রেগা থেকে সরকারি বিজ্ঞাপন, রেল থেকে ক্রিকেটের ব্যাট, সংসদে লাগাতার লিখিত প্রশ্ন তৃণমূলের, কেন এই ‘ঘনঘটা’?
আনন্দবাজার | ০৯ আগস্ট ২০২৫
চলতি বাদল অধিবেশনে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রককে লিখিত প্রশ্ন করে জেরবার করার চেষ্টা করছে তৃণমূল। গত সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত রাজ্যসভা এবং লোকসভা মিলিয়ে তৃণমূলের সাংসদেরা রেগা থেকে রেল, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প থেকে সরকারি বিজ্ঞাপন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন রেলমন্ত্রককে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘অমৃত ভারত’ প্রকল্পে দেশে রেল স্টেশনগুলির আধুনিকীরণের জন্য যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল, তা কত দূর এগিয়েছে? রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন প্রশ্ন করেছিলেন, গত পাঁচ বছরে সরকারি বিজ্ঞাপনে কেন্দ্রীয় সরকার কত অর্থ খরচ করেছে? বহরমপুরের সাংসদ তথা প্রাক্তন ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান প্রশ্ন করেছিলেন, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পমন্ত্রককে। তাঁর প্রশ্ন ছিল, ক্রিকেট ব্যাট প্রস্তুতকারকদের নিজেদের উইলো বাগান তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার কোনও আর্থিক সহায়তা করেছে কি না। আবার কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রের একগুচ্ছ প্রশ্ন ছিল ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প (রেগা) নিয়ে।
প্রশ্নের এই ঘনঘটা কেন? তৃণমূল সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সরকার লিখিত ভাবে প্রশ্নের জবাব দিলে তা সরকারি নথিতে পরিণত হয়। তৃণমূল সেটাই হাতে রাখতে চাইছে। মৌখিক জবাবের বদলে লিখিত জবাবকে বিজেপি তথা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রচারের ভাষ্যে তুলে আনার কৌশল নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল।
অভিষেকের প্রশ্নের জবাবে যেমন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, ‘অমৃত ভারত’ প্রকল্পে দেশের ১,৩৩৭টি স্টেশনের আধুনিকীকরণ হবে। তার মধ্যে ১০৫টির প্রথম ধাপের কাজ শেষ হয়েছে। তার তালিকাও দিয়েছেন রেলমন্ত্রী। তাতে দেখা যাচ্ছে, ১০৫টির মধ্যে বাংলার একটি স্টেশন রয়েছে। সেটি হল পশ্চিম বর্ধমানের পানাগড়। আবার ডেরেকের বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত প্রশ্নে বিশদে লিখিত জবাব দেয়নি কেন্দ্রীর তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রক। সেখানে বলা হয়েছে, সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ কমিউনিকেশন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকের বিজ্ঞাপন দেয়। সেই ওয়েবসাইটের লিঙ্ক দিয়ে ডেরেকের উদ্দেশে লেখা হয়েছে, সেখানেই বিশদ তথ্য রয়েছে। পাঠানের প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্র জানিয়েছে, ব্যাট প্রস্তুতকারকদের জন্য সরকারের পৃথক কোনও নীতি নেই। মহুয়া প্রশ্ন করেছিলেন, ১০০ দিনের কাজের তহবিল থেকে বাংলার জন্য কত টাকা ছাড়া হয়েছে? সেই প্রশ্নে পুরনো বকেয়ার কথা উল্লেখ করেছে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক।
তৃণমূলের এই কৌশলের নেপথ্যে অনেকেই অভিষেক পরিচালিত কৌশলের ছাপ দেখছেন। কারণ, অভিষেক ভাষ্য তৈরির প্রাথমিক কাজকে পোক্ত ভাবে করে রাখতে চান। অতীতেও তা দেখা গিয়েছে। ইতিমধ্যে অভিষেক লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা মনোনীত হয়েছেন। ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটে বাংলায় প্রচারের ভাষ্য তৈরির ‘মহড়া’ হিসাবেই সংসদে তৃণমূল লিখিত প্রশ্ন তুলে তার লিখিত জবাব পেতে চাইছে। যাতে ভোটের প্রচারে সেই ‘সরকারি নথি’ ব্যবহার করা যায়।