ভারত থেকেই প্রত্যাবর্তনের ছক আওয়ামী লীগের? কলকাতা থেকেই চলছে 'গোপন' পরিকল্পনা! চাঞ্চল্যকর তথ্য...
আজকাল | ০৯ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: কলকাতার ব্যস্ত উপশহরের এক বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সের অষ্টম তলায়, সাধারণ চোখে একেবারেই অচেনা-অদৃশ্য একটি ঘর। বাইরে কোনও সাইনবোর্ড নেই, নেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বা শেখ হাসিনার ছবি। অথচ, কয়েক মাস ধরে এখানেই বসছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাসিত শীর্ষ নেতাদের গোপন বৈঠক।
নির্বাসনের সূচনা
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। সেই সঙ্গে বহু শীর্ষ ও মধ্যম পর্যায়ের নেতা, প্রাক্তন মন্ত্রী ও সাংসদ কলকাতা ও আশপাশের এলাকায় এসে বসবাস শুরু করেন। অনুমান করা হচ্ছে, বর্তমানে প্রায় ৭০ জন বর্তমান সাংসদ, জেলা সভাপতি-সম্পাদক এবং প্রায় ২০০ জন জ্যেষ্ঠ নেতা এখানে পরিবারসহ বা ভাগাভাগি করে ফ্ল্যাটে থাকছেন।
গোপন অফিসের ভেতরের চিত্র
কার্যালয়টি আয়তনে ৫০০ থেকে ৬০০ বর্গফুট, যেখানে ৩০-৩৫ জনের বৈঠক হয়। বড় আকারের সভার জন্য শহরের ভাড়া করা ব্যাঙ্কোয়েট হল ব্যবহার করা হয়। এক জ্যেষ্ঠ নেতা জানান, “আমরা চাইনি এই কক্ষটি প্রকাশ্যে দলীয় অফিস হিসেবে চিহ্নিত হোক।” অফিসের নির্দিষ্ট সময়সূচি নেই, প্রয়োজনে নেতারা আসেন, আলোচনা করেন এবং ফিরে যান।
দূর থেকে রাজনৈতিক নির্দেশ
দিল্লির কাছে অবস্থানরত শেখ হাসিনা এখনও দলের কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। জুলাই মাসে তিনি বিরলভাবে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করেন। বাকি সময় ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে মিটিং, লাইভ সম্প্রচার ও গ্রুপ চ্যাটের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় থাকে। প্রাক্তন সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথের ভাষায়, “প্রযুক্তির জন্যই আমরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের মতামত নিতে ও নির্দেশ দিতে পারছি।”
সমালোচনা ও ঐতিহাসিক উদাহরণ
সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে—নেতারা যখন বিদেশে বসে বৈঠক করছেন, তখন দেশে থাকা বহু কর্মী কেন দমন-পীড়নের মুখে পড়ছেন? এর জবাবে দেবনাথ ঐতিহাসিক উদাহরণ টেনে বলেন, “১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধেও নেতৃত্ব ছিল নির্বাসনে। বিশ্ব ইতিহাসে এমন বহু উদাহরণ আছে, যেখানে বিদেশ থেকে সংগঠিত হয়ে দল শক্তি সঞ্চয় করে ক্ষমতায় ফিরেছে।”
বিরোধী মনোভাব ও অভিযোগ
আওয়ামী লীগ বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুসের প্রশাসনকে অর্থনীতি ও বিচার ব্যবস্থায় ব্যর্থতার জন্য দোষারোপ করছে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দাবি করেছেন, জনমনে সরকারের প্রতি আস্থা দ্রুত কমছে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নিষিদ্ধ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, যিনি বর্তমানে ভারতে, অভিযোগ করেছেন—দলের অনুগত বহু শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ বা পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
অর্থায়ন ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন
পার্টি পরিচালনা ও ব্যক্তিগত খরচের জন্য বাংলাদেশ ও বিদেশে থাকা সমর্থকদের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা আসছে বলে কাদের স্বীকার করেছেন। নেতারা এখন অনেক বেশি সাশ্রয়ী জীবনে অভ্যস্ত হচ্ছেন—পাবলিক ট্রান্সপোর্টে চলাফেরা, শেয়ার করা বাসা, এবং সঞ্চিত অর্থের উপর নির্ভর করেই দিন কাটছে। দেবনাথ বলেন, “আমরা যতটা সম্ভব সাশ্রয়ীভাবে বাঁচি।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বাংলাদেশে ফেরার প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদেরের উত্তর ছিল স্পষ্ট—“রাজনৈতিক সংগ্রামের কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। লড়াই চালিয়ে যাওয়া ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই।”
এভাবেই, কলকাতার ব্যস্ত বাণিজ্যিক পাড়ার এক কোণে, গোপনে সাজানো ঘরে, বাংলাদেশের একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের ভবিষ্যতের কৌশল রচিত হচ্ছে—দূর থেকে, কিন্তু সরাসরি দেশের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে প্রভাব বিস্তার করার লক্ষ্যেই।