• রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ভুল তথ্য! ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে গিয়েই কি বিজেপির বিপদ বাড়ালেন মালব্য? টুইটের পাল্টা-পাঠ কুণালের
    আজকাল | ০৯ আগস্ট ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: টুইট করছেন। বিতর্ক হচ্ছে। আবার টুইট করছেন নিজের কথার একেবারে উলটো পথে হেঁটে। কিছুক্ষণেই তাতেও বিতর্ক। সাম্প্রতিক সময়ে বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না তাঁর। রবীন্দ্রনাথ নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়েই এবার বিপদ বাড়ালেন বিজেপির অমিত? 

    রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবসে লম্বা পোস্টে কী লিখলেন অমিত মালব্য? লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা, চিন্তা ভাবনা, কীভাবে দেশ এবং বিশ্বের মানুষকে প্রভাবিত করেছে। ভারতের জাতীয় সঙ্গীত, জন গণ মন, কীভাবে মানুষের মনে দেশপ্রেম জাগত করে। তারপরেই লিখেছেন, ‘সম্ভবত তাঁর সবচেয়ে বড় অবদান ছিল বাংলা ভাষাকে আজ দেশে এবং বিদেশে উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছেন।‘

    'বাংলা ভাষাকে'? দিন কয়েক আগে যে ভাষার অস্তিত্ব নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন তিনি নিজেই। অমিত মালব্য পোস্টে আরও লিখেছেন, ‘এটি ভারতের দ্বিতীয় সর্বাধিক কথ্য ভাষা এবং দেশের একটি সরকারী ভাষা; বিশ্বব্যাপী, এটি দশটি সর্বাধিক কথ্য ভাষার মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। গদ্য এবং কবিতা উভয়ের মাধ্যমেই, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলাকে এমন একটি সাহিত্যিক সমৃদ্ধি প্রদান করেছেন যা সর্বজনীনভাবে অনুরণিত হয়। তাঁর রচিত সঙ্গীত ভাষাগত এবং ভৌগোলিক বাধা অতিক্রম করে - এর আবেদন কালজয়ী এবং সর্বজনীন।‘ 

    ওই পোস্টের এক জায়গায় তিনি লিখেছেন, ‘কয়েক দশক ধরে, কোনও সরকারই বাংলা ভাষাকে ভারতের অন্যতম প্রধান ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি, যা উপমহাদেশের সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।‘ অমিত মালব্যর চার আগস্টের পোস্ট নিয়ে রাজ্য-রাজনীতিতে ব্যাপক জলঘোলা হয়েছিল। আট আগস্টের পোস্টের পর, অনেকেই বলেছিলেন, আগের বিতর্কের ড্যামেজ কন্ট্রোল করতেই এই পোস্ট। কিন্তু কিছুক্ষণেই বিতর্ক তা নিয়েও। 

    তৃণমূলের কুণাল ঘোষ অমিত মালব্য টুইট করার পরে পরেই একটি টুইট  করেছেন। কী লিখেছেন তাতে?

    লিখেছেন-অমিত মালব্য বাংলা নিয়ে নিজেদের অপমানজনক কাজ ও কথার ড্যামেজ কন্ট্রোলে আজ কবিগুরুকে নিয়ে টুইট করেছেন। সেখানে নোবেল পুরস্কারের অংশ পড়লেই বোঝা যাচ্ছে বিষয়টি তিনি জানেন না। ১) নোবেলজয় করেছিল 'সং অফারিংস' যেটা বিশ্বকবির নিজে ইংরেজিতে লেখা। রুটিন অনুবাদ নয়। 

    ২) 'সং অফারিংস' শুধু গীতাঞ্জলীর কবিতা থেকে হয়নি, কবিগুরুর অন্য কাব্যগ্রন্থ থেকেও নিয়েছিলেন তিনি নিজে। 

    ৩) গীতাঞ্জলী কবিতায় লেখা, 'সং অফারিংস' মূলত গদ্যে। এই মূল বিষয়গুলি না জেনে লোকদেখানো পোস্ট করতে গিয়ে তালগোল পাকিয়েছেন মালব্য। 'সং অফারিংস' আর অন্য রবীন্দ্রসাহিত্যের অনুবাদের মধ্যে বিরাট পার্থক্য আছে।‘ 

    রাজ্যের বাইরে, বাংলাভাষীদের উপর ক্রমাগত আক্রমণে গর্জে উঠেছে বাংলার শাসক দল, বিরোধী দল। বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকের উপর অত্যাচার নিয়ে দিকে দিকে ক্ষোভের মাঝেই, আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়েছিল মালব্য-মন্তব্য। ৪ আগস্টের পোস্টে লিখেছিলেন, ‘দিল্লি পুলিশ অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করতে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছে। এখানে 'বাংলাদেশি ভাষা' বলতে তারা বোঝাতে চেয়েছে এমন একধরনের ভাষার রূপ, যার উপভাষা, ব্যাকরণ এবং উচ্চারণগত বৈশিষ্ট্য পশ্চিমবঙ্গের বাংলা ভাষার থেকে অনেকটাই আলাদা। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের সরকারিভাষা শুধু ভিন্ন উচ্চারণেই নয়, বরং সেখানে এমন কিছু উপভাষা ব্যবহৃত হয়, যেমন সিলেটি, যা ভারতীয় বাঙালিদের কাছে কার্যত বোধগম্যই নয়’। তিনি বলেন, ‘বাংলা ভাষা বলে এমন কোনও একক ভাষা নেই যা সমস্ত ভিন্নতা ঢেকে দেয়। ‘বাঙালি’ মূলত শব্দটি জাতিগত পরিচয় বোঝায়, ভাষাগত ঐক্য নয়। সুতরাং দিল্লি পুলিশ যখন “বাংলাদেশি ভাষা” শব্দটি ব্যবহার করে, তখন সেটা অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ভাষাগত বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করার জন্যই। বাংলা ভাষার ভারতীয় সংস্করণ সম্পর্কে কোনো বিরূপ মন্তব্য নয়’।

    শুধু এটুকুই নয়। তিনি আরও লিখেছিলেন, 'ধরা যাক আনন্দমঠ উপন্যাসটি লেখা হয়েছিল তৎকালীন বাংলায়, সন্ন্যাসী বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে। বন্দে মাতরম গানটি রচিত হয়েছিল আলাদা ভাবে সংস্কৃতে এবং পরে উপন্যাসে যুক্ত হয়। আমাদের জাতীয় সঙ্গীত জন গণ মন মূলত ব্রাহ্ম ধর্মীয় স্তব হিসেবে রচিত হয়েছিল, যার ভাষা ছিল সংস্কৃতায়িত বাংলা।‘
  • Link to this news (আজকাল)