এলাকার একই পরিবারের চার সদস্যের। 

    নওদা থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ব্যক্তিদের নাম রবিউল মণ্ডল (২২), রেক্সোনা খাতুন (৭), রুবিনা বিবি (২০) এবং হাসিনা খাতুন (৭)। তাঁদের সকলের বাড়ি নওদা থানার অন্তর্গত গঙ্গাধারী-জোড়তলা গ্রামে। 

    গত তিন মাস আগে রবিউল পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য, স্ত্রী এবং সন্তানদের নিয়ে দিল্লিতে পরিযায়ী শ্রমিক এবং ফেরিওয়ালার কাজ করতে গিয়েছিলেন। সূত্রের খবর, রবিউল মণ্ডল এবং তাঁর এক ভাই মাস তিনেক আগে ভাল উপার্জনের আশায় নিজেদের স্ত্রী এবং সন্তানদের নিয়ে দক্ষিণ -পূর্ব দিল্লির জাইতপুর নামে একটি এলাকায় গিয়ে স্থানীয় বস্তিতে থাকতে শুরু করেন। 

    শনিবার সকালে ওই পরিবারের কয়েকজন সদস্য যখন নিজেদের প্লাস্টিকের ছাউনির নিচে ঘুমিয়ে ছিলেন সেই সময় বস্তির পাশের একটি বড় দেওয়াল হুড়মুড়িয়ে তাঁদের সকলের উপর ভেঙে পড়ে। ঘুমের মধ্যেই ইট এবং কংক্রিট চাপা পড়ে মৃত্যু হয় আট জনের। তাঁদের মধ্যে চারজন মুর্শিদাবাদে নওদার বাসিন্দা। মুর্শিদাবাদের ওই পরিবারটির অপর এক সদস্য এই ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে দিল্লির সফদারজঙ্গ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। 

    মৃতের পরিবারের এক সদস্য মনিরুল ইসলাম জানান, 'সম্প্রতি রবিউল গ্রামে নিজের একটি বাড়ি তৈরির কাজে হাত দিয়েছিলেন। কিন্তু টাকার অভাবে বাড়ির ছাদ ঢালাই করতে পারছিলেন না। এই কারণে পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য, স্ত্রী এবং সন্তানদের নিয়ে তিনি দিল্লিতে চলে গিয়েছিলেন ভাল রোজগারের আশায়।'

    ওই ব্যক্তি বলেন, 'এক কন্ট্রাক্টর-এর অধীনে তাঁরা দিল্লিতে কাজ করতে গিয়েছিলেন। শনিবার দুপুর একটা নাগাদ আমরা খবর পাই দিল্লিতে দেওয়াল চাপা পড়ে আট জন মারা গিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আমাদের পরিবারের চারজন সদস্য রয়েছেন।' 

    দিল মহম্মদ মণ্ডল নামে মৃতের অপর এক আত্মীয় জানান, 'দিল্লির যে এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সেখানে গত কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের বাড়ির লোকেরা সেখানে একটি বস্তিতে একটি বড় পাঁচিলের সঙ্গে ত্রিপল খাটিয়ে কোনওরকমে গত কয়েক মাস ধরে থাকতেন।' তিনি আরও জানান, 'আজ সকালে আমাদের বাড়ির এক মহিলা সদস্যা সেখানে ঝুপড়ির বাইরে বসে রান্না করছিলেন। সেই সময় হুড়মুড়িয়ে ওই পাঁচিলটি সকলের উপর ভেঙে পড়ে এবং ঘটনাস্থলেই চারজনের মৃত্যু হয়েছে। আমরা শুনেছি প্রচন্ড বৃষ্টির কারণে পাঁচিলটি দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং সেই কারণে ভেঙে পড়েছে।' 

    নওদার অত্যন্ত দরিদ্র এই পরিবারের সদস্যরা এখনও জানেন না তাঁদের বাড়ির লোকেদের মৃতদেহ কীভাবে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হবে। তাঁরা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন দেহগুলো যেন দিল্লি থেকে মুর্শিদাবাদে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়। 

    দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লির সিনিয়র পুলিশ অফিসার ঐশ্বর্য শর্মা জানান, "এখানে একটি পুরনো মন্দির রয়েছে, যার পাশে বহুদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা ঝুপড়িতে কিছু স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ী পরিবার বাস করছিলেন। গতরাতের প্রবল বৃষ্টিতে দেওয়ালটি ভেঙে পড়ে। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে আমরা ঝুপড়িগুলি সম্পূর্ণভাবে খালি করে দিয়েছি।" ঘটনার দিনই, অর্থাৎ রাখি বন্ধনের সকালে, দিল্লি জুড়ে নেমে আসে প্রবল বর্ষণ। শুক্রবার রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিপাতে দিল্লির বেশ কয়েকটি এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে, একাধিক আন্ডারপাস প্লাবিত হয় এবং যানজট ব্যাপক আকার নেয়। আবহাওয়া দফতর (আইএমডি) ওইদিনের জন্য ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করে।
  • Link to this news (আজকাল)